সিউড়ি, 26 জানুয়ারি: বাংলার গান, লাল মাটির গান তাঁর দ্বারা হয়েছে সমাদৃত ৷ লোকগানকে তিনি যতটা দিয়েছেন ততটা সম্মান পেতে অনেকটাই যেন দেরি হয়ে গেল ৷ পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত হলেন বীরভূমের রতন কাহার ৷ 'বড় লোকের বেটি লো' গানের স্রষ্টার মুখোমুখি হন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া এই সম্মানে কতটা আনন্দিত তিনি উঠে এল আমাদের ক্যামেরায় ৷
লোকশিল্পী রতন কাহার জানান, "আমি খুব আনন্দ পেলাম, বড় লোকের বেটি এত জনপ্রিয়তা পাবে ভাবিনি ৷ জীবন সার্থক ৷ আমি দারিদ্র পরিবারের ছেলে ৷ গানকে আঁকড়ে ধরে বেঁচেছিলাম ৷ এতদিন পর স্বীকৃতি পেয়ে ভালো লাগছে ৷ প্রচণ্ড অর্থ কষ্টের সঙ্গে লড়াই করেছি ৷ সংসার চালাতে বিড়ি বাঁধতাম ৷ এক হাজার বিড়ি বেঁধে পেতাম দু'টাকা ৷ তারপর বিভিন্ন জায়গায় গান করে উপার্জন করেছি ৷ কষ্টে আছি এখনও ৷ জনগণ ভালোবাসে, সেই ভালোবাসাতেই বেঁচে আছি ৷"
1936 সালে বীরভূমের সিউড়ির কেন্দুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রতন কাহার ৷ বর্তমানে সিউড়ির 4 নম্বর ওয়ার্ডের নগরী পাড়ায় বসবাস করেন ৷ স্ত্রী, তিন পুত্র ও এক কন্যাকে নিয়ে তাঁর সংসার ৷ রয়েছে নাতি-নাতনি ৷ কুঁড়েঘরেই দিন কাটান শিল্পী ৷ ঘরের দেওয়াল জুড়ে রয়েছেন বহু সংস্থা থেকে প্রাপ্ত মানপত্র, স্মারক, ছবি ৷ লোকসঙ্গীত নিয়ে চর্চা দীর্ঘদিন ধরে ৷ এক সময় বীরভূমের লালমাটির গ্রামে গ্রামে ঘুরে লোকসঙ্গীত গেয়েছেন ৷ সুর সঙ্গে নিয়ে ঘুরেছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ৷
সেই লোকগান, মাটির গান কি বর্তমানে হারিয়ে যাচ্ছে ? শিল্পীর আক্ষেপ, "বাংলা থেকে সত্যিই হারিয়ে যাচ্ছে লোকসঙ্গীত ৷ শিল্পীরা মাদকাসক্ত হয়ে শিল্পটিকে ধ্বংস করছে ৷ লোকশিল্পের চরিত্র যা দেখবে তা গানের মধ্যে তুলে ধরবে ৷ বড় লোকের বেটি লো গানের মানে আছে, চরিত্র আছে ৷ কিন্তু এখন সেই গান আর বাঁধার মতো শিল্পী কোথায়? শুধু বাইরেটাই চাকচিক্য, ভিতরটা ফাঁকা ৷"
বর্তমানে লোকগান শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে কী বার্তা দিতে চান রতন কাহার? জবাবে শিল্পীর স্পষ্ট উত্তর, "যুব সমাজ তো পরামর্শ নেয় না ৷ কি আর বলব ৷ দু-একখানা গান শিখে ফেলে নিজেকে বাউল মনে করতে শুরু করেন ৷ সুন্দর পোশাক করে সামনে আসবে ৷ গান শিখতে হয়, জানতে হয়, বুঝতে হয় ৷ তবে একজন শিল্পী হওয়া যায় ৷"