মেদিনীপুর, 11 জানুয়ারি: মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন নিয়ে প্রসূতির মৃত্যু এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় পরিস্থিতি খতিতে দেখতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে আসে স্বাস্থ্য দফতরের 13 সদস্যের প্রতিনিধি দল । শনিবার তারা হাসপাতালের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করে । সেই বৈঠকে ছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল এডুকেশন বিভাগের ওএসডি ড. আশিস বিশ্বাস এবং ডিরেক্টর ড. প্রসূনকুমার দাস ।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিনিধি দলের সদস্য সরোজ মণ্ডল বলেন, "রোগীরা এখন সুস্থ আছে । রীতিমতো নড়াচড়া করছে ।" আরএল স্যালাইন নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "গোটা বিষয়টি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে।" এ বিষয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী বলেন, "তদন্ত চলছে ৷ সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে । একজন রোগী ভালো রয়েছে । বাকিরা আইসিইউতে আছে ৷"
মেদিনীপুর মেডিক্যালের বৈঠকে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল (ইটিভি ভারত) অন্যদিকে প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ফের উত্তাল হয়ে ওঠে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ৷ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বামেদের ছাত্র যুব সংগঠন এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই ৷ এরই পাশাপাশি একপ্রস্থ বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস নেতৃত্ব । এদিন সকাল হতেই কংগ্রেসের জেলা নেতৃত্ব পতাকা নিয়ে রীতিমতো হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়েন । তাঁরা স্লোগান দিতে দিতে মেডিক্যাল কলেজের সুপারের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান । কংগ্রেসের মিছিল হাসপাতালে যাতে না ঢোকে তার জন্য পুলিশ আটকাতে গেলে শুরু হয় তর্কাতর্কি । অবশেষে হাসপাতালে গেটের সামনে বসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন কংগ্রেস সমর্থকরা ।
এই নিয়ে কংগ্রেস নেতা অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, "সাড়ে তিন বছর আগে এই স্যালাইন কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ৷ তারপরেও এখানে রাজ্য সরকার এবং এই স্বাস্থ্য দফতর এখনও মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন ব্যবহার করছে । যার জেরে মৃত্যু ঘটেছে প্রসূতির । আমরা তাই এর প্রতিবাদ জানাতে সেইসঙ্গে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এই আন্দোলন করছি ।"
এদিকে হাসপাতাল সুপারের অফিস ঘেরাও করে সকাল থেকে বিক্ষোভে দেখাচ্ছে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই । তারা রাজ্য সরকার এবং সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান তোলেন । এরপর তারা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেখানে স্বাস্থ্য দফতরের টিম বৈঠকে বসেছেন, সেখানে ঢুকতে গেলে গেটে বাধা দেয় পুলিশ-প্রশাসন । শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই সমর্থকদের ধস্তাধস্তি ।
বিক্ষোভে উত্তাল হাসপাতাল চত্বর (নিজস্ব ছবি) এই বিষয়ে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে বলেন, "এই কালো তালিকাভুক্ত হওয়া স্যালাইন নবান্নের কোন তলা থেকে অনুমতি নিয়ে মেডিক্যাল কলেজে ব্যবহার হচ্ছিল, তা অবিলম্বে বের করতে হবে । সেই সঙ্গে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই । আমাদের বিক্ষোভের প্রধান কারণ, গোটা হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য পরিষেবা কাটমানি নিয়েই চলছে । তাই সেই সকল দালালদের হাসপাতাল থেকে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে ।"
অভিযোগ, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইনের সঙ্গে চিকিৎসার অব্যবস্থার কারণে মৃত্যু ঘটেছে এক প্রসূতির ৷ এইসঙ্গে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন আরও চারজন প্রসূতি । যাদের শিশুরা এখনও রয়েছে মাতৃমা'তে । এই ঘটনায় মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন এবং ভুল চিকিৎসা নিয়ে ইতিমধ্যে অভিযোগ দায়ের করেছে রোগীর পরিবার । এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরও ।
কংগ্রেসের মিছিল হাসপাতালে ঢুকতে বাধা (নিজস্ব ছবি) তড়িঘড়ি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মেডিক্যাল এডুকেশন বিভাগের ওএসডি চিকিৎসক আশিস বিশ্বাস এবং ডিরেক্টর চিকিৎসক প্রসূনকুমার দাসের নেতৃত্বে 13 সদস্যের এক প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে । এই প্রতিনিধি দলে ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের একাধিক কর্তার পাশাপাশি বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপকরা রয়েছেন ।
উল্লেখ্য, গত বুধবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে পাঁচ প্রসূতির অস্ত্রোপচার করা হয় । তাতে সুস্থ সন্তানও জন্ম দেন তাঁরা । কিন্তু অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই ওই পাঁচ প্রসূতির শারিরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে । রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং নিম্নমানের স্যালাইন ও ওষুধপত্র ব্যবহার করা হয়েছে রোগীদের ক্ষেত্রে । সেইসঙ্গে স্যালাইন বোতলে ছত্রাকও মজুত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে ।
এই বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবারই তারা হাসপাতাল সুপারকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছিলেন । সেই আবেদনের ভিত্তিতে একটি আভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটিও গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু গত শুক্রবার ভোরে ওই পাঁচ প্রসূতির মধ্যে একজনের মৃত্যু ঘটতেই পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেয় । যাতে রোগীর পরিবার কোনোরকম বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে তাই তড়িঘড়ি হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় ।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (নিজস্ব ছবি) শুক্রবার ভোরে যেই প্রসূতির মৃত্যু হয় তাঁর নাম মামনি রুইদাস (20) ৷ গত বুধবার সন্ধ্যায় তাঁরও অস্ত্রোপচার হয়েছিল । তিনি এক পুত্রসন্তানেরও জন্ম দিয়েছেন । মামনির শ্বশুরবাড়ি চন্দ্রকোনা রোডে হলেও তাঁর বাপের বাড়ি কেশপুরের রাউতায় । বাপের বাড়িতে থেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি । জানা গিয়েছে যে বাকি চারজন প্রসূতির ওইদিন অস্ত্রোপচার হয়েছে তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ।