কলকাতা: গুরু পূর্ণিমা উৎসবকে হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। গুরু পূর্ণিমা ব্যাস পূর্ণিমা এবং বেদ পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। চলতি বছর 21 জুলাই পালিত হবে গুরু পূর্ণিমা।
আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় গুরু পূর্ণিমা। শুধু হিন্দু নয়, বৌদ্ধ ধর্মেও গুরু পূর্ণিমার বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই তিথিতেই মুণি পরাশর ও সত্যবতীর ঘরে মহাভারতের রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাস জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাই এই দিনে মহর্ষি বেদব্যাসের জন্ম জয়ন্তীও পালন করা হয়। গুরু পূর্ণিমা সম্পর্কে বলতে গিয়ে রামকৃষ্ণ মঠ (যোগোদ্যান)-এর সম্পাদক স্বামী বিমলাত্মানন্দজি জানান, হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, বেদব্যাস চারটি বেদের ব্যাখ্যা করেছেন। বেদ বিভাজনের কৃতিত্বও তাঁকেই দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁর নাম বেদব্যাস। 18টি পুরাণ ছাড়াও তিনি রচনা করেছেন মহাভারত ও শ্রীমদ্ভাগবত গীতা। এই কারণে গুরু পূর্ণিমাকে 'ব্যাস পূর্ণিমা'ও বলা হয়।
গুরু পূর্ণিমা কবে:2024 সালের 21 জুলাই পালিত হবে গুরু পূর্ণিমা। এবছর আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথি 20 জুলাই বিকেল 5 টা 59 মিনিট থেকে শুরু হবে 21 জুলাই বিকাল 3 টে 46 মিনিটে শেষ হবে।
একই সঙ্গে, শাস্ত্রজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এবছর গুরু পূর্ণিমায় সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ তৈরি হচ্ছে ৷ সনাতন ধর্ম অনুযায়ী এই যোগ অত্যন্ত শুভ যোগ। সেই সঙ্গে জানা যাচ্ছে, হস্ত, মুল, উত্তরফাল্গুনী, উত্তরাষাঢ়া, উত্তরভাদ্রপদ, পুষ্যা বা অশ্লেষা নক্ষত্রের মধ্যে যদি রবিবার পড়ে তখন সর্বার্থ সিদ্ধ যোগ গঠিত হয়।এই যোগে করা সমস্ত কাজই সফল হয় বলে মনে করা হয় ৷ এবার গুরু পূর্ণিমায় সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ তৈরি হচ্ছে। এই যোগ 21 জুলাই সকাল 5 টা 36 মিনিটে শুরু হবে এবং 22 জুলাই রাত 12 টা 14 মিনিটে শেষ হবে। এই যোগে করা সমস্ত কাজই সফল হয় বলে বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্র মনে করে ৷
শুধু হিন্দু ধর্মেই নয়, বৌদ্ধ ধর্ম মতেও গুরু পূর্ণিমার মাহাত্ম্য যথেষ্ট ৷ জানা যায়, বোধিজ্ঞান লাভের পরে এই আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় সারনাথে প্রথম শিষ্যদের উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ। হিন্দু পুরাণ মতে, ভগবান শিব বা মহাদেব হলেন আদি গুরু। সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য, মরীচি এবং ক্রতু হলেন তাঁর প্রথম শিষ্য ৷ শিব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন এবং এই সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন বলে শাস্ত্র অনুযায়ী জানা যায়। তাই এই তিথিকে গুরু পূর্ণিমা আখ্যা দেওয়া হয়েছে শাস্ত্রে।
স্বামী বিমলাত্মানন্দজি গুরু পূর্ণিমার ব্যাখ্যা করে বলেন, "'গুরু' শব্দটি 'গু' এবং 'রু' এই দুটি সংস্কৃত শব্দ দ্বারা গঠিত। 'গু' শব্দের অর্থ 'অন্ধকার' বা 'অজ্ঞতা' এবং 'রু' শব্দের অর্থ 'অন্ধকার দূরীভূত করা'। 'গুরু' শব্দটি দ্বারা এমন ব্যক্তিকে নির্দেশ করা হয়, যিনি অন্ধকার দূরীভূত করেন ৷ যিনি অন্ধকার থেকে আলোয় নিয়ে যান তিনিই গুরু। গুরু আমাদের মনের সব সংশয়, সন্দেহ, অন্ধকার দূর করেন এবং নতুন পথের দিশা দেখান।"