কলকাতা, 1 ফেব্রুয়ারি: অবসরের অর্থ সব অর্থেই অবসর। তাই কিট ব্যাগ খালি করে ইডেন ছাড়লেন ঋদ্ধিমান সাহা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পরবর্তী বঙ্গ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম ঋদ্ধিমান চিরকালই নিভৃতে থাকতে ভালোবাসেন। প্রচার সর্বস্ব যুগে প্রচার বিমুখতাই তাঁর ইউএসপি। তাই পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ক্রিকেটজীবনের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে ঋদ্ধিমান সাহা একইরকম ভাবলেশহীন। ম্যাচের শেষাংশে সতীর্থদের অনুরোধে উইকেটরক্ষকের দস্তানা গলিয়েছিলেন। নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডও পড়েছিলেন। ইনিংস এবং 13 রানে জিতে মাঠ ছাড়ার সময় কিছুক্ষণের জন্য কিছু স্মৃতি ভেসেছিল মনে। ব্যস ওইটুকু।
ঋদ্ধিমান জানালেন, অবসরে যাওয়ার মনস্থির আজ থেকে নয়। প্রস্তুতি কিছুদিন আগে থেকেই শুরু করছিলেন। তাই আগামী ক্রিকেটারদের হাতে নিজের ক্রিকেটীয় উপকরণগুলো বিলিয়ে দিয়েছিলেন। সামান্য কয়েকটি প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া কার্যত শূন্য হাতেই ইডেন ছাড়লেন। বাড়িতেও বিশেষ কয়েকটি ব্যাট এবং স্মারক ছাড়া কিছুই রাখেননি। সতীর্থদের কাঁধে চেপে মাঠ ছাড়ার অভিজ্ঞতায় আপ্লুত পাপালি। কারণ, আগেও অন্য কারণে সতীর্থরা কাঁধে চড়ালেও এবারের কারণটা ভিন্ন। বঙ্গ ক্রিকেটের উইকেটরক্ষার ভারও অভিষেক পোড়েলের হাতে দিয়ে গেলেন জাতীয় দলের হয়ে 40টি টেস্ট খেলা ক্রিকেটার।
ঋদ্ধিমান বলছেন, "সকলে মিলে ছোটখাটো ভুল শুধরে নিতে পারলে সাফল্য অধরা থাকবে না।" কারণ, সাম্প্রতিক অতীতে কাঙ্খিত লক্ষ্যের খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছে বাংলা। নেতৃত্বের ব্যাটনটাও দুই সুদীপ (ঘরামি ও চট্টোপাধ্যায়) এবং অভিষেকের হাতেই থাকবে বলে মনে করেন তিনি ৷ ঋদ্ধিমানের আঠাশ বছরের ক্রিকেটজীবন সাফল্য-ব্যর্থতা, দুঃখ-সুখে মোড়া। বিদায়ের দিনে স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এবং শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে হাসিমুখে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। তবে অবসরগ্রহের বাসিন্দা হয়ে পিছনে তাকাতে নারাজ ঋদ্ধি। তবুও সেরা স্মৃতির প্রশ্নে সচিন তেন্ডুলকরের হাত থেকে ভারতীয় দলের ক্যাপ পাওয়াকেই সেরা বাছলেন। ঋদ্ধি বলেন, "ওনাকে দেখেই তো আমার ক্রিকেট খেলার শুরু ৷"
বঙ্গ উইকেটরক্ষকের ভারতীয় দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছিল। ঋদ্ধিমান বলছেন, "প্রথমে রাহুল দ্রাবিড়ের ডাকে মনে হয়েছিল খেলাতে না-পারার জন্য দুঃখপ্রকাশ করবেন। পরে যখন কিছু বলতে না পারার দ্বিধা দেখেছিলাম তখনই আন্দাজ করেছিলাম বাদ পড়ার বিষয়টি। তবে ফিটনেস এবং পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়িনি এটা জেনে স্বস্তি লেগেছিল। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নতুন কাউকে তুলে আনার দলগত সিদ্ধান্তে কোনও অন্যায় আমি দেখিনি।"
পরজন্মে বিশ্বাস করেন না। ধীমান জীবনযাপনে বিশ্বাসী ঋদ্ধিমান যে ফর্মুলা ওয়ান রেসের ভক্ত তা অজানা ছিল এতদিন। তাই বিদায়বেলায় খানিকটা মজার ছলেই বললেন, "এখনও তো একটাও ফর্মুলা ওয়ান রেস দেখতে পারলাম না ৷" পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে বাইশ গজে শেষদিনে তারকা ক্রিকেটারের মধ্যেকার মধ্যবিত্ত গৃহস্বামী ভাবও প্রকাশ পেল। শান্তশিষ্ট ভদ্রলোক ঋদ্ধিমান যে স্ত্রী রোমির সঙ্গে দাম্পত্যের মিষ্টি ঝগড়ায় সবসময় পরাজিতের দলে তা সামনে এল। আঠাশ বছরের অভ্যাস সকালে নির্দিষ্ট সময়ে কিটব্যাগ গুছিয়ে মাঠে যাওয়া, প্র্যাকটিসে অংশ নেওয়া। ঋদ্ধিমান বলছেন, "অভ্যাসে বদল হবে না। শুধু ভূমিকা এবং স্থানটা বদল হবে।"