কলকাতা, 4 জুলাই: আড়িয়াদহ-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত জয়ন্ত সিংয়ের ভাই প্রিয়ন্ত সিংয়ের দাবি, তাঁর দাদাকে ফাঁসানো হচ্ছে ৷ সোমবার রাতে আড়িয়াদহে মা-ছেলেকে মারধরের ঘটনার সময় তাঁর দাদা ঘটনাস্থলেই ছিলেন না বলে দাবি করেছেন প্রিয়ন্ত ৷ কিন্তু এই ঘটনার জেরে তিনি ও তাঁর পরিবার যে মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, সেকথা স্বীকার করে নিয়েছেন ভবানীপুর ক্লাবের গোলরক্ষক প্রিয়ন্ত সিং ৷ তার পরও মঙ্গলবার কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন তিনি ৷
আড়িয়াদহে-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত জয়ন্ত সিংয়ের ভাই প্রিয়ন্ত সিংয়ের বক্তব্য (ইটিভি ভারত) উল্লেখ্য, সোমবার রাতে আড়িয়াদহে মা-ছেলেকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে ৷ সেই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল নেতা জয়ন্ত সিংয়ে নাম জড়ায় ৷ তাঁকেই এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বলে দাবি করা হয় ৷ তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে গ্রেফতার করে বেশ কয়েকজনকে ৷ বুধবার রাতে ধরা পড়েন জয়ন্ত সিং ৷
কিন্তু তাঁর ভাই তথা ভবানীপুর ক্লাবের ফুটবলার প্রিয়ন্ত সিংয়ের দাবি, “আমার দাদা ঘটনাস্থলে ছিলই না । আমার দাদাকে দেখা যাচ্ছে না মারপিট করতে । ওরা যা বলছে, তাই দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বেশি করে দেখানো হচ্ছে । ওরা বলছে আমার দাদা ওখানে ছিল । যে ভিডিয়োটা দেখানো হচ্ছে, সেটা অস্পষ্ট । সেখানে দাদা নেই । ওরা বলছে জয়ন্ত সিং বারণ করতে পারত । মারপিটটা শুরু হয়ে গিয়েছে । বারণটা করবে কোথা থেকে ? থাকলে তো বারণ করবে । আমার দাদার খেয়েদেয়ে কি কাজ নেই, যে বাচ্চাদের গন্ডগোল করবে ? আমার দাদাকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে ।’’
কারা ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে, সেই বিষয়টিও জানিয়েছেন ৷ বুম্বা নামে একজনের বিরুদ্ধে তিনি এই নিয়ে অভিযোগ করছেন ৷ পুরোটাই যে পরিকল্পিত, সেই সংক্রান্ত একটি অডিয়ো ক্লিপও তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেন প্রিয়ন্ত ৷ তিনি বলেন, ‘‘ওদের পরিকল্পনা ছিল এদের এক দুটো ছেলেকে মারবে । এটা ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিল । মারপিট শুরু হলে তো কেউ বলবে না কেন মারছিস । এরমধ্যে ওই বাচ্চা ছেলেটির মা এসে পড়ে । মারপিটের মধ্যে পড়ে মায়েরও লেগে গিয়েছে ।”
জয়ন্ত সিং-কে প্রথমে কামারহাটির বিধায়ক জয়ন্ত সিংয়ের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করা হয়েছিল বিভিন্ন মহল থেকে ৷ মদন মিত্রের সঙ্গে জয়ন্তর কিছু ছবিও প্রকাশ্যে আসে ৷ যদিও মদন মিত্র নিজেই জয়ন্তর গ্রেফতারির দাবিতে সরব হয়েছিলেন ৷ এই প্রসঙ্গে প্রিয়ন্তের বক্তব্য, ‘‘মদন মিত্র আমাদের বিধায়ক । উনি তো বলেননি জয়ন্ত সিং মূল অভিযুক্ত । উনি তো সঠিকটা জানেন না । এরা যা বলছে, তা মদনদার কানে তুলে দেওয়া হচ্ছে । ভুল না ঠিক, জয়ন্ত সিং ওখানে ছিল কি ছিল না, তা প্রমাণ করার দায়িত্ব তো পুলিশ-প্রশাসনের । এফআইআর-এ যে কারও নাম দেওয়া যায় । ওখানে 15 জনের নাম দেওয়া হয়েছে । আমাদের ক্লাবের তিন চারজন ছিল ওখানে । অতরাতে কে আসবে ? এরা ওখানে মদ খেয়ে 12-14 জন ছিল ওখানে । অডিয়োতে ওরা বলছে মেরে দেব । মেরে দিলে আশ্রয় দেওয়ার কথাও বলছে । এখন যেই মার খেয়ে গিয়েছে৷ তাই এখন পুলিশে ডায়েরি করে মিডিয়া হাইপ করছে ।”
তবে পারিবারিক টানাপোড়েনের মধ্যেও ফুটবল থেকে তাঁর যাতে ফোকাস সরে না যায়, সেই বিষয়ে নজর রয়েছে বেলঘরিয়া রথতলার বাসিন্দা এই ফুটবলারের ৷ মঙ্গলবার তাঁর ক্লাব ভবানীপুর কলকাতা লিগে ড্র করেছে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ৷ সেই ফলাফলে প্রিয়ন্তের ভূমিকা ছিল অনেক ৷ পরিবর্ত হিসেবে নেমে তিনি মোহনবাগানের একাধিক আক্রমণ রুখে দিয়েছিলেন ৷ তবে মানসিক টানাপোড়েন যে রয়েছে, তা অস্বীকার করছেন না প্রিয়ন্ত ৷
ভবানীপুরের এই গোলকিপারের কথায়, ‘‘আমার চাপটা বুঝতে পারছ । আমার কলকাতা লিগের ম্যাচ চলছে ৷ মোহনবাগানের সঙ্গে ম্যাচ ছিল । তার আগে এই গন্ডগোল । এর ওপর আমার অফিস আছে । আমি খেলায় মনসংযোগ করব ? না এই সব নিয়ে পড়ে থাকব বলো ?’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি এলাকায় থাকেন না ৷ খেলার জন্য বাইরে থাকেন ৷
তাঁর অনুরোধ, ‘‘আমি সংবাদমাধ্যমের কাছে হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করছি সত্যিটা বলুন । যেখানে জয়ন্ত সিং উপস্থিত নেই । জয়ন্ত সিংয়ের ভূমিকা নেই । বলা হচ্ছে জয়ন্ত সিং না কি মেরেছে । যাদের কথা বলা হচ্ছে তাদের কাছে ফোন নম্বর আছে কি না সন্দেহ । কিছু লোক চায় না আমার দাদা যে ভালো কাজ করছে সেটা চলুক । তৃণমূল এখন তো সবাই করছে । এটা তো সরকারি কোনও ব্যাপার নয় । আমি বলছি না দাদার হয়ে লেখো । আমি বলছি যা সত্যিই সেটাই বলো ।”