পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

মার্চে ফের সমাবর্তন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে, প্রকাশ্যে আসতে পারে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত - GOUR BANGA UNIVERSITY

দীর্ঘ ন’বছর পর আগামী মার্চে ফের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হতে চলেছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে ফের প্রকাশ্যে আসতে পারে রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত ৷

Gour Banga University
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (নিজস্ব ছবি)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 25, 2025, 9:30 PM IST

মালদা, 25 ফেব্রুয়ারি: 2016 সালের পর 2025 ৷ পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় ন'বছর ৷ ফের সমাবর্তন অনুষ্ঠান হতে চলেছে মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷ সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের আয়োজন হতে চলেছে ৷ জানিয়েছেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ৷ তাঁর এই মন্তব্যে আবারও রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ কারণ, পদাধিকারবলে রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য৷ রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের যা পরিস্থিতি তাতে সমাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দেবেন কি সিভি আনন্দ বোস? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে ৷

2016 সালে শেষবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হয়েছিল ৷ তারপর পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ ন'বছর ৷ এই সময়কালে অনেক ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে পা রেখেছেন অন্যান্য ক্ষেত্রে ৷ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই তাঁরা নিজেদের শংসাপত্র সংগ্রহ করেছেন ৷ কিন্তু এভাবে শংসাপত্র পাওয়া নিয়ে খেদ ছিল তাঁদের ৷ অনেকেরই সাধ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে আচার্যের হাত থেকে নিজেদের শংসাপত্র গ্রহণ করবেন ৷ ছবি সাজিয়ে রাখবেন বাড়ির দেওয়ালে ৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সেসব ছবি তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সাক্ষী হয়ে থাকবে ৷ কিন্তু সেই সাধ আর তাঁদের পূরণ হয়নি, হবেও না ৷

গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায় (নিজস্ব ছবি)

সোমবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ 25টি কলেজ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে ৷ গতকাল প্রতিযোগিতার উদ্বোধনে কিছুক্ষণের জন্য মালদায় আসেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ৷ তিনি বলেন, "এখানে যাতে সমাবর্তন না হয় তার জন্য প্রচুর চেষ্টা ও চক্রান্ত চালানো হয়েছিল ৷ কিন্তু আমি বলছি, সমাবর্তন হবে ৷ আমি আশা করছি, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন মার্চ মাসের মধ্যেই হবে ৷"

শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণায় খুশির হাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে ৷ বাংলা বিষয়ের ছাত্রী রাজলক্ষ্মী রায়চৌধুরী গত বছর স্নাতকোত্তর শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েছেন ৷ তাঁর কথায়, "ইন্টার কলেজ স্পোর্টস দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ এসেছিলাম ৷ এসে শুনি, মার্চ মাসে এখানে সমাবর্তন উৎসব হবে ৷ খোদ শিক্ষামন্ত্রী সেকথা জানিয়ে গিয়েছেন ৷ খুব আনন্দ হচ্ছে ৷ আচার্যের হাত থেকে সার্টিফিকেট নেওয়ার ব্যাপারটাই আলাদা ৷"

বিভিন্ন কারণে এতদিন যাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শংসাপত্র সংগ্রহ করতে হয়েছে তাঁরাও শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ৷ ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ অনিরুদ্ধ বাগচি বর্তমানে বিহার সরকারের অধীনস্থ স্কুলে শিক্ষকতার চাকরির সুযোগ পেয়েছেন ৷

তাঁর বক্তব্য, "খুব ভালো খবর ৷ এই সার্টিফিকেটের জন্য আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে 1500 টাকা ফি দিতে হয়েছে ৷ আবেদন করার 30 দিন পর সার্টিফিকেট পেয়েছি ৷ অনেক পড়ুয়ার 1800 টাকা খরচ হয়েছে ৷ কারণ, হঠাৎ প্রয়োজনে 300 টাকা ফি দিয়ে অস্থায়ী সার্টিফিকেট নিয়ে কাজ চালাতে হয়েছে ৷ পরে 1500 টাকা দিয়ে স্থায়ী সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়েছে ৷ বিশ্বভারতী-সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা পয়সায় সার্টিফিকেট পাওয়া যায় ৷ কিন্তু এখানে সেই ব্যবস্থা নেই ৷ নিয়মিত সমাবর্তন হলে ছাত্রছাত্রীদের এত টাকা খরচ করে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে না ৷ সময়ও বাঁচবে ৷"

উপাচার্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সমাবর্তন করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম ৷ একাধিকবার রাজ্য শিক্ষা দফতরে আবেদন জানিয়েছি৷ আবেদন জানানো হয়েছে আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছেও ৷ কিছুদিন আগেই রাজ্য শিক্ষা দফতর সেই আবেদনে সাড়া দেয় ৷ গতকাল স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে গিয়েছেন, দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হবে ৷ যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন ছাত্রছাত্রীদের কাছে একটি উৎসব৷ উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের সেই উৎসবে সম্মানিত করা হয় ৷ প্রথম তিন স্থানাধিকারী পদক পান ৷ উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা এতদিন অবশ্যই বঞ্চিত হয়েছেন ৷ আশা করা যায়, এবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত এই উৎসব হবে ৷"

কিন্তু এনিয়ে আরও একবার রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত প্রকাশ্যে আসতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ নিয়ম অনুযায়ী কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন করাতে গেলে আচার্য তথা রাজ্যপালের অনুমতি আবশ্যক ৷ এই মুহূর্তে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যে সম্পর্ক তাতে তিনি যে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের অনুমতি দেবেন না তা কার্যত নিশ্চিত ৷ সেক্ষেত্রে কি নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটবে গৌড়বঙ্গে? কোন পদ্ধতিতে? লাখ টাকার প্রশ্ন ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details