আলিপুরদুয়ার, 15 অগস্ট: 'ডিটেনশন ক্যাম্প’ শব্দবন্ধ শুনলেই শিরদাঁড়ায় স্রোত নামে আজও ৷ নারকীয় পরিবেশ, চরম অত্যাচার আর অভিশপ্ত ইতিহাস নিয়ে এই দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অতীতের বেশ কিছু ডিটেনশন ক্যাম্প ৷ আলিপুরদুয়ার এর বক্সা দুর্গ তেমনই একটি জায়গা ৷ আন্দামানের সেলুলার জেলের মতো না হোক, কুখ্যাতিতে বক্সা পিছিয়ে নেই ৷
ডিটেনশন ক্যাম্প বক্সা ফোর্ট (ইটিভি ভারত) সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 2 হাজার 700 ফুট উঁচুতে অবস্থিত বক্সা ফোর্ট-এর ইতিহাস আজও স্মরণীয় ৷ চারিদিকে পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের কোলে রয়েছে বক্সা ফোর্ট ৷ যার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা । ভারত স্বাধীনের সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে এই বক্সা ফোর্টের কারাগারে বন্দি করে রাখত সেই সময়ের ইংরেজ সরকার ৷
এমনকী নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকেও এই কারাগারে রাখা হয়েছিল বলে কথিত আছে ৷ বক্সা ফোর্টের ইতিহাস থেকে জানা যায়, পূর্বে বক্সা ফোর্ট জায়গাটি ভুটান রাজাদের ছিল ৷ পরে ইংরেজদের সঙ্গে ভুটানের লড়াইয়ে এই জায়গাটি ইংরেজ সরকার দখল করে নেয় ৷ এই জায়গাটি হয় তাদের বসবাসের জায়গা ৷ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এখানে কারাগারে বন্দি করে রাখা হত ৷
আজ সেই বক্সা ফোর্ট এক ঐতিহাসিক জায়গা হিসাবে পরিচিত ৷ আলিপুরদুয়ার জেলা-সহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে বহু সাধারণ মানুষ 15 অগস্টের দিন ভিড় করেন এখানে ৷ বিভিন্ন ক্লাবের তরফে গিয়ে পতাকা উত্তোলন করা হয় ৷ এমনকী তিন দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান হয় পাহাড়ের কোলে । জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এই ইতিহাসকে অক্ষয় রাখতে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয় ৷
এই অঞ্চলের বাসিন্দারা এখনও আধুনিক জীবনের সুযোগসুবিধে থেকে বঞ্চিত ৷ পায়ে হাঁটা উঁচুনিচু পথ, পাহাড় কেটে সামান্য চাষবাস আর দিনগত পাপক্ষয় যেন সেই কবে থেকেই বক্সার নিয়তি ৷ সাধারণ মানুষ মাইলের পর মাইল পাহাড়ের দুর্গম আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে হেঁটে নিজের চোখে এই বক্সা ফোর্টকে একবার দেখতে আসে ৷ কেননা এই গন্তব্যে পৌঁছতে হলে নির্ভর করতে হবে পায়ের উপর ৷ এই পথে সাইকেল নিয়ে যাওয়া অসম্ভব ৷
দুর্গম বক্সা দুর্গে, পরাধীন ভারতে বন্দি ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর মতো প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী ৷ কিন্তু বক্সা বরাবর অবহেলিত থেকে গিয়েছে ৷ আজকের বক্সা দুর্গ আক্ষরিক অর্থেই খণ্ডহর ৷ জাতীয় সৌধ ঘোষিত হলেও দেশের প্রথম ডিটেনশন ক্যাম্পের ভাগ্য যেন বরাবরই মন্দ ৷ স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ থাপা জানান, প্রতি বছরই এখানে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় ৷
এলাকার আরেক বাসিন্দা ইন্দ্র শংকর থাপা জানান, অনেকে বলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসকে এখানে রাখা হয়েছিল ৷ তিনি বলেন, "আমার মনে হয় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নিশ্চয়ই এখানে ছিলেন ৷ এখান থেকেই পালিয়ে গিয়েছিলেন ৷"