রায়গঞ্জ, 3 অগস্ট: হাতে মাত্র দু'মাত্র মাস দুয়েক ৷ তারপরেই দুর্গাপুজো ৷ ইতিমধ্যে, রাজ্যের বিভিন্ন পটুয়াপাড়াগুলিতে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে চিন্তা বাড়ছে পরিবেশ কর্মীদের ৷ কারণ, দুর্গা প্রতিমায় ব্যবহার হওয়া সীসা মিশ্রিত রং, যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ ৷ জটিল এই ধাতু মাটিতে মিশে যেমন, মাটির ক্ষতি করে ৷ তেমনই প্রতিমা ভাসান দেওয়ার পর জলে সেই সীসা মিশ্রিত রং নদী, ও জলাশয়গুলির জীববৈচিত্র্যের সমূহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে ৷
পরিবেশ কর্মীদের চিন্তা বাড়াচ্ছে দুর্গা প্রতিমায় ব্যবহার হওয়া সীসা মিশ্রিত রং ৷ (ইটিভি ভারত) আর তা স্বীকারও করেছেন রায়গঞ্জের মৃৎশিল্পীরা ৷ কুমোরটুলিতে ইতিমধ্যে প্রতিমায় মাটির প্রলেপ পড়তে শুরু করেছে ৷ কিন্তু, প্রতিমায় ব্যবহার হওয়া রং এখন মাথা ব্যথার কারণ পরিবেশবিদ ও পরিবেশ কর্মীদের ৷ কারণ, মৃৎশিল্পীরা প্রতিমার ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সীসা মিশ্রিত রং ব্যবহার করছেন ৷ আর সেটাই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে মৃৎশিল্পীদের জন্য ৷
রায়গঞ্জের প্রবীণ মৃৎশিল্পী ভানু পাল বলেন, "সীসা অর্থাৎ মেটালিক রঙের দাম বেশি ৷ এই রঙের উজ্জ্বল ভাবও অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয় প্রতিমার সৌন্দর্যকে ৷ তাই পুজোকমিটিগুলির চাহিদা থাকে বেশি ৷ সে কথা মাথায় রেখে এই রং ব্যবহার করতে হয় ৷ মেশিনের মাধ্যমে রং প্রয়োগ করার সময় শারীরিকভাবে অনেকটা ক্ষতি হয় ৷ জলকেও চরম ভাবে দূষিত করছে ৷ কিন্তু, এখন তো আর আগের মত জৈবিক উপায়ে তৈরি রং পাওয়া যায় না ৷ তাই আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই কাজ করতে হয় রুজি-রুটির জন্য ৷"
রায়গঞ্জের নদী বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ দত্ত জানান, "সীসা-যুক্ত রং ব্যবহারের ফলে মারাত্মক দূষণ ঘটছে ৷ পুজো কমিটিগুলিকে এ বিষয়ে ভাবতে হবে ৷ সরকারিভাবে সীসা-মুক্ত রং ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে ৷ সিসা-মুক্ত রং ব্যবহার করলে সবারই ভালো ৷ এর পাশাপাশি প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে যাতে কাঠামোগুলিকে জল থেকে তোলার ব্যবস্থা করা হয়, সেদিকে প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে ৷" রায়গঞ্জে পুরপ্রশাসক সন্দীপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, যে ধরনের রং জল, জীবজন্তু-সহ পরিবেশের ক্ষতি সাধন করবে, তা একেবারেই নিষিদ্ধ ৷ পুজো নিয়ে আসন্ন বৈঠকে এই বিষয়টি তুলে ধরা হবে ৷ প্রয়োজনে মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে এবিষয়ে তাঁদের সহযোগিতাও চাওয়া হবে ৷