পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

নিজে পারেননি, গ্রামে ছোটদের জন্য বিনামূল্যে কোচিং সেন্টার 'ক্লাস ওয়ান পাশ' যুবকের - Free Coaching Centre

Free Coaching Centre in Village: টাকার অভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দুঃস্থ পরিবাবের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ৷ নিজেও তেমনই এক পরিস্থিতির সাক্ষী থেকেছেন ৷ তাই এমনটা যাতে আর না-ঘটে, সেজন্য গ্রামে বিনামূল্যে কোচিং সেন্টার খুললেন 'ক্লাস ওয়ান পাশ' যুবক ৷

Free Coaching Centre
গ্রামে বিনামূল্যে পাঠ দেওয়ার জন্য কোচিং সেন্টার খুললেন যুবক (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 2, 2024, 7:34 PM IST

গোঘাট, 2 সেপ্টেম্বর: অনেক দূর পড়াশোনা করার স্বপ্ন ছিল, পূরণ হয়নি ৷ তাই দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের স্বপ্নপূরণে উদ্যোগী 32 বছরের বিজয় দে ৷ নিজের টাকায় গ্রামেই খুলে ফেললেন বিনামূল্যের কোচিং সেন্টার ৷ তাঁকে সাহায্য়ের জন্য এগিয়ে এসেছেন বিজয়ের বন্ধুরাও ৷ এই মুহূর্তে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় তাঁর এই কোচিং সেন্টারে । পাশাপশি সপ্তাহে একদিন অঙ্কনের ক্লাসও করানো হয় । বর্তমানে প্রায় 200 জন ছাত্রছাত্রী এখানে বিনামূল্যে কোচিং নেয় ।

গ্রামে বিনামূল্যে কোচিং সেন্টার 'ক্লাস ওয়ান পাশ' যুবকের (ইটিভি ভারত)

বাবা-মাকে হারিয়ে ছোট বয়সেই ঘাড়ে এসে পড়েছে সংসারের হাল ৷ নিজের ও ভাইয়ের পেট চালাতে গিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতেই থমকে গিয়েছে বিজয়ের পড়াশোনা ৷ তাঁকে পাড়ি দিতে হয় মায়ানগরী মুম্বইয়ে ৷ কিন্তু স্বপ্ন কী থেমে থাকে ! বিজয়ের স্বপ্ন থেমে থাকেনি ৷ নিজে পারেননি কিন্তু অন্যান্যরা পারবে ৷ সেই আশায় গ্রামে কোচিং সেন্টার খোলা 'ক্লাস ওয়ান পাশ' যুবকের ৷

গোঘাটের শ্যামবাজার বারুইপাড়ার বাসিন্দা বিজয় দে । অনেক ছোট থেকেই দেখেছিলেন অভাব কী জিনিস ! 5 বছর বয়সে বাবাকে হারান । পরে মাকে হারিয়ে একরকম অনাথ হয়ে পড়েন তিনি ও তাঁর ভাই । দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন পড়াশোনা ছেড়ে টাকা রোজগারে নামেন বিজয় । পড়াশোনার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও তাকে বেরিয়ে পড়তে হয় কাজে । দিনমজুরি করে দুমুঠো ভাতের সংস্থান করতেন কোনওরকমে । পরে প্রতিবেশীদের পরামর্শে 11 বছর বয়সে মুম্বই যাত্রা বিজয় দে'র । মুম্বই শহরে সোনার কাজ করে প্রতিষ্ঠিত হন । ভাইকেও নিজের কাজে যুক্ত করেন । একসঙ্গে শুরু করেন নিজেদের ব্যবসা ।

নিজেদের অভাবমোচন করে গ্রামে ফেরেন তিনি । 2020 সালে কোভিডকালে নিজের গ্রামের দুর্দশার চিত্র ফুটে ওঠে তাঁর চোখে । গ্রামের 2-3 জন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে নিজের গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার বিষয়ে খবর নেন । বুঝতে পারেন, তাঁর গ্রামের কচিকাঁচাদের করুণ অবস্থার কথা । অধিকাংশ শিশু টাকার অভাবে স্কুলছুট হচ্ছে । কোভিডকালে এই পরিস্থিতি আরও প্রবল হয়ে ওঠে । এমতাবস্থায় নিজের অতীতের স্মৃতিচারণ করে কোচিং সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ৷

দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য বিনামূল্যে কোচিং সেন্টার (নিজস্ব ছবি)

2021 সালে 80 জন দুঃস্থ ছাত্রছাত্রী ও 3 জন গ্রামের শিক্ষককে নিয়ে শুরু হয় স্বামীজি ফ্রি কোচিং সেন্টার । কোচিং সেন্টারের প্রথম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের সাড়া না-পেলেও ক্রমে পরিবর্তন হয় এলাকাবাসীর চিন্তাভাবনা । ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য দেখে নিজেরাই তাঁদের ছেলে মেয়েদের ওই কোচিং সেন্টারে ভর্তির জন্য নিয়ে আসেন অভিভাবকরা। এই কোচিং সেন্টারের যাবতীয় খরচের ভার বহন করেন বিজয় দে । অঙ্কন শিক্ষক-সহ মোট 5 জন শিক্ষক ও 1 জন শিক্ষিকা আছেন বর্তমানে । সপ্তাহে 4 দিন নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের স্পেশাল ক্লাস করানো হয় ।

এ বিষয়ে বিজয় দে বলেন, "আমি চাই না আমার মতো দুর্দিন কোনও শিশুর হোক । চাই না কোনও শিশু ছোট থেকেই অন্ধকারে ডুবে যাক । কোনও ছাত্রছাত্রী টাকার অভাবে পড়াশোনা থেকে যেন দূরে সরে না যায় । একথা ভেবেই এই কোচিং সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নিই । তবে আমি টাকা দিলেও অন্যান্য সমস্তরকম সহযোগিতা করেছেন গ্রামেরই বেশ কিছু মানুষ ও শিক্ষক শিক্ষিকারা । ভবিষ্যতে আরও বড় পরিকল্পনা আছে, যা বাস্তবায়িত করার পূর্ণ প্রচেষ্টা করব ।"

বিজয়ের এই উদ্যোগকে এক বাক্যে সাধুবাদ জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ । জোৎস্না পাগড়ের কথায়, "আমার দুই সন্তানই ওই কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করে । টাকার অভাবে পড়াতে পারছিলাম না । উনি (বিজয়) না থাকলে হয়তো এই অসাধ্য সাধন হত না । এছাড়াও উনি গ্রামের মানুষদের নানারকমভাবে সাহায্য করেন ।"

কোচিং সেন্টারের শিক্ষক সুজন সাঁতরার বক্তব্য, "ওনার এই উদ্যোগের কাণ্ডারী হতে পেরে খুবই ভালো লাগছে । শুধুমাত্র দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করছেন তাই নয়, পাশাপশি এখানে উপস্থিত সকল শিক্ষক শিক্ষিকাকে পড়ানোর সুযোগও করে দিয়েছেন উনি ।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details