পূর্ব বর্ধমান, 18 মার্চ:রাজ্যের 42টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে 38 নম্বরে রয়েছে বর্ধমান পূর্ব ৷ এক সময়ের সিপিএমের গড় এই কেন্দ্রটি 2014 সালে বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেন তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল । 2019 সালে দ্বিতীয়বারের জন্য ওই কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন । এরপর 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন সুনীল ৷ তবে বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের পরাজয়ের পর ফের তৃণমূলে ফিরে আসেন তিনি ৷
তাঁকে ঘিরে কম বিতর্ক হয়নি ৷ দল বদলের পর ফের তৃণমূলে আসায় দলের স্থানীয় কর্মী থেকে অনেকেই অসন্তুষ্ট হন ৷ পোস্টারও পড়েছিল তাঁকে দলে না ফেরানোর আবেদন জানিয়ে ৷ বিতর্কের মাঝে এলাকার উন্নয়নে কতটা কাজ করেছেন তিনি ? ইচ্ছে থাকলেও করতে পারলেন না কোন কাজ ? খোঁজ নিল ইটিভি ভারত । এই নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বললেন সাংসদ সুনীল মণ্ডল ।
বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র মূলত কৃষিপ্রধান এলাকা । বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে রায়না, জামালপুর, কালনা, মেমারি, পূর্বস্থলী দক্ষিণ, পূর্বস্থলী উত্তর ও কাটোয়া বিধানসভা কেন্দ্র। ম্যাপ বলছে, কেন্দ্রকে ঘিরে আছে হুগলি, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা । রাঢ়বঙ্গের কৃষিপ্রধান জেলার অন্যতম পূর্ব বর্ধমানকে ধানের গোলা বলা হয় ৷ তাই কৃষির দিকেই জোর দিতে চেয়েছিলেন বলে জানান বিদায়ী সাংসদ । পাঁচ বছরে সাংসদ তহবিলে তিনি 17 কোটি টাকা পেয়েছেন । তার মধ্যে কয়েক হাজার টাকা বাদ দিয়ে বাকি প্রায় সমস্তটাই উন্নয়ন খাতে খরচ করতে পেরেছেন বলে দাবি তাঁর ।
সুনীল মণ্ডলের মতে, "সাংসদ হিসেবে কাটোয়ার মালঞ্চ ব্রিজ তৈরি আমার জীবনে বড়ো কাজ বলে মনে করি । দশ থেকে বারোটা গ্রামের বাসিন্দারা আমার কাছে দাবি করেছিল ওই ব্রিজ যদি না করে দেওয়া হয় তাহলে তারা ভোট বয়কট করবে । আমি তাদের কথা দিয়ে বলেছিলাম চেষ্টা করব । সেই কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি । এটা আমার কাছে খুবই আনন্দের । এছাড়া প্রতিটা ব্লক অঞ্চলে শ্মশান, পুকুরের ঘাট, শৌচালয়, বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর পরিবারের থাকার জন্য বিশ্রামাগার, বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে মানুষের বসার জায়গা, বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা, স্ট্রিট লাইট, সাবমার্সিবলের ব্যবস্থা করেছি । যেহেতু এটা কৃষিপ্রধান এলাকা তাই রাতের দিক থেকে চাষিদের ব্যবসা শুরু হয় । সেই জন্য আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে ।"
তিনি আরও বলেন, "তিনটে কলেজ তৈরি হয়েছে । এছাড়া কালনাতে একটা বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করেছি । সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট প্রায় এক দেড় কিলোমিটারের রাস্তা তৈরি করেছি । কাটোয়ার গোপীনাথ মন্দির এলাকায় রাস্তা আলোর ব্যবস্থা করেছি । পূর্বস্থলী 2 ব্লকে প্রায় 1 কোটি 2 লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়াম তৈরি হচ্ছে । পূর্বস্থলী এলাকায় প্রায় 70 লক্ষ টাকা খরচে ফ্লাড সেন্টার তৈরি করেছি । আগে বন্যা হলে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে আশ্রয় নিতে হত । এখন ফ্লাড সেন্টারে অনেকগুলো ঘর করা হয়েছে। ফলে সেখানে একসঙ্গে অনেক মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন । আপাতত সেই সেন্টারগুলো পঞ্চায়েত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাড়া দিচ্ছে । কাটোয়া কালনা হাসপাতালে সিটি স্ক্যান মেশিন বসানো হয়েছে । আমাদের টাকা তো সীমিত । 17 কোটি টাকা পেয়েছি । প্রায় 100 শতাংশ টাকাই খরচ করতে পেরেছি ।" সাংসদের মতে, কেন্দ্রীয় সহায়তা তো পশ্চিমবাংলায় নেই । তাঁরা আন্দোলন করেও অনেক কিছু পাননি । যেমন প্রতিবন্ধীদের সহায়তা করার জন্য যে সরঞ্জাম প্রয়োজন সেটা এখনও মেলেনি । বিভিন্ন রাজ্যের 15-16 জন বিরোধী দলের সাংসদ বঞ্চিত হচ্ছেন ।