পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিল ! দুর্গাপুরের সরকারি স্কুলে 'সবুজ বিপ্লব' - MID DAY MEAL

স্বনির্ভরভাবে এগিয়ে গিয়ে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠ ৷ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের হাতে চাষ সবজি দিয়ে হয় মিড ডে মিল ৷

Jemua Bhadubala Bidyapith
জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠে সবজি চাষ করে পড়ুয়ারা (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 27, 2024, 2:10 PM IST

দুর্গাপুর, 27 ডিসেম্বর: অষ্টম নয়, একেবারে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়ারা পায় মিড ডে মিল ৷ তাও আবার বাজার থেকে কেনা সবজি নয়, নিজেদের স্কুলে চাষ করা সবজি দিয়েই ৷ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়ে রাজ্যকে দিশা দেখাচ্ছে দুর্গাপুরের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি স্কুল ৷

রাজ্যের নামীদামি স্কুল যা করতে পারেনি তাই করে দেখাল দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানা এলাকার জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠ ৷ পড়ুয়াদের হাতে চাষ করা সবজি দিয়ে মিড ডে মিল হয় এই স্কুলে ৷ সেই পুষ্টিকর খাবার খায় গড়ে প্রত্যেকদিন প্রায় 600 জন ছাত্রছাত্রী ৷

দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিল ! (ইটিভি ভারত)

রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মিড ডে মিলে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে । সেখানে একেবারে ব্যতিক্রমী চিত্র দুর্গাপুর- ফরিদপুর ব্লকের অখ্যাত এক পাড়াগাঁয়ের উচ্চ বিদ্যালয়ে । জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠে প্রতিদিন সকাল দশটায় স্কুলে পৌঁছে যান শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে পড়ুয়ারা । স্কুলের প্রার্থনা শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে তারা একসঙ্গে স্কুলের বাগানে সবজির পরিচর্যা করে । তারপর সেই সবজি তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মিড- ডে মিলের রান্নার জন্য ।

শীতের মরশুমে আলু, পেঁয়াজ, টমেটো,ফুলকপি বাঁধাকপি, পালং শাক, পেঁয়াজ সহ কুড়ি রকমের সবজি চাষ করা হয়েছে । স্কুলে রয়েছে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় 1200 পড়ুয়া । কিন্তু সরকারি নিয়মে রয়েছে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিলের খাবার খাওয়ানোর নিয়ম । এখানে একেবারে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের খাওয়ানো হয় প্রতিদিন পেট ভরে মিড ডে মিলের খাবার । সোমবার বিশেষভাবে পালন করা হয় দিনটি । এ দিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে চক্ষু পরীক্ষা, সঙ্গে রক্তদান শিবির করা হয় । তারপর দুপুরে শুধু পড়ুয়াদেরই নয়, অভিভাবকদেরও পাত পেড়ে খাওয়ানো হয় । স্কুলের বাগানের সবজি হেঁসেলে যোগান দিয়েছে ।

স্কুলেই নানা ধরনের সবজির চাষ (নিজস্ব ছবি)

অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া প্রীতি চক্রবর্তীর কথায়,"আমাদের স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা খুবই ভালো । পড়াশুনার সঙ্গে সবজি চাষ শেখায় ৷ এর থেকে আমরা নতুন কিছু শিখতে পারি । গোবর সার দিয়ে চাষ করা হয় । শরীর খারাপ যাতে না হয় সেজন্যই এভাবে চাষ করা হয় । আমরা খুব মজা পাই সবজির দেখাভাল করতে ৷ আমদের চারটি গ্রুপ রয়েছে ৷ সবাই একদিন করে আমরা সবজি গাছগুলির পরিচর্যা করি ৷"

তবে কেবল পড়ুয়া নয়, তাদের সবজি চাষে সবদিক থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন শিক্ষকেরাও ৷ এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জয়নুল হক বলেন, "পড়ুয়ারা শিক্ষক-শিক্ষিকার সবাই মিলে একত্রিত হয়ে এই কাজ করি । আমাদের লক্ষ্য একটাই স্বাস্থ্য ঠিক রাখা । স্বাস্থ্য ঠিক রাখলেই পড়ুয়ারা সুরক্ষিত থাকবে । আমরা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিলে খাবার দিই । কারণ একটায় প্রতিদিন যাতে পড়ুয়ারা স্কুলমুখী হয় ।"

সবজি চাষ করে সবুজ বিপ্লব স্কুলে (নিজস্ব ছবি)

তিনি আরও বলেন, "এবার চাষ করা হয়েছে দুই হাজার ফুলকপি, একহাজার বাঁধাকপি, নানা রকমের শাকসবজি । এছাড়াও সরষেও চাষ করেছি এবার ৷ কারণ স্কুলের বাগান থেকেই মিড ডে মিলের তেলের যোগানও দিতে চাইছি । সরকার তো সাহায্য করছেই । কিন্তু আমাদেরও কর্তব্য পড়ুয়াদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া । সেজন্যই আমাদের এই ভাবনা ।"

পড়াশোনার বাইরেও ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করার জন্য প্রধান শিক্ষকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাকি শিক্ষকরা ৷ তাঁদের কথায়, সরকারি বিদ্যালয়ে আশ্রমের পরিবেশ তৈরি করেছেন তিনি । স্কুলের এক শিক্ষিকা চৈতালি রায় বলেন, "প্রধান শিক্ষক হিসেবে জয়নুল হক এই স্কুলে যোগ দেওয়ার পর আমরা অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা বুঝতে পারলাম বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এতকিছু চাষ করা যায় । আজ ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক শিক্ষিকারা সবাই খুশি ।"

স্কুলে চাষ করা সবজি দিয়ে মিড ডে মিল (নিজস্ব ছবি)

তাঁর কথায়, "স্কুলের মধ্যে এই যে সবজি চাষ, গরমের ছুটিতে ছাত্র-ছাত্রীদের রং তুলি নিয়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেওয়ালে ছবি আঁকা, নাচ গান, এ সমস্ত কিছুই একটা আশ্রমের পরিবেশ এনে দিয়েছে স্কুলে । ছাত্র-ছাত্রীরা কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে পড়াশুনার পাশাপাশি । এখানকার উৎপাদিত শাকসবজির গুণগতমান দারুণ । স্বাভাবিকভাবে এই স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্যের উন্নতিও ঘটছে । আজ আমাদের সবার ভালোলাগার জায়গা এই বিদ্যালয় ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details