পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By ETV Bharat Bangla Team

Published : 5 hours ago

ETV Bharat / state

নবমীতে জোড়া কুমারী পুজো, নিয়ম-নিষ্ঠায় 400 বছর পার দত্তচৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোর - Durga Puja 2024

Howrah Bonedi Barir Durga Puja 2024: শাক্ত ও বৈষ্ণব দুই মতের সংমিশ্রণই হল এই দত্তচৌধুরী বাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্য। ক্ষীর ও নারকেলের সঙ্গে চিনি মেওয়া মিশিয়ে তৈরি হয় 'আগমণ্ডা' নামের বিশেষ পদ। নবমীর দিন জোড়া কুমারী পুজোর পর সম্পন্ন হয় ধুনো পোড়ানো।

Howrah Bonedi Barir Durga Puja 2024
হাওড়ার দত্তচৌধুরী বাড়ির পুজো (ইটিভি ভারত)

হাওড়া, 29 সেপ্টেম্বর: হাওড়ার বনেদি বাড়ির পুজোর ইতিহাস ঘাঁটলে আন্দুল মৌড়ি এলাকার দত্তচৌধুরী বাড়ির মাতৃ আরাধনার উল্লেখ করতেই হবে ৷ এই বাড়ির পুজো অতিপ্রাচীন। বাড়ির ভিতরে ঢুকেই চোখে পড়বে অতীতের গৌরবময় সাবেকিয়ানা। এর ইতিহাস বাড়ির ঠাকুরদালানের সামনে ব্যক্ত করছে একটি বোর্ড। তাতে লেখা "এই পুজো রামশরণ দত্ত প্রবর্তন করেন 1016 বঙ্গাব্দে (1609 খ্রিষ্টাব্দ)।" যদিও এ বিষয়ে পারিবারিক মতান্তরের অবকাস রয়েছে ৷ চলুন জেনে নেওয়া যাক দত্তচৌধুরী বাড়ির পুজোর রীতিনীতি আর ইতিহাস ৷

পুজোর সূচনা-

যদিও ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে জানা যায় এই দুর্গাপুজোর রয়েছে আরও ইতিহাস। সেই ইতিহাস বলছে, এই পুজোর শুরু 1568 থেকে 1570 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। যদিও পুজো শুরুর প্রকৃত বছর, তারিখ নিয়ে বংশধরদের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও দত্তচৌধুরী বাড়ির পুজোর প্রাচীনত্ব নিয়ে কারও কোনও দ্বিমত নেই। অতীতের সরণি বেয়ে গেলে দেখা যায়, 1630 সাল নাগাদ ইঁট আর খড়ের আটচালা মন্দির থেকে পাকা ঠাকুরদালান তৈরি হয়। এরপর বয়সের ভারে নুজ্য সেই ঠাকুরদালান 1930-এ পুনর্নির্মাণ করে আজকের ঠাকুরদালানটি দাঁড়িয়ে আছে। ঠাকুরদালানের সঙ্গে লাগোয়া পরপর চারটি শিবমন্দির, যার মধ্যে দু'টি আটচালা শৈলিতে নির্মিত।

দেবীর আরাধনা দত্তচৌধুরী বাড়িতে (ইটিভি ভারত)

পুজোর বৈশিষ্ট্য-

শাক্ত ও বৈষ্ণব দুই মতের সংমিশ্রণই হল এই দত্তচৌধুরী বাড়ির পুজোর বৈশিষ্ট্য। এই বাড়ির মাতৃ আরাধনাতে একদিকে যেমন বৃহৎ নন্দীকেশ্বর পুরাণ অনুসরণ করা হয়, ঠিক একইভাবে বৈষ্ণব ধারাকেও বংশ পরম্পরাতে নিষ্ঠা সহযোগে পালন করা হয়। দত্তচৌধুরী বাড়ির পুজোয় মাকে নিবেদন করা হয় বিশেষভাবে তৈরি মিষ্টি। ক্ষীর ও নারকেলের সঙ্গে চিনি মেওয়া মিশিয়ে তৈরি হয় 'আগমণ্ডা' নামের বিশেষ পদ। দশমীর দিনে মাতৃবরণের পর দুলে সম্প্রদায়ের নারীরা ঠাকুর বরণ করার জন্য তাঁদের পাড়ায় মাকে নিয়ে যান। এরপর ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়।

দত্তচৌধুরী বাড়ির মা দুর্গা (ইটিভি ভারত)

কী বলছেন পরিবারের সদস্য-

দত্ত পরিবারের নতুন প্রজন্ম সস্মিত মুখোপাধ্যয় বলেন, "আমার মামার বাড়ির পুজো দেখতে বেশ ভালো লাগে। পুজোর 2 মাস আগে থেকে দিন গুনতে শুরু করে দিই। শাক্ত মতে নিরীহ পশুবলি না-হলেও এখানে 'শত্রু বলি' দেওয়া হয়, যা এই পুজোকে বনেদি বাড়ির পুজার আচার ও সংস্কৃতি থেকে ভিন্ন করে তুলেছে। মূলত, চালের গুঁড়ো দিয়ে পুতুল গড়ে শত্রু-বিজয়ের প্রতীক রূপে সেই পুতুল বলি দেওয়া হয়। "

আন্দুল মৌড়ি এলাকার দত্তচৌধুরী বাড়ি (ইটিভি ভারত)

দত্তচৌধুরী বাড়ির মেয়ে মিতা বোস বলেন, "আগে মায়ের বিশেষ ভোগ নিবেদন না-থাকলেও তাঁর কাকিমা স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর সপ্তমীতে খিচুড়ি দেওয়া হয় মাকে ৷ নবমীর দিন জোড়া কুমারী পুজো হয় ৷ বাহ্মণ ও অব্রাহ্মণ কুমারীকে পুজো শুরু হয় ৷ তারপর হয় সম্পন্ন হয় ধুনো পোড়ানো।"

এক প্রতিবেশী পিয়ালী সরকার বলেন, "ছোটবেলা থেকে এই পুজো দেখে বড় হয়েছি। পুজোর দিনগুলোয় খুব আনন্দ করি ৷ আমি নিজেকে পরিবারের সদস্য বলেই মনে করি।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details