গঙ্গাসাগর, 12 ফেব্রুয়ারি: মেলার পর আবারও পুণ্য লাভের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীরা এসে ভিড় জমিয়েছেন গঙ্গাসাগরে । আজ মাঘী পূর্ণিমা ৷ সেই উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণ 24 পরগনার গঙ্গাসাগরে শুরু হয়েছে পুণ্যস্নান । একে একে স্নান সেরে কপিলমুনির আশ্রমে গিয়ে পুজো দিচ্ছেন পুণ্যার্থীরা ।
মাঘী পূর্ণিমায় স্নানকে কেন্দ্র করে গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের জন্য নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে ৷ পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামানো হয়েছে সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের ৷ এছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে একাধিক ব্যবস্থা । স্থলপথ ও জলপথে চলছে নজরদারি ৷
গঙ্গাসাগরে ডুব লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর (ইটিভি ভারত) পুণ্যস্নান সেরে যাতে পুণ্যার্থীরা সুষ্ঠুভাবে বাড়ি ফিরতে পারেন সেই দিকে নজর রেখেছে প্রশাসন । পুণ্যার্থীদের আসা ও যাওয়ার সুবিধার্থে বাড়ানো হয়েছে বাস ও ভেসেল সংখ্যা ৷ এছাড়াও 2টো বার্জ চলছে মুড়িগঙ্গা নদীতে ৷ থাকছে বাফার জোন ৷ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পক্ষ থেকে পানীয় জল ও ভ্রাম্যমান শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে ৷ অতিরিক্ত পুলিশেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে । 1 এবং 5 ও 6 নম্বর স্নানের ঘাটে চলছে পুণ্যস্নান । আলোর রোশনাইয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে কপিল মুনির আশ্রম ৷ রয়েছে প্রায় 15টি সিসিটিভি ক্যামেরা ৷ তিনটি যাত্রী নিবাস ।
মাঘী পূর্ণিমার বিশেষত্ব
মাঘ মাসে পূর্ণিমা হওয়ার দিনটিকে মাঘী পূর্ণিমা বলা হয় । এই দিনটি হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মাবলম্বী মানুষই পালন করেন । মাঘী পূর্ণিমার বিশেষত্ব, এই দিনে চাঁদের উপাসনা করা হয় । এই দিনে বুদ্ধ ও বিষ্ণুর পুজো করা হয় । এই দিনে পুণ্যস্নান করেন পুণ্যার্থীরা । বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে উপবাস ও প্রার্থনা করলে জীবনের সমস্ত উদ্বেগ দূর হয় । তাই দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা এসে পুণ্য লাভের আশায় ডুব দিচ্ছেন গঙ্গাসাগরে ।
এ বিষয়ে পুণ্যার্থী কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, "প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলায় স্নান চলছে কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে আমরা সেখানে যাইনি । প্রশাসনিক ব্যবস্থা খুবই ভালো গঙ্গাসাগরে । তাই পরিবার নিয়ে এখানেই পুণ্যস্নান করতে এসেছি ৷ মাঘী পূর্ণিমায় পুণ্য লাভের আশায় গঙ্গাসাগরে আসা ।"
স্নান সেরে কপিলমুনি আশ্রমে পুজো দিচ্ছেন পুণ্যার্থীরা (নিজস্ব ছবি) বজবজ থেকে গঙ্গাসাগরে আসা আরেক পুণ্যার্থী নরসিংহ দাসের কথায়, "আমরা কুম্ভমেলায় গিয়েছিলাম মৌনী অমাবস্যার সময় ৷ প্রচণ্ড ভিড় হয়েছিল সেখানে ৷ তাই আমরা কিছুদিন অপেক্ষা করার পর স্নান করেছি কুম্ভমেলাতে । মাঘী পূর্ণিমায় পুণ্য লাভের আশায় গঙ্গাসাগরে এসেছি । এখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা খুবই ভালো । কুম্ভমেলা থেকে গঙ্গাসাগরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা আরও ভালো রয়েছে ।"
এ বিষয়ে বর্ণালী দেউরি নামে এক পুণ্যার্থী বলেন, "মেলার সময় দূর-দূরান্ত থেকে বহু পুণ্যার্থীরা গঙ্গাসাগরে আসেন, সেই সময় সাগরের মানুষরা তেমনভাবে এখানে আসতে পারেন না । তাই আমরা মাঘী পূর্ণিমায় এসেছি ৷ পূর্ণিমা তিথিতে গঙ্গাস্নান করলে মনবাসনা পূর্ণ হয় ।"
মাঘী পূর্ণিমায় গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান (নিজস্ব ছবি) সাগরের বিডিও কানাইয়াকুমার রায় বলেন, "পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য কচুবেড়িয়া ও মেলা প্রাঙ্গণে দুটি যাত্রী শেড তৈরি করা হয়েছে ।" সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, "পুণ্যার্থীরা যাতে কোনও সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে । পুণ্যার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে ।"