কলকাতা, 6 ফেব্রুয়ারি: স্যালাইন-কাণ্ডে তোলপাড় হয়েছে গোটা রাজ্য । সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন দেওয়ায় প্রসূতির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ যার জেরে সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার । সেই ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিয়ে এবার কলকাতা পুরনিগমের স্বাস্থ্য বিভাগ পদক্ষেপ করল ৷
সেই পদক্ষেপ অনুযায়ী, ওয়ার্ড হেলথ ইউনিট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধ ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের বৈধতা পর্যবেক্ষণ ও তার কার্যকরী দিন-তারিখ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ ।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের স্যালাইন-কাণ্ড নিয়ে তোলপাড়ে নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ । সরকারি পরিষেবায় যাতে কোনোরকম ভাবে ওষুধ-ইনজেকশন ও অন্যান্য জিনিস নিম্নমানের না হয় বা মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনও কিছু যাতে দেওয়া না হয়, সেই বিষয়ে নজরদারি চালানো হবে ৷ মূল উদ্দেশ্য, যাতে এমন কোনও ঘটনা না ঘটে কলকাতা পুরনিগমের স্বাস্থ্য পরিষেবায় ।
কলকাতা কর্পোরেশনের কমিশনার ধবল জৈন এই নিয়ে একটি নির্দেশিকা দিয়েছেন ৷ সেখানে তিনি জানিয়েছেন, কলকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবহৃত সমস্ত ধরনের ওষুধ-ইনজেকশন থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্যের বৈধতা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ এবং পর্যায়ক্রমিক পরিদর্শন বাধ্যতামূলক ।
পুর কমিশনারের নির্দেশিকা অনুসারে, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তা ও অডিট আধিকারিকরা এই নিয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেস বা এসওপি তৈরি করবেন । সেই এসওপি মেনে খতিয়ে দেখা হবে ওষুধ ও চিকিৎসা পরিষেবায় ব্যবহৃত সমস্ত জিনিসের স্টক, কোনোটা তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে কি না, মান ঠিক আছে কি না । নির্দিষ্ট সময় অন্তর এই নিয়ে পরিদর্শন করা হবে ও সেই রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে । রিপোর্টে বিস্তারিতভাবে লিখতে হবে ও যাঁরা সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন, সেই যাচাইকারী স্বাস্থ্যকর্তাদের সই থাকবে ।
পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসেই এসওপি তৈরি হবে ৷ তার পর তা সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের হাতে দেওয়া হবে ৷ পাশাপাশি যাঁরা এই যাচাইয়ের কাজে যুক্ত থাকবেন, তাঁরা এক্সিকিউটিভ বা তাঁর উচ্চ পদমর্যাদার আধিকারিক হবেন ৷ এর নিচের স্তরের কোনও আধিকারিক এই কাজ করবেন ৷
এছাড়া মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও একটি দল গঠন করবেন ৷ সেই দল আচমকা অভিযান চালাবে ৷ দেখবে নজরদারি ঠিকমতো চলছে কি না ৷ এই মাসেই পরীক্ষা করা, রিপোর্ট জমা দেওয়া ও ব্যবস্থা নেওয়া পুরোটাই ত্রুটিহীনভাবে শুরু করে দিতে হবে বলে জানা গিয়েছে কলকাতা পুরনিগম সূত্রে ৷
এই নির্দেশ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরনিগমের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্যালাইন-কাণ্ডের সঙ্গে এর কোনও যোগাযোগ নেই । আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয় । তেমনটাই এটা একটা । তবে কোনও ঘটনা, দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়াটাও দরকার, যাতে সেটার পুনরাবৃত্তি না ঘটে ।’’
বিরোধীদের বক্তব্য, স্যালাইন-কাণ্ড ঘটেছে বলেই পুরসভার টনক নড়েছে । এত দিন তো স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে আলাদা করে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি ৷ তাহলে এতদিন কি নজরদারি হতো না ?