গোঘাট, 2 সেপ্টেম্বর: অনেক দূর পড়াশোনা করার স্বপ্ন ছিল, পূরণ হয়নি ৷ তাই দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের স্বপ্নপূরণে উদ্যোগী 32 বছরের বিজয় দে ৷ নিজের টাকায় গ্রামেই খুলে ফেললেন বিনামূল্যের কোচিং সেন্টার ৷ তাঁকে সাহায্য়ের জন্য এগিয়ে এসেছেন বিজয়ের বন্ধুরাও ৷ এই মুহূর্তে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয় তাঁর এই কোচিং সেন্টারে । পাশাপশি সপ্তাহে একদিন অঙ্কনের ক্লাসও করানো হয় । বর্তমানে প্রায় 200 জন ছাত্রছাত্রী এখানে বিনামূল্যে কোচিং নেয় ।
বাবা-মাকে হারিয়ে ছোট বয়সেই ঘাড়ে এসে পড়েছে সংসারের হাল ৷ নিজের ও ভাইয়ের পেট চালাতে গিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতেই থমকে গিয়েছে বিজয়ের পড়াশোনা ৷ তাঁকে পাড়ি দিতে হয় মায়ানগরী মুম্বইয়ে ৷ কিন্তু স্বপ্ন কী থেমে থাকে ! বিজয়ের স্বপ্ন থেমে থাকেনি ৷ নিজে পারেননি কিন্তু অন্যান্যরা পারবে ৷ সেই আশায় গ্রামে কোচিং সেন্টার খোলা 'ক্লাস ওয়ান পাশ' যুবকের ৷
গোঘাটের শ্যামবাজার বারুইপাড়ার বাসিন্দা বিজয় দে । অনেক ছোট থেকেই দেখেছিলেন অভাব কী জিনিস ! 5 বছর বয়সে বাবাকে হারান । পরে মাকে হারিয়ে একরকম অনাথ হয়ে পড়েন তিনি ও তাঁর ভাই । দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন পড়াশোনা ছেড়ে টাকা রোজগারে নামেন বিজয় । পড়াশোনার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও তাকে বেরিয়ে পড়তে হয় কাজে । দিনমজুরি করে দুমুঠো ভাতের সংস্থান করতেন কোনওরকমে । পরে প্রতিবেশীদের পরামর্শে 11 বছর বয়সে মুম্বই যাত্রা বিজয় দে'র । মুম্বই শহরে সোনার কাজ করে প্রতিষ্ঠিত হন । ভাইকেও নিজের কাজে যুক্ত করেন । একসঙ্গে শুরু করেন নিজেদের ব্যবসা ।
নিজেদের অভাবমোচন করে গ্রামে ফেরেন তিনি । 2020 সালে কোভিডকালে নিজের গ্রামের দুর্দশার চিত্র ফুটে ওঠে তাঁর চোখে । গ্রামের 2-3 জন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে নিজের গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার বিষয়ে খবর নেন । বুঝতে পারেন, তাঁর গ্রামের কচিকাঁচাদের করুণ অবস্থার কথা । অধিকাংশ শিশু টাকার অভাবে স্কুলছুট হচ্ছে । কোভিডকালে এই পরিস্থিতি আরও প্রবল হয়ে ওঠে । এমতাবস্থায় নিজের অতীতের স্মৃতিচারণ করে কোচিং সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ৷