কলকাতা, 19 জুলাই:একুশে জুলাইকে সামনে রেখে প্রস্তুতি তুঙ্গে ধর্মতলায় । মাঝে আর একটা দিন, তারপরেই তৃণমূল কংগ্রেসের মেগা শো, একুশের শহিদ তর্পণ । ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে শুক্রবার ছিল চূড়ান্ত ব্যস্ততা । একইসঙ্গে দলীয় নেতৃত্ব ও কর্মীদের মধ্যেও একুশের প্রস্তুতিকে নিয়ে ছিল শেষ মুহূর্তের হিসাব মেলানোর পালা । এদিন ধর্মতলায় আয়োজন ঘুরে দেখলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ৷
সভা মঞ্চ ঘুরে দেখলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার (ইটিভি ভারত) তিনি সাংবাদিকদের জানান, "একুশে জুলাইকে সামনে রেখে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেছি আমরা । মূলত অনুষ্ঠানটি যাতে নিরুপদ্রপে সম্পন্ন করা যায় তার জন্য বেশকিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । আগামিকাল থেকেই কলকাতার রাস্তায় সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাবে কলকাতা পুলিশকে । এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ।"
প্রায় তৈরি মঞ্চ (নিজস্ব চিত্র) শুক্রবার দুপুর থেকেই নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দলীয় কর্মী সমর্থক তথা ভলেন্টিয়ারদের নিয়ে বৈঠক করেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ও রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব । এদিন থেকেই দলীয় ভলেন্টিয়ারদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে । বিকেল থেকে প্রথমে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, পরে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম ঘুরে ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখেন সুব্রত বক্সি ।
অন্যদিকে এদিন বিকেলে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে এসে মূল মঞ্চ থেকে শুরু করে যেখানে মূল সভাটি হবে সেই এলাকার নিরাপত্তা খতিয়ে দেখলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল । এদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন, কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপাল মুরলীধর শর্মা, শুভঙ্কর সিনহা সরকার, কলকাতা পুলিশের নগরপাল সদর মিরাজ খালেদ, ডিসি ট্রাফিক রূপেশ কুমার, ডিসি ইডি আরিশ বিলাল । ছিলেন ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ও । পুলিশের তরফ থেকে এদিন ট্রাফিক থেকে শুরু করে মঞ্চের নিরাপত্তার যাবতীয় বিষয় আধিকারিকদের বুঝিয়ে দেওয়া হয় ।
একুশের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে (নিজস্ব চিত্র) ধর্মতলায় যে মঞ্চ তৈরি হচ্ছে, তার আশি শতাংশই তৈরি হয়ে গিয়েছে । এবার মূল মঞ্চে থাকছে দুটি আলাদা ব়্যাম্প । একটি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যবহারের জন্য । অন্যটি ব্যবহার করবেন সাংসদরা । সামনের যে প্রথম স্টেজটি তৈরি করা হয়েছে তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে থাকছে 52 ফুট, 28 ফুট ও 10 ফুট । এই মঞ্চে থাকবেন সাংসদ, মন্ত্রী ও আমন্ত্রিত প্রধান অতিথিরা । দ্বিতীয় মঞ্চটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে 48 ফুট, 24 ফুট ও 11 ফুট । এই মঞ্চে থাকবেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা । তৃতীয় মঞ্চের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা যথাক্রমে 48 ফুট, 20 ফুট ও 12 ফুট ।
এবার স্টেটসম্যান হাউজের দিক থেকে মঞ্চের যে অংশটি থাকছে সেটিকে কিছুটা বাঁকিয়ে রাখা হয়েছে । যাতে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে থাকা সাধারণ মানুষ খুব সহজে দলনেত্রীর বক্তব্য দেখতে ও শুনতে পারেন । একইভাবে বক্তব্য রাখার জন্য যে পোডিয়ামটি তৈরি করা হয়েছে, সেটি কিছুটা এল আকৃতির এবং সেটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ থাকছে যথাক্রমে 12 ও 16 ফুট । এছাড়া সংবাদমাধ্যমের জন্য দু'টি পৃথক মঞ্চ করা হয়েছে, যে মঞ্চ দু'টি থাকছে কেসি দাসের লাগোয়া ফুটপাথে । নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ধর্মতলার মূল মঞ্চ থেকে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত অত্যাধুনিক সিসিটিভির নজরদারি থাকবে । এছাড়া কলকাতা পুলিশ ড্রোনের মাধ্যমেও নজরদারি করবে বলে জানা যাচ্ছে । মূল অনুষ্ঠান যাতে দলীয় কর্মী সমর্থকরা ভালোভাবে দেখতে পান, সে জন্য বিভিন্ন জায়গায় বিশালাকায় স্ক্রিন লাগানো হচ্ছে । সব নিয়ে একটা মহা কর্মযজ্ঞ চলছে ধর্মতলা ।
এদিকে গতকাল রাত থেকেই দূরবর্তী জেলাগুলি থেকে কর্মী সমর্থকরা আসতে শুরু করেছেন কলকাতায় ৷ তাঁদের সল্টলেক, নিউটাউনের প্রকৃতি তীর্থ, সেন্ট্রাল পার্ক, সল্টলেক স্টেডিয়াম, নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, উত্তীর্ণ, গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে । এছাড়াও শনিবার রাতে যাঁরা আসবেন, তাঁদের বড়বাজারের লাগোয়া ধর্মতলাতেও থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে । শুধু থাকা-খাওয়া নয়, ধর্মতলায় আসা মানুষের বিপদাপদের কথা মাথায় রেখে চিকিৎসার জন্য ছোট ছোট ক্যাম্প করা হচ্ছে । প্রয়োজনে তাঁদের চিকিৎসায় সাহায্য করা হবে বলে জানা যাচ্ছে ।