পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

মালদার সমবায় ব্যাংকে ডাকাতির পিছনে কি কেএলও ! প্রশ্নের মুখে পুলিশ - KLO link in Malda bank robbery - KLO LINK IN MALDA BANK ROBBERY

KLO link in Malda bank robbery: গাজোলের সমবায় ব্যাংকে ডাকাতির পিছনে কি কেএলও-র হাত রয়েছে ? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশকর্তাদের মনে ৷ ইটিভি ভারতের এক্সক্লুসিভ প্রতিবেদন ৷

ETV BHARAT
ধৃত 2 ডাকাতের মধ্যে একজন ৷ (নিজস্ব চিত্র) (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 25, 2024, 2:06 PM IST

মালদা, 25 জুলাই: গাজোলের কৃষ্ণপুরে সমবায় ব্যাংকে ডাকাতির পিছনে কি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কেএলও'র ছক ? নাকি এটা নেহাতই স্থানীয় দুষ্কৃতীদের কাজ ? ঘটনার তদন্তে নেমে এই দু'টি প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে পুলিশ ৷

ভয়াবহ ডাকাতির এই ঘটনায় আপাতত চারজনকে পুলিশ আটক করেছে ৷ তাদের মধ্যে দু'জন পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মালদা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ৷ এই চারজনের থেকে দুটি 7 মিলিমিটার দেশি পিস্তল ও কয়েকটি কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৷ তাদের ফেলে যাওয়া তিনটি সকেট বোমা বৃহস্পতিবার নিষ্ক্রিয় করেছে বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড ৷ তবে এখনও পর্যন্ত ব্যাংকের ভল্ট থেকে খোয়া যাওয়া টাকা পুলিশের অধরা ৷

গতকাল দুপুরে কৃষ্ণপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড মিনি ব্যাংকে হানা দেয় আট সশস্ত্র দুষ্কৃতী ৷ প্রত্যেকের মুখ ছিল কাপড়ে বাঁধা ৷ ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ক্ষীরোদ মণ্ডলের পেটে গুলি করে তারা ভল্ট থেকে 5 লাখ 92 হাজার 278 টাকা লুট করে পালায় ৷ শুধু গুলি নয়, দুষ্কৃতীরা সেখানে বোমাবাজিও করে ৷ সময়মতো এই খবর পেয়ে ডাকাতদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় জাল পাতে পুলিশ ৷

শেষ পর্যন্ত পুরাতন মালদার ভাবুক অঞ্চলের পারাদিঘি এলাকায় পুলিশের তাড়ায় তারা একটি মেঠো রাস্তায় ঢুকে পড়ে ৷ ওই গ্রামে এসকেভেটর দিয়ে পাইপ লাইন বসানোর কাজ চলছে ৷ সেই এসকেভেটরের জন্যই ডাকাতদের গাড়ি রাস্তায় থামতে বাধ্য হয় ৷ পিছনে পুলিশ দেখে দুষ্কৃতীরা গাড়ি থেকে নেমে পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় ৷ তখনই পুলিশের গুলিতে আহত হয় দুই দুষ্কৃতী ৷ তারা ধরা পড়ে যায় ৷ রাতে ওই এলাকা থেকেই লুকিয়ে থাকা আরও দুই দুষ্কৃতীকে আটক করে পুলিশ ৷ গতকাল রাতে গাজোল থানায় সেকথাই জানিয়েছেন পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব ৷

গতকাল রাতে পুলিশ সুপার জানান, এই ঘটনায় সমীর মণ্ডল (27), মইদুল ইসলাম (24), মহম্মদ ওয়াস্তি (22) ও জাহিরুল ইসলামকে (24) আটক করা হয়েছে ৷ সমীরের বাড়ি কৃষ্ণপুর গ্রামেই ৷ মইদুল চাঁচলের মল্লিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ৷ ওয়াস্তি আর জাহিরুলের বাড়িও চাঁচলেরই সোনারাই ও বাকিরপুর গ্রামে ৷ প্রাথমিক জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড সমীর ৷ সে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাকি দুষ্কৃতীদের ভাড়া করেছিল ৷ বাকিরা একে অন্যের অচেনা ৷

গতকাল পুলিশ সুপার আরও জানান, এই চারজনের মধ্যে একজনের নামে পুরনো অপরাধের রেকর্ড রয়েছে ৷ সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয় ছাড়াও একাধিক ঘটনায় সে অভিযুক্ত ৷ কিন্তু কার নামে পুরনো অপরাধের রেকর্ড রয়েছে, কোন অপরাধের রেকর্ড, সে সব বিস্তারিতভাবে কিছু জানাননি তিনি ৷ তবে এই ঘটনার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত ব্যাংকের কোনও কর্মীর যোগ থাকার কথা তাঁরা জানতে পারেননি বলেই দাবি করেন পুলিশ সুপার ৷

জেলা পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, আটক চারজনের মধ্যে সমীরের নামেই পুরনো অপরাধের রেকর্ড রয়েছে ৷ একসময় সে ছিল কেএলও সংগঠনের অন্যতম সদস্য ৷ বেশ কিছুদিন অসম ও মায়ানমারের জঙ্গলে সে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৷ তার উপর মূলত সংগঠনের তহবিল তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৷ সেই দায়িত্ব পেয়ে এলাকায় ফিরে তোলাবাজি শুরু করে সে ৷ ব্যবসায়ী-সহ গৃহস্থদেরও ধমকে চমকে সে টাকা আদায় করেছে ৷ পুলিশের হাতে একাধিকবার ধরা পড়ে জেলও খেটেছে ৷ সমীর আবার সম্পর্কে গুলিবিদ্ধ ব্যাংক কর্মী ক্ষীরোদ মণ্ডলের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ৷ গ্রামবাসীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সমীর সম্পর্কে ক্ষীরোদবাবুর শ্যালক হয় ৷

একসময় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের নিশানায় ছিল মালদা জেলার গাজোল, হবিবপুর ও বামনগোলা ব্লক ৷ এই তিনটি ব্লকের অধিকাংশ আদিবাসী ও রাজবংশী সম্প্রদায়ভুক্ত ৷ তার মধ্যে রাজবংশীদেরই নিশানা করেছিল কেএলও ৷ পৃথক কামতাপুর রাজ্যের স্বপ্ন দেখিয়ে এই তিনটি ব্লকের প্রচুর যুবক-যুবতীকে তারা নিজেদের সংগঠনে টেনে নিয়েছিল ৷ একসময় ওই সংগঠনের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মাধব মণ্ডল ওরফে মালখান সিংও এই এলাকার বাসিন্দা ৷ ফলে ডাকাতির এই ঘটনায় সমীরের যোগাযোগ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে পুলিশ ৷

যদিও কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বর্তমানে সমীর গ্রামে খুব একটা থাকে না ৷ বেশিরভাগ সময়ই সে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে থাকে ৷ সেখানে সে কী করে, তা অবশ্য গ্রামের কেউ জানে না ৷

এসব নিয়ে এখনই সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে রাজি নন পুলিশ সুপার ৷ বৃহস্পতিবার তিনি জানান, "গোটা ঘটনা নিয়ে আমরা তদন্ত চালাচ্ছি ৷ এখনও চার দুষ্কৃতী অধরা ৷ তাদের ধরাই এখন আমাদের প্রধান কাজ ৷ তাদের খোঁজে জেলা জুড়ে তল্লাশি চলছে ৷ সতর্ক করা হয়েছে মালদা লাগোয়া বিহার ও ঝাড়খণ্ডের থানাগুলিকেও ৷ আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত বাকি দুষ্কৃতীরাও পুলিশের হাতে ধরা পড়বে ৷"

ABOUT THE AUTHOR

...view details