কলকাতা, 14 জুন: উচ্চশিক্ষার জন্য বিয়ে করতে না চাননি হাজরা আইন কলেজের এক ছাত্রী ৷ তাই তাঁকে লাগাতার হেনস্থার অভিযোগ উঠল তাঁরই কিছু আত্মীয় ও গ্রামের মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ৷ তাঁকে মারধর, এমনকী প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ৷ অভিযোগ, এর পাশাপাশি অ্যাসিড ছুড়ে মুখ পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় ৷ আর এই ঘটনাতে কড়া পদক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ ঘটনাটি হুগলির একটি পঞ্চায়েতের হলেও এর তদন্তভার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা চন্দননগরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনারকে দিয়েছেন ৷
ঘটনাটি হুগলি জেলার শ্যামসুন্দর পুর চণ্ডীতলা থানা এলাকার। কিন্তু জেলা পুলিশে ভরসা না থাকায় বিচারপতি অমৃতা সিনহা শুক্রবার ডিসি চন্দননগর আলোকানন্দা ভাওয়ালকে তদন্তেরভার দিয়েছেন। এরই পাশাপাশি, বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে, কোনও পঞ্চায়েত সদস্য বা গ্রামের কোনও মোড়ল এই ঘটনায় নাক গলাবে না বা তদন্তে হস্তক্ষেপ করবে না। অভিযোগ ওই ছাত্রী, ভোটের সময় মে মাসে কলকাতা ছেড়ে গ্রামে যাওয়ার পর থেকে চলছে এই অত্যাচার। আর পুলিশের কাছে একের পর এক অভিযোগ জানানোর পরেও এফআইআর করেনি পুলিশ।
রাজ্যের আইনজীবীর অবশ্য বক্তব্য, প্রাথমিকভাবে অভিযোগপত্রে কোনও অভিযুক্তের নাম ছিল না। রাজ্যের আইনজীবী বলেন, "আমরা ভুল করেছি মেনে নিচ্ছি। নির্যাতিতার বোনের অভিযোগপত্রে বিস্তারিত তথ্য না থাকায় সেটা পূরণ করতে বলা হয়েছিল।" নির্যাতিতার আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, "এই ঘটনায় উলটে অভিযুক্তরা অভিযোগ জানায় দুই তরুণীর বিরুদ্ধে। জাতীয় মহিলা কমিশনেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। সেই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কী হবে আমরা জানি না।"
দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি অমৃতা সিনহা নির্দেশ দিয়ে জানান, ওই পরিবারের যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে পুলিশকে। থানার ওসি যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট নয় কেন পুলিশ এফআইআর করেনি। এমনকী 20 মে লিখিত অভিযোগ জানানোর পরেও কেন এফআইআর দায়ের হয়নি তাও স্পষ্ট নয় ৷ বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, "যেখানে অভিযোগ এমন মারাত্মক, সেখানে পুলিশের আরও আগে দ্রুত পদক্ষেপ করা উচিত ছিল। যদি আগে সেটা করত তাহলে 19 মে দ্বিতীয় হামলার ঘটনা আটকানো যেত। অথচ পুলিশ অভিযোগ থেকে গা বাঁচানোর চেষ্টা করেছে শুধু তাই নয়, উলটে অভিযুক্তদের থেকে অভিযোগ নিতে দেরি করেনি !"
এরপরই থানার ওসি'কে ফের এই নিয়ে নিজের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ৷ একের পর এক অভিযোগ পাওয়ার পরেও এফআইআর না নেওয়ার ব্যাখ্যাও দিতে হবে পুলিশকে। এরপরই জেলা পুলিশে ভরসা না থাকায়, আলোকানন্দা ভাওয়ালকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট ৷ পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে, কোনও পঞ্চায়েত সদস্য বা কোনও মোড়ল এই ঘটনায় যেন নাক না গলায় ৷