মালদা, 6 সেপ্টেম্বর: একে বন্যায় রক্ষে নেই, দোসর ভাঙন ৷ নদীর জলস্তর কমতেই বানভাসি ভূতনিতে পাড় কাটছে গঙ্গা ৷ অবশ্য শুধু ভূতনিই নয়, মানিকচকের গোপালপুর-সহ কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের কিছু অংশেও শুরু হয়েছে গঙ্গা ভাঙন ৷ এই নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে জেলা জুড়ে ৷ সেচ দফতরের আশ্বাস, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে ৷ এখনই সেভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই ৷
এই মুহূর্তে ভয়াবহ বন্যায় দিশেহারা অবস্থা ভূতনি চরের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের ৷ চারদিকে খাদ্যের অভাব ৷ অভাব রয়েছে গোখাদ্যেরও ৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা 25 দিন ধরে বিচ্ছিন্ন ৷ ইতিমধ্যে সর্পাহত হয়েছেন দু’জন ৷ জলে তলিয়ে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে ৷ সময়মতো হাসপাতালে না নিয়ে যেতে পারায় গর্ভস্থ সন্তান-সহ মারা গিয়েছেন এক তরুণী ৷
ভূতনির চরে গঙ্গার ভাঙন৷ (নিজস্ব চিত্র) ভূতনি থানা এখনও জলের তলায় ৷ কবে জল নামবে, কেউ জানে না ৷ কারণ, গঙ্গার জল নামলেও প্রকৃতিকভাবে খানিকটা গামলা আকৃতির হওয়ায় চরের জল শুকোনোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও অনেকদিন ৷ এরই মধ্যে হিরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাগডুকরা এবং উত্তর চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কালুটোনটোলায় শুরু হয়েছে ভাঙন ৷ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি ৷ চলে গিয়েছে প্রাচীন একটি বটগাছও ৷ ভয়ে বন্যার জলের মধ্যেই নিজেদের বাড়িঘর ভাঙতে শুরু করে দিয়েছেন কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দারা ৷
কালুটোনটোলার বিশাল মাহাতো বলেন, “যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে গ্রাম আর বাঁচবে বলে মনে হচ্ছে না ৷ এমনিতেই বানের জলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই ৷ তার উপর ভাঙন ৷ একের পর এক ভাঙনে আমাদের সবকিছুই চলে গিয়েছে ৷ যেটুকু বেঁচে আছে, সময় থাকতে রক্ষা করার চেষ্টা করছি ৷ তবে এই অবস্থায় কোথায় যাব, কী করব, বুঝতে পারছি না ৷”
ভূতনির চরে গঙ্গার ভাঙন৷ (নিজস্ব চিত্র) গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়েছে মানিকচক ব্লকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কামালতিপুর গ্রামেও ৷ গঙ্গার বাঁধের প্রায় 60 মিটার এলাকা ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে ৷ বাঁধভাঙা নদীর জল গ্রামে ঢুকতে শুরু করেছে ৷ এখানেও নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন ৷ কারণ, যেকোনও সময় গঙ্গা রুদ্রমূর্তি ধরতে পারে তখন আর জিনিসপত্র সরানোর সময় পাওয়া যাবে না ৷
ভূতনির চরে গঙ্গার ভাঙন৷ (নিজস্ব চিত্র) স্থানীয় বাসিন্দা সরিফুল ইসলাম বলেন, “দু’দিন ধরেই অল্পবিস্তর ভাঙন হচ্ছে ৷ কিন্তু গতকাল ভাঙনের তীব্রতা ছিল অনেক বেশি ৷ বাঁধের প্রায় 60 মিটার এলাকা তলিয়ে গিয়েছে ৷ এই বাঁধ গনি খানের আমলে পাথর দিয়ে বাঁধানো হয়েছিল ৷ বোঝা যাচ্ছে, এবার আর উপায় নেই ৷ সুযোগ পেলেই গ্রামে ঢুকে পড়বে গাংকাট্টি ৷”
এদিকে কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের শোভাপুর পারদেওনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পারলালপুর এলাকাতেও শুরু হয়েছে গঙ্গার ভাঙন ৷ অল্পবিস্তর ভাঙন চলছে পাশের অনুপনগরেও ৷ তবে সেখানে এখনও ভাঙনের তীব্রতা মারাত্মক আকার ধারণ করেনি ৷
জেলা সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শুভনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “গঙ্গার জলস্তর কমছে ৷ আজ নদীর উচ্চতা ছিল 24.83 মিটার ৷ বিপদসীমা থেকে এখনও 47 সেন্টিমিটার উঁচু দিয়ে বইছে নদী ৷ জল কমার সময় গঙ্গা ভাঙনের প্রবণতা বাড়ে ৷ ভূতনি চরের বাগডুকরা এলাকায় যেখানে ভাঙন হচ্ছে, সেখান থেকে জনবসতি অনেক দূরে ৷ তবে কালুটোনটোলায় জনবসতি লাগোয়া এলাকাতেই ভাঙন শুরু হয়েছে ৷ গতকাল থেকেই সেখানে অস্থায়ী ভাঙন রোধের কাজ শুরু করা হয়েছে ৷ কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকে ভাঙন এখনও ততটা উদ্বেগজনক নয়৷ আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি ৷ প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হচ্ছে ৷”