কোন্নগর, 6 সেপ্টেম্বর: আরজি করের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু কোন্নগরের যুবকের। এক্স হ্যান্ডেলে যুবকের মৃত্যু নিয়ে সচ্চার হয়েছেন তৃণমূলের কুণাল ঘোষ। তা নিয়ে জোর জল্পনা সামাজিক মাধ্যমে। সেই পোস্টের পরই মৃত যুবকের বাড়ি যান কোন্নগর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন দাস ও স্থানীয় কাউন্সিলর বাবলু পাল। মৃত যুবকের প্রতি শ্রদ্ধা ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূল চেয়ারম্যান। এরপরই চিকিৎসা পরিষেবা ফেরানোর আবেদন জানান তিনি। তার দাবি, চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে মৃত্যু হল যুবকের। এটা ও বড় ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ গরিব মানুষের। যদিও কুণাল ঘোষের সামাজিক মাধ্যমে পোস্টের পরই পাল্টা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর আঙ্গুল তোলেন সামাজিক মাধ্যমের সদস্যরা । বিজেপির দাবি, সুবিচারের জন্য চিকিৎসকদের আন্দোলনকে ভেস্তে দেওয়ার জন্যই পরিকল্পনা তৃণমূলের।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার ভোরে কোন্নগর বেঙ্গল ফাইন মোড়ের ডাম্পার চাপা পড়ে দুটি পা জখম হয় কোননগরের যুবকের। বিক্রম ভট্টাচার্যের বাড়ি বিবেক নগর দ্বারিক জঙ্গল বাই লেনে। যুবক পেশায় গাড়ির চালক। মা দিদিমাকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে বাস করতেন । কিন্তু, দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেয়ে প্রথমে শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতালে ভর্তি হন ওই যুবক । পরে তাঁকে আরজি করে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, প্রায় তিন ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে সেখানেই আজ মৃত্যু হয় ওই যুবকের।
এই ঘটনায় কোন্নগরের বিজেপির নেতা প্রণয় রায় বলেন, "পরিকল্পিত ভাবে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে ছোট করে দেখানোর জন্য চেষ্টা চলছে। মানুষকে খেপিয়ে তোলার জন্যই এসব করছে তৃণমূল। এমার্জেন্সি পরিষেবা চালু রয়েছে। সিনিয়ার ডাক্তাররা চিকিৎসা করছেন । জুনিয়ররা ডাক্তাররা আউট ডোর বন্ধ রেখেছেন । যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক ! যদি বলা হয় আন্দোলন জন্য মৃত্যু ঘটছে, এটা ঠিক না। মানুষজকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে ।"
আজ সন্ধায় মৃত যুবকের বাড়িতে যান কোন্নগর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন দাস ৷ তিনি বলেন, "আজ আমার শহরের একজনের প্রাণ চলে গেল।চিকিৎসকদের করজোড়ে বলব, আপনারা আন্দোলন করুন, দাবি-দাওয়া থাকলে সেগুলি বলুন ৷ কিন্তু, পরিষেবাটাও দিন । যাতে এই যুবকের মতো আর কারও প্রাণ না চলে যায় । যদি ধর্মঘট হয় তাহলে সব জায়গাতেই হোক ৷ শুধু সরকারি হাসপাতালেই কেন যেখানে গরিব মানুষরা যায় ? যে মেয়েটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাঁর পরিবার সুবিচার পাক এটা আমরাও চাই । তাঁর বাবা-মা অন্তত দেখে যাক যে, দোষীরা শাস্তি পেয়েছে। কিন্তু, এমন না হয়, এই আন্দোলনের ফলে আরও অনেক মানুষের প্রাণ চলে যায় ।"
তবে এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রকাশ্যে এসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই নথি যেখানে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে এসে যথাযথ চিকিৎসা হয়েছে ওই যুবকের। এমনকি ভর্তি হওয়ার কথাও লেখা রয়েছে তাঁর প্রেসক্রিপশনে । হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই যুবককে নিয়ে আসা হয়েছিল ট্রমা কেয়ার বিভাগে। সেখানে অর্থপেডিক বিভাগের চিকিৎসকরা তাঁকে দেখেন । এছাড়াও, জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাঁর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন । তাঁতে দেখা যায়, যুবকের মাথায় এবং দু'পায়ে গুরুতরভাবে আঘাত লেগেছে । পরিবারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়েছিল। পরিবারের সম্মতিতে সিটি স্ক্যান করানো হচ্ছিল । তখন শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের । জুনিয়র চিকিৎসকরা বারবার স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছেন, "আমরা কর্ম বিরতিতে রয়েছি ৷ কিন্তু, পরিষেবা বন্ধ নেই ।"