বারাসত, 27 মার্চ: পাঁচ বার লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের কাকলি ঘোষ দস্তিদার ৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে তাঁর উপরেই ভরসা রেখেছে তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ বারাসত লোকসভা কেন্দ্রে 1977 থেকে 1996 পর্যন্ত এই কেন্দ্রে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছে 'সিংহ' বাহিনী ফরওয়ার্ড ব্লক ৷ এরপর 1998 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল এই কেন্দ্রটি ছিনিয়ে নেয় ৷ তৃণমূলের প্রথম সাংসদ হন চিকিৎসক রঞ্জিত পাঁজা ৷
তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে 2009 সাল থেকে টানা 15 বছর এই কেন্দ্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী থেকেছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার ৷ 1 জুন ভোট বারাসত কেন্দ্রে ৷ এদিনের ভোটে নতুন সাংসদ নির্বাচিত করবে বারাসতবাসী ৷ বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত একদিকে রয়েছে হাবরা, অশোকনগর, দেগঙ্গার মতো গ্রামীণ অঞ্চল ৷ অন্যদিকে রয়েছে আধুনিক রাজারহাট নিউটাউন, বিধাননগর, মধ্যমগ্রাম- যে এলাকাগুলি দিনে দিনে শহুরে অত্যাধুনিকতায় সেজে উঠছে ৷
এই কেন্দ্রে কাকলি ঘোষ দস্তিদারের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার ৷ বিগত পাঁচ বছরে তাঁর কেন্দ্রে তৃণমূল সাংসদ কী কাজ করলেন ? কী-ই বা বাকি রইল ? সাংসদ তহবিলের কত টাকা খরচ করতে পারলেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার ৷ এই সবের খোঁজ নিল ইটিভি ভারত ৷ রইল সাংসদের রিপোর্ট কার্ড ৷
সূত্রে জানা গিয়েছে, সাংসদ তহবিলের বরাদ্দকৃত মোট 17 কোটি টাকার মধ্যে 10 কোটি 67 লক্ষ টাকার কাজের প্রস্তাব রেখেছিলেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার ৷ এর মধ্যে 9 কোটি 46 লক্ষ টাকার অনুমোদন পাওয়া গিয়েছিল ৷ যদিও সেই টাকার মধ্যে 5 কোটি 53 লক্ষ টাকার বেশি খরচই করতে পারেননি বারাসতের তৃণমূল সাংসদ ৷ অর্থাৎ কাজের নিরিখে পারফরমেন্সের অনুপাত 56 শতাংশ ৷
কী কী কাজ হয়েছে ?
- বারাসত এবং অশোকনগর বিধানসভা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে সিসিটিভি বসানো হয়েছে ৷ এর জন্য সাংসদ তহবিল থেকে বরাদ্দ করা হয়েছে 97 লক্ষ টাকা ৷
- সাংসদ তহবিল থেকে 1 কোটি 3 লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে সোলার লাইট বসেছে বারাসত এবং দেগঙ্গা বিধানসভার গ্রামীণ এলাকায় ৷
- বারাসত পৌরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লী বয়েজ স্কুল চত্বরে সিস্টার নিবেদিতা পলি ক্লিনিক সেন্টার ও মাতৃসদনের উন্নয়নে 50 লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে সাংসদ তহবিল থেকে ৷
- দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার যাদবপুরে কমিউনিটি সেন্টার তৈরি হয়েছে সাংসদ তহবিলের টাকাতে ৷ সেটি দুর্যোগের সময় ত্রাণশিবির কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে ৷
- বারাসত পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের পায়োনিয়ার পার্কে সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র তৈরিতে বরাদ্দ করা হয়েছে 26 লক্ষ টাকা ৷ সেখানেও ভূমিকা রয়েছে বিদায়ী সাংসদের ৷
- এছাড়া নদীভাগ এলাকায় কবরস্থানের প্রাচীর নির্মাণ, সংসদীয় একাধিক এলাকায় ঢালাই রাস্তা তৈরি হয়েছে ৷ অ্যাম্বুলেন্স প্রদানও হয়েছে ৷
প্রাপ্তির পাশাপাশি কী কী কাজ হয়নি-
- দীর্ঘদিন সাংসদ থাকলেও বারাসতের যানজট সমস্যা মেটেনি ৷ এনিয়ে স্থানীয় সাংসদকে তেমন কোনও ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ৷ ফলে যানজটের ফাঁস থেকে আজও রেহাই মেলেনি বারাসতবাসীর ৷
- জঞ্জাল মুক্ত বারাসত শহর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বারসত কেন্দ্রে নির্দিষ্ট কোনও ডাম্পিং গ্রাউন্ড গড়ে উঠেনি ৷ তাই জঞ্জালের দুর্গন্ধে শহর ও শহরতলির বাসিন্দাদের ৷ মাঝেমধ্যে এই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ এনিয়ে সাংসদের বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন বিরোধী শিবির ৷
- হাবরা শহরের যানজট সুরাহায় উড়ালপুলের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আজও মুখ দেখেনি ৷ এনিয়ে সাংসদের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে শহরবাসী ৷
- দেগঙ্গার মতো আর্সেনিকপ্রবণ এলাকায় ঘরে ঘরে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও সেই কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি ৷ এনিয়ে গড়িমসি করার অভিযোগ উঠেছে ৷ এক্ষেত্রেও সাংসদ ব্যর্থ বলে দাবি এলাকাবাসীর ৷
- এখনও বেশকিছু এলাকায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল বেশ খারাপ ৷ সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা মেলেনা বলে অভিযোগ ৷ সেই সমস্ত জায়গায় স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নত করতে স্থানীয় সাংসদের উদ্যোগ সেভাবে দেখা যায়নি বলে দাবি করছেন অনেকেই ৷
- বিগত 15 বছর ধরে সাংসদ থাকায় বারাসত সংসদীয় এলাকায় আরও অনেক উন্নয়নের কাজ হতে পারত বলে মনে করছেন বাসিন্দাদের একাংশ।কিন্তু,তা হয়নি বলেই দাবি তাঁদের।