আসানসোল, 14 জানুয়ারি: কারও কাছে মকরের পুন্যস্নান কেউ বা বলে পোঙ্গল, কারও কাছে আবার এটাই পিঠে পুলি উৎসব । পৌষ সংক্রান্তি নানান জাতির মানুষের কাছে নানান উৎসব মুখর দিন । আবার এই সময়কালেই অনুষ্ঠিত হয় আদিবাসীদের সহরায় উৎসব । পাঁচ দিন ধরে এই উৎসবের শেষ দিন মকর সংক্রান্তিতে । নাচে গানে আনন্দে আদিবাসীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব এই বাঁধনা পরবে মেতে উঠেন গোটা আদিবাসী কূল ।
একদিকে ধার্মিক ভাবনা । অন্যদিকে আনন্দ উচ্ছ্বাস । এর সঙ্গেই বাঙালিদের মতো পিঠে পরব । তবে সেই পিঠে একেবারেই অন্যরকম । এভাবেই আদিবাসীরা মেতে ওঠেন তাঁদের বছরের শ্রেষ্ঠ উৎসব সহরায় বা বাঁধনা পরবে । এবারও আসানসোল শিল্পাঞ্চলের হীরাপুরের বিভিন্ন গ্রাম সেজে ওঠে এই সহরায় উৎসব ঘিরে । গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে নতুন রং, গোটা গ্রামকে সাজানো হয়েছে কাগজের ফুলঝুরি দিয়ে । পাশাপাশি আদিবাসী রমণীরা নতুন শাড়ির সাজে নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন । এমন চিত্র দেখা গেল সহরায় উৎসবে হীরাপুরের হারামডি গাঁয়ে । সহরায় উৎসবে মেতে উঠেছেন গোটা গ্রামের বাসিন্দারা ।
ধামসা-মাদলে শেষ রঙিন সহরায় উৎসব (নিজস্ব ভিডিয়ো) ওই অঞ্চলের আদিবাসী নেতা হীরালাল সোরেন জানালেন, "পাঁচদিন ধরে এই সহরায় উৎসব অনুষ্ঠিত হয় । প্রথম দিনে আমরা গোমাতার সেবা করি । যেহেতু আমরা চাষবাস করি । সে কারণে গরুকে আনন্দ দেওয়া হয় । গরুকে ঘিরে গান শোনানো হয় । গরুর ক্ষুর ধুইয়ে, তেল দেওয়া হয় । এছাড়া গরুকে ভালো ভালো জিনিস খাওয়ানো হয় । দ্বিতীয় দিন পুরুষরা নাচে অংশগ্রহণ করেন । তাঁরা কাঠি হাতে নাচ করেন । তৃতীয় দিন থেকে নারী-পুরুষ সমস্ত পরিবার মিলে নাচে মেতে ওঠেন । এর মাঝে আমাদের মারাং বুরুকে পুজো দেওয়া এবং পারিবারিক যে দেবতা রয়েছে সেই দেবতাদের আরাধনা করা হয় । একদিকে ধর্মীয় উৎসব, অন্যদিকে নাচ গানের আনন্দের উৎসব এই সহরায় ।"
আদিবাসীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব এই বাঁধনা পরব (নিজস্ব চিত্র) আদিবাসীদের রঙিন সহরায় উৎসব (নিজস্ব চিত্র) এই দিনে আদিবাসীরাও সহরায় উৎসবে পিঠে পরব পালন করে । যদিও তাঁদের পিঠে একেবারেই আলাদা । এই পিঠের নাম পাতরা পিঠে । শালপাতাতে চাল আর মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি হয় এই পিঠে । পিঠেতে মুরগির মাংস দেওয়ার প্রচলন একমাত্র আদিবাসীদের মধ্যেই রয়েছে । হারামডি গ্রামের সাঁওতাল যুবতী সুচিত্রা সোরেন জানালেন, "আমরা পাঁচ দিন ধরে আনন্দে উৎসবে মেতে উঠি । তার সঙ্গে চলে আমাদের পাতরা পিঠে খাওয়া । মাংসের এই পিঠের অসাধারণ স্বাদ ।"
নৃত্যে মাতলেন আদিবাসী মহিলারা (নিজস্ব চিত্র)