ব্যারাকপুর, 11 অগস্ট: আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় এবার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন নিহতের বাবা-মা। রবিবার স্পষ্ট তাঁরা জানিয়ে দিলেন, এই ঘটনায় হাসপাতালের ভিতরের কেউ জড়িত আছে। আরজি কর হাসপাতালের গোটা চেস্ট ডিপার্টমেন্টকে সন্দেহের তালিকায় রাখছেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা ৷ মেধাবী এই তরুণী চিকিৎসককে সুপারি দিয়ে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করছেন নিহতের পরিবার। মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে সোমবার থেকে ধর্ণায় বসতে পারেন নিহতের চিকিৎসকের বাবা-মা। তার আভাসও মিলেছে দম্পতির কথা।
আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত সুপারি কিলার ? (ইটিভি ভারত) এই বিষয়ে মৃত চিকিৎসকের বাবা বলেন, "টাকা দিয়ে আমার মেয়েকে যে খুন করা হয়নি তা কে বলতে পারে ? যে ধরা পড়েছে তাঁকে সুপারি দেওয়া হয়নি তার কোনও গ্যারান্টি আছে ? আমরা হাসপাতালের গোটা চেস্ট ডিপার্টমেন্টকে তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি পুলিশের কাছে।" মৃত চিকিৎসকের বাবা-মা যখন সংবাদ মাধ্যমের সামনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন চঞ্চল্যকর অভিযোগ আনছেন ঠিক তার কিছুক্ষণ আগেই নিহতের সোদপুরের বাড়িতে তদন্তের স্বার্থে যান কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা। তিনি মৃত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তাঁদের হাতে তুলে দিয়ে তদন্তের অগ্রগতির বিষয়টি জানান। একইসঙ্গে পরিবারের থেকেও তথ্য জানতে চান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার।
এই প্রসঙ্গে মৃতের মা বাবা বলেন, "অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেছেন তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে উনি অনেক কিছুই জানতে চেয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো বলতে পারব না। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে নিম্নাঙ্গে অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে তাঁদের মেয়েকে।" এরপরই আবেগঘন গলায় বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তাঁরা। তরুণী চিকিৎসকের মা-বাবার কথায়, "আমরা সঠিক বিচার ও গোটা চেস্ট মেডিসিন বিভাগকে তদন্তের আওতায় দাবি জানিয়েছি। আমাদের সন্দেহ, এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে হাসপাতালে ভিতরের লোক জড়িত। আমার মেয়ে চাপে ছিল। ও বলত আমার আর আরজি করে যেতে ভালো লাগে না। কারণ ঠিক করে ওকে কাজ করতে দেওয়া হত না। সিনিয়র ডাক্তাররা সহযোগিতা করতেন না।বেশি করে কাজ করানোর চেষ্টা করা হত। যার ফলে মেয়ে চাপে থাকত সবসময়।"
ওই দম্পতি আরও বলেন, "মেয়েকে দিয়ে নাইট ডিউটি করানো হত। কিন্তু রাতে ঘুমানোর নির্দিষ্ট কোনও জায়গা ছিল না ওঁদের। চারজন ছেলের সঙ্গে একজন মেয়ে কী করে রাতে ডিউটি করবে! অসুবিধা তো হবেই। কর্তৃপক্ষকে জানানোর মতো ব্যবস্থাও ছিল না।" এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও অনেকেরই যোগ থাকতে পারে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিহত চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরা। এদিকে, মেডিক্যাল পড়ুয়া এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি তাঁদের যে সহমর্মিতা রয়েছে তাও এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। তাঁদের মতে, "ছাত্রদের আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব। ওঁরা যে দাবিতে আন্দোলন করছে তাঁর সঙ্গে আমরা সহমত।"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুরলীধর শর্মা বলেন, "ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুদিনে যে তদন্ত হয়েছে, তা নিহতের মা-বাবাকে জানানো হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে সেটাও জানিয়েছি। পরিবারের বক্তব্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। পরিবার জানিয়েছে, পুলিশের উপর তাদের ভরসা আছে ৷ সমস্তরকম সহযোগিতা করবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টও হস্তান্তর করা হয়েছে ওঁর বাবা-মাকে।"