কলকাতা, 25 জুন: লোকসভা ভোটের আগে দায়ের হওয়া পঞ্চায়েতের আর্থিক নয়ছয়ের মামলা প্রত্যাহারের আরজি জানালেন মামলাকারী ৷ যাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল সেই বাপি হালদার বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ৷ মথুরাপুর থেকে তিনি সাংসদ হয়েছেন ৷ ফলে ভোট মেটার পর মামলা তুলে নেওয়ার আরজির বিষয়টি সন্দেহের চোখেই দেখছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷
আদালত মনে করে, কোনও প্রভাবশালীর চাপের কাছে নতিস্বীকার করে মামলা হয়তো তুলে নিতে চাইছেন মামলাকারী ৷ তবে পুরো বিষয়টির সঙ্গে যেহেতু সরকারি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ জড়িয়ে, তাই আদালত চাইলে মামলা চালিয়ে যেতে পারে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন বিচারপতি ৷ পরবর্তী শুনানি আগামী 9 জুলাই ৷
দক্ষিণ 24 পরগনার মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে লোকসভা নির্বাচনের আগে ৷ বর্তমানে ওই পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে ৷ বর্তমান প্রধান তথা বিজেপি নেতা অনুপকুমার মিস্ত্রি এই অভিযোগ তোলেন ৷ ওই পঞ্চায়েত যখন তৃণমূল পরিচালিত ছিল, সেই সময়ের প্রধান তৃণমূলের শিলি হালদার ও তাঁর স্বামী বাপি হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন অনুপকুমার মিস্ত্রি ৷ এই নিয়ে মামলাও দায়ের হয় কলকাতা হাইকোর্টে ৷
মামলা যখন দায়ের হয়, তখন বাপি হালদার মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ৷ আর এখন তিনি ওই কেন্দ্রের সাংসদ ৷ ফলে মঙ্গলবার বিজেপি নেতা অনুপকুমার মিস্ত্রি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করতেই এই নিয়ে শোরগোল পড়ে ৷ এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার পর্যবেক্ষণ, মামলাকারী প্রভাবশালীর পক্ষে চলে যেতে পারেন । তাঁকে ভয় দেখানো হয়ে থাকতে পারে ৷
এ দিকে এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করতে দেরি করা হয় মথুরাপুর থানার ওসি-কে শোকজ করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত ৷ সেই নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে । এ দিন বিচারপতি জানতে চান, ‘‘কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ? নথি কোথায় ?’’
এদিকে অভিযুক্ত বাপি হালদারের আইনজীবী এ দিন আদালতে আর্জি জানান, মামলায় তাঁকে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক । কারণ, পঞ্চায়েতে কাজের সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বসে নেন । এখানেও তাই হয়েছে । প্রধান একা কোনও সিদ্ধান্ত নেননি । সব নথি আছে । মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে । এমনকী, থানায় অভিযোগ জানানোর ব্যাপারে বোর্ডে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা । কিন্তু এই ক্ষেত্রে তাও হয়নি । যদিও বিচারপতি অমৃতা সিনহা অভিযুক্তের বক্তব্য রেকর্ড করলেও তাঁকে মামলায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেননি । তাঁর বক্তব্য, "আপনার যা বলার পুলিশের কাছে বলুন ।"
বিচারপতি নির্দেশ জানান, প্রাথমিক কী তদন্ত পুলিশ এখনও করেছে ? কেন রিপোর্ট নেই ? 9 জুলাই পরবর্তী শুনানি । ওইদিন তদন্তে অগ্রগতির রিপোর্ট দিতে হবে পুলিশকে । আদালত মনে করে, সরকারি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে । ফলে মামলাকারী সরে গেলেও মামলা এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে ।