মালদা, 7 সেপ্টেম্বর: অবৈধ দোকানঘর উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে শনিবার সরগরম হয়ে উঠল পুরাতন মালদার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আদমপুর এলাকা ৷ আদালতের নির্দেশে এদিন সেখানে তিনটি বেআইনি দোকানঘর ভেঙে দেয় পূর্ত দফতর ৷ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল মালদা থানার বিশাল পুলিশ৷ প্রথমে দোকানদাররা প্রশাসনকে উচ্ছেদে বাধা দেন ৷ এনিয়ে উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায় ৷ যদিও পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি ৷ উচ্ছেদ হওয়া দোকান মালিকদের অভিযোগ, আদালতের কোনও নির্দেশ না দেখিয়েই এদিন তাঁদের উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন ৷
পুরনো মালদায় বেআইনি হকার উচ্ছেদ অভিযান (ইটিভি ভারত) আদমপুর গ্রামের বাবু বাজারে মালদা-নালাগোলা রাজ্য সড়কের ধারে এক ব্যক্তির জায়গা দখল করে তিনটি অস্থায়ী দোকানঘর নির্মিত হয়েছিল ৷ জায়গার মালিক একাধিকবার তিন দোকানদারকে তাঁদের দোকান সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানালেও কাজ হয়নি ৷ শেষ পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ৷ সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মহকুমাশাসককে একটি শুনানির আয়োজন করার নির্দেশ দেন ৷
শুনানির দিন তিন দোকানদারই জানান, তাঁরা 27 জুলাইয়ের মধ্যে নিজেদের দোকান সরিয়ে নেবেন ৷ কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও তাঁরা নিজেদের কথা রাখেননি ৷ এরপরেই মহকুমাশাসক দোকানঘরগুলি ভেঙে ফেলার জন্য পূর্ত দফতরকে নির্দেশ দেন ৷ সেই নির্দেশিকা মেনেই এদিন দোকানঘরগুলি ভেঙে দিয়েছে পূর্ত দফতর ৷ দোকানঘর ভাঙার সময় প্রবল বাধা দেন তিন দোকানদার-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ যদিও তাঁরা সফল হননি ৷
উচ্ছেদ হওয়া এক দোকানদার প্রভাস চৌধুরীর বক্তব্য, "50-60 বছর ধরে পূর্ত দফতরের এই জায়গা আমাদের দখলে ছিল ৷ এখানে একটি শিব মন্দিরও তৈরি হয়েছে ৷ 10 বছর ধরে আমরা এখানে দোকান করে সংসার চালাচ্ছি ৷ পিছনের জায়গাটি বছর দুয়েক আগে একজন কিনেছেন ৷ তিনি আমাদের দোকান নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন ৷ আজ পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে তিনি আমাদের দোকানঘর ভাঙাচ্ছ ৷ তিনি বলছেন, তাঁর কাছে নাকি আদালতের অর্ডার রয়েছে ৷ কিন্তু সেই অর্ডার কপি তিনি আমাদের দেখাতে পারেননি ৷ জোর করেই আমাদের দোকান ভাঙা হচ্ছে ৷ আমাদের দাবি, যেভাবে দোকান ভাঙা হল, সেভাবেই নতুন দোকান তৈরি করে দেওয়া হোক যাতে আমরা সংসার চালাতে পারি ৷”
আরেক দোকানদার জয়া চৌধুরী বলেন, "বছর পাঁচেক আগে স্বামী মারা গিয়েছেন ৷ এখানে চায়ের দোকান চালাতাম ৷ সেই উপার্জনেই ছেলেমেয়ে মানুষ করেছি ৷ মেয়েটার এখনও বিয়ে দিতে পারিনি ৷ আজ জায়গার মালিক আমাকে এখান থেকে উঠিয়ে দিচ্ছে ৷ বলছে, কোর্টের অর্ডার পেয়েছে ৷ কিন্তু সেটা দেখাতে পারছে না ৷ গতকাল রাতে থানার পুলিশ আধিকারিক এসে বলেছিলেন, সকালের মধ্যে দোকানের মাল খালি করতে ৷ তিনিও কোর্টের অর্ডার দেখাতে পারেননি ৷ দোকান চলে গেলে আমি দুটো সন্তান নিয়ে কী করে খাব ? তাই দোকান রক্ষা করার চেষ্টা করেছি ৷ আমাকে কোনও ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক ৷"
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সৌরভ সাহা বলেন, "জায়গার মালিক কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা করেছিলেন ৷ হাইকোর্ট এবিষয়ে পদক্ষেপ করতে পূর্ত দফতরকে নির্দেশ দেয় ৷ এনিয়ে প্রথমে আমরা হিয়ারিং করেছিলাম ৷ পরে সদর মহকুমাশাসক হিয়ারিং করেন ৷ সেখানে তিন দোকানদারই লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, 26 জুলাইয়ের মধ্যে তাঁরা দোকান সরিয়ে নেবেন ৷ কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরা দোকান সরাননি ৷ তাই আইন মেনে আজ তিনটি দোকানই ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৷"