দুর্গাপুর, 24 অগস্ট: বন দফতরের কর্মীদের সামনেই হাতির পেটে জ্বলন্ত শলাকা ছুঁড়ে নৃশংস হত্যার অভিযোগ ৷ ঝাড়গ্রামের সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় রাজ্য তথা দেশ। এবার সেই নৃশংস ঘটনার বিচার চেয়ে পথে নামলেন পশুপ্রেমীরা ৷ এলাকার ডিএফওর পদত্যাগ-সহ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি তুললেন তাঁরা। সেইসঙ্গে সমস্ত বন্যপ্রাণীদের সঠিক নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা।
ঝাড়গ্রামে হাতি হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে পথে পশুপ্রেমীরা (ইটিভি ভারত) দুর্গাপুরের বেনাচিতির পাঁচমাথা মোড় থেকে এই প্রতিবাদ মিছিল শুরু করেন পশুপ্রেমীরা। সম্পূর্ণ বেনাচিতি বাজার জুড়ে চলে মিছিলটি। শেষ হয় দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি মোড়ে। স্লোগান তোলা হয়, "চলো আবার মেলায় পা, চিৎকার হোক, মা হাতিটাও চাইছে বিচার।" তাঁদের এই প্রতিবাদ সম্পর্কে পশুপ্রেমী তারাশঙ্কর নাগ বলেন, "আমাদের আজ মানবিকতার মিছিল। অন্তঃসত্ত্বা হাতিটিকে গরম শলাকা বিদ্ধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে চরম নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে হাতিটিকে।"
তিনি আরও অভিযোগ করেন, "ঝাড়গ্রামে প্রতিনিয়ত হাতি দেখা যায়। সেই হাতিদের তাড়ানোর জন্য হুলাপার্টি রয়েছে। সেই হুলাপার্টি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। আর বন দফতরের যথেষ্ট কর্মীও নেই। আমরা এই ঘটনার জন্য বনদফতরকেই দায়ী করব। আমরা ওই এলাকার ডিএফওর পদত্যাগ চাইছি। কেন নির্মমভাবে হত্যা করা হল হাতিটিকে ? পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি তুলছি। সেইসঙ্গে আরজি করের নৃশংস ঘটনারও আমরা বিচার চাইছি ৷" ঝাড়গ্রামের ঘটনার নিন্দায় সরব গোটা দেশ ৷ অভিযোগ তিন দিন ধরে এই হাতিটিকে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখা গেছে। এই ঘটনায় যে বা যারা দোষী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি দুর্গাপুরের পশুপ্রেমীদের।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা দিবসের সকালে দুবরাজপুর হয়ে শাবক-সহ পাঁচটি হাতির একটি দল ঝাড়গ্রাম শহরের বিদ্যাসাগরপল্লী এলাকায় ঢুকে পড়ে ৷ হাতির দলে থাকা একটি পুরুষ হাতির আক্রমণে একজন শহরবাসীর মৃত্যু হয় ৷ তারপরেই বন দফতর ঘুম পাড়ানি গুলি করে পুরুষ হাতিটিকে পাকড়াও করে জঙ্গলে ছেড়ে দেয় ৷ বাকি চারটি হাতি আশ্রয় নেয় নতুন জেলা শাসকের অফিসের পাশে থাকা পরিত্যক্ত প্রাণিসম্পদ দফতরে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা একটি ছোট্ট জঙ্গলে ৷ হাতি দেখার জন্য শহরবাসীর ভিড় উপছে পড়েছিল চারিদিকেই ৷ এই অবস্থায় বন দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সূর্যের আলো নামার পর এই চারটি হাতিকে ড্রাইভ করে জঙ্গলে পাঠানো হবে। কিন্তু বিকেলের পর চিত্রটা বদলে যায় ৷
দলটির সঙ্গে শাবক থাকায় স্ত্রী হাতিটি উত্তেজিত অবস্থায় ছিল ৷ হাতিটিকে বাগে আনার জন্য হুলা পার্টির এক সদস্য পরিত্যক্ত একটি একতলা বাড়ির উপর উঠে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রীর হাতিকে জ্বলন্ত শলাকা ছুড়ে মারে ৷ যা হাতেটির মেরুদন্ডে গিয়ে আটকে যায় ৷ মেরুদন্ডে জ্বলন্ত হুলার শলাকা ঢুকে যেতেই কাতর চিৎকার শুরু করে স্ত্রী হাতিটি ৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পিছনের দুটি পা অবশ হয়ে যায়। তারপরেই দীর্ঘ চেষ্টার পর নিজে শুঁড় দিয়ে শলাকাটিকে ধরে শরীরের বাইরে থেকে বার করে ছুড়ে ফেলে দেয় স্ত্রী হাতিটি ৷