পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

অজয়ের দৃশ্যম দেখে ষড়যন্ত্র, নিজেকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে ধৃত মেধাবী যুবক - Youth Fakes Own Abduction - YOUTH FAKES OWN ABDUCTION

Youth Fakes Own Abduction: অজয় দেবগনের দৃশ্যম দেখে অপরাধের ষড়যন্ত্র করে পুলিশের জালে মালদার এক যুবক ৷ আত্মীয়দের ফাঁদে ফেলতে তিনি নিজেকে অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন ৷ তবে ধরা পড়ে যান পুলিশের কাছে ৷

ETV BHARAT
নিজেকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে ধৃত মেধাবী যুবক (নিজস্ব চিত্র)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 24, 2024, 8:04 PM IST

মালদা, 24 সেপ্টেম্বর: সিনেমার জগত আর বাস্তবের ফারাক কতটা, তা বিলক্ষণ টের পেয়েছেন বছর ত্রিশের বাপি ৷ অজয় দেবগন অভিনীত দৃশ্যম দেখে নিজেকে অপহরণের মিথ্যে গল্প ফাঁদলেও অবশেষে পুলিশের জালে মেধাবী এই ছাত্র ৷ উল্লেখ্য, দৃশ্যমে নিজের কন্যার হাতে হয়ে যাওয়া খুনের ঘটনা চাপা দিতে জোরদার এক গল্প ফেঁদেছিলেন অজয় দেবগণ ৷ সেই নিয়েই তৈরি হয়েছিল টানটান গল্প ৷

আর সেই ছবি দেখার পরই নিজেকে অপহরণের মিথ্যে গল্প সাজানোর কথা মাথায় আসে বাপির ৷ পারিবারিক জমি বিবাদের জেরে জ্যেঠু আর জ্যাঠতুতো দাদাকে ফাঁসাতে তাঁর এই কীর্তি ৷ পরিকল্পনামাফিক সোমবার সন্ধে থেকে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান ৷ রাতে স্থানীয় থানায় নিজের দাদা ও ভাইপোর বিরুদ্ধে ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর বাবা ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে জ্যেঠু ও জ্যেঠতুতো দাদাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ ৷ তাঁদের দফায় দফায় জেরা করে গোটা ঘটনা নিয়ে সন্দেহ হয় পুলিশের ৷ পুলিশের তরফে বাপির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয় ৷ গভীর রাতে নিজেই থানায় আসেন তিনি ৷ দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর অপহরণের মিথ্যে নাটক করার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷

ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের আড়াইডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজগাঁ গ্রামে ৷ বাপির আসল নাম শেখ আজহারউদ্দিন ৷ বাবা শেখ কফিরুদ্দিন বড় ব্যবসায়ী ৷ বাপিকে এলাকার সবাই যথেষ্ট মেধাবী বলেই চেনেন ৷ বর্তমানে তিনি ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৷ একইসঙ্গে চালাচ্ছেন ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিও ৷

পরিবারের লোকজন জানাচ্ছেন, সার্ভিসিং করাবেন বলে গতকাল সন্ধেয় নিজের মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বাপি ৷ তারপর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ৷ চারদিকে খোঁজাখুঁজির পর কোথাও সন্ধান না-পেয়ে রাতে স্থানীয় পুখুরিয়া থানায় ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন কফিরুদ্দিন ৷ তাঁর কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, জমি নিয়ে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে তাঁর দাদাদের অনেকদিন ধরে ঝামেলা চলছে ৷ প্রথমে পুলিশের ধারণা হয়েছিল, পারিবারিক শত্রুতার জেরে বাপিকে অপহরণ করা হতে পারে ৷ অনুমানের ভিত্তিতে বাপির জ্যেঠু শেখ কমিরুদ্দিন আর জ্যেঠতুতো দাদা শেখ ইউসুফকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন পুলিশকর্মীরা ৷ দফায় দফায় জেরা করা হয় তাঁদের ৷

জেরায় পুলিশ নিশ্চিত হয়, বাপিকে তাঁরা অপহরণ করেননি ৷ এরপরেই পুখুরিয়া থানার আধিকারিকরা বাপির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন ৷ ফোনে কথা বলার পর গভীর রাতে বাপি পুখুরিয়া থানায় উপস্থিত হন ৷ প্রথমে নানা গল্প ফেঁদে তিনি পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু পুলিশি জেরার চাপে একসময় তিনি স্বীকার করে নেন, জ্যেঠু আর জ্যাঠতুতো দাদাকে ফাঁসাতে তিনি অপহরণের এই গল্প ফেঁদেছিলেন ৷ এরপর তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ৷ পাঁচদিনের হেফাজতের আবেদন জানিয়ে মঙ্গলবার তাঁকে চাঁচল মহকুমা আদালতে পেশ করা হয় ৷ আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বাপিকে তিনদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ৷

শেখ কফিরুদ্দিন পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে গতকাল সন্ধে ছ’টা নাগাদ বাইক সার্ভিসিং করাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ৷ আড়াইডাঙা স্ট্যান্ডে একটি দোকানে বাইক সার্ভিসিং করানোর কথা ছিল ৷ তারপর আর ছেলের খোঁজ পাচ্ছিলেন না তাঁরা ৷ যেহেতু পারিবারিক বিষয় নিয়ে দাদাদের পরিবারের সঙ্গে তাঁদের ঝামেলা চলছে, তাই তাঁদের সন্দেহ হয়, দাদারাই তাঁর ছেলেকে অপহরণ করেছেন ৷ কারণ, তাঁরা কয়েকদিন ধরেই বাপিকে অপহরণ করবেন বলে হুমকি দিচ্ছিলেন ৷ সেই ভাবনা থেকেই তিনি পুখুরিয়া থানায় ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ৷

পুখুরিয়া থানার এক আধিকারিক জানচ্ছেন, “গতকাল অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই আমরা নিখোঁজ যুবকের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চালাই ৷ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁর জ্যেঠু ও জ্যাঠতুতো দাদাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয় ৷ দফায় দফায় জেরা করে আমরা নিশ্চিত হই, এই ঘটনায় তাঁদের কোনও যোগ নেই ৷ এরপরই আমরা মোবাইল ফোনে ওই যুবকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করি ৷ কথাবার্তার পর তিনি নিজেই থানায় উপস্থিত হন ৷ প্রথমে তিনি বলেন, তাঁকে পিস্তল দেখিয়ে অপহরণ করা হয়েছিল ৷ গোপন জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ৷ তিনি কোনওক্রমে পালিয়ে এসেছেন ৷ তিনি যে সঠিক বলছেন না, তা প্রথম থেকেই বোঝা গিয়েছিল ৷ শেষ পর্যন্ত চাপ দিতেই তিনি স্বীকার করে নেন, জ্যেঠু আর জ্যাঠতুতো দাদাকে ফাঁসাতেই তিনি অপহরণের নাটক করেছেন ৷ অজয় দেবগনের দৃশ্যম ছায়াছবি দেখে তিনি এই পরিকল্পনা করেন ৷ এই স্বীকারোক্তির পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এই ঘটনার পিছনে আরও কিছু রয়েছে কি না তা জানতে পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে ধৃতকে আজ চাঁচল মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷”

তবে এনিয়ে সংবাদমাধ্যমে কিছু বলতে রাজি হননি বাপি ৷ আদালতে যাওয়ার পথে এনিয়ে তাঁকে অনেক প্রশ্ন করা হলেও নিরুত্তর থাকেন তিনি ৷ শুধু জানান, “এনিয়ে আমি এখনই কিছু বলতে চাই না ৷”

ABOUT THE AUTHOR

...view details