মালদা, 29 জুলাই: সদ্যোজাতের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সোমবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল ৷ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে হাসপাতালে যেতে হয় রতুয়া থানার পুলিশকে ৷ অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স দেরিতে আসায় সময় মতো ওই সদ্যোজাতকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি ৷ ফলে সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে ওই শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি ৷ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল ৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন রতুয়া 1 নম্বর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ৷ তিনি সাফ জানিয়ে দেন, অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের এমন গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে না ৷
রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে সদ্যোজাতর মৃত্যু (ইটিভি ভারত) জানা গিয়েছে, তীব্র প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে রবিবার বিকেলে রতুয়ার মহাদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা ময়না শাহজাদি খাতুনকে রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ সোমবার ভোরে তিনি একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন ৷ কিন্তু জন্মের পরই সদ্যোজাতের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে ৷ মা-সহ সন্তানকে মালদা মেডিক্যালে রেফার করে দেন সেখানকার চিকিৎসকরা ৷ কিন্তু তারপরেই সমস্যার শুরু ৷ সেখানে একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনও চালক সদ্যোজাতকে মালদা নিয়ে যেতে রাজি হননি বলে অভিযোগ প্রসূতির পরিবারের ৷ অনেক টালবাহানার পর শেষ পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে একজন অ্যাম্বুল্যান্স চালক মালদার হাসপাতালে মা ও সদ্যজাতকে নিয়ে আসেন ৷ কিন্তু ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে সদ্যোজাতর ৷
প্রসূতির বউদি নাবিনা খাতুন বলেন, "আজ ভোর পাঁচটা নাগাদ শিশুর জন্ম হয় ৷ কিন্তু জন্মের পর বাচ্চা কিছুতেই কাঁদছিল না ৷ চিকিৎসকরা জানান, বাচ্চাকে মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যেতে হবে ৷ সে কথা শুনে আমরা অ্যাম্বুল্যান্স চালককে ফোন করি ৷ এখন আসছি, খানিক বাদে আসছি বলতে বলতে শেষ পর্যন্ত এক ঘণ্টা দেরিতে আসেন চালক ৷ কিন্তু ততক্ষণে বাচ্চা মারা গিয়েছে ৷ নিশ্চিত হতে আমরা বাচ্চাকে এখানেই অফিস ঘরে নিয়ে যাই ৷ 30 মিনিট পর সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাচ্চা আর নেই ৷ এখানে অনেক অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ মালদা যাওয়ার জন্য চালক আমাদের কাছে 800 টাকা দাবি করেছিল ৷ আমরা ওই টাকা দিতেও চেয়েছিলাম ৷ অন্য অ্যাম্বুল্যান্স চালকরাও আমাদের মালদা নিয়ে যেতে চায়নি ৷”
প্রসূতির দাদা শেখ ছোটন বলেন, “বোনের জন্য গতকাল সারা রাত এখানেই ছিলাম ৷ রাতে ওর বাচ্চা হয়নি ৷ আজ ভোরে হয়েছে ৷ কিন্তু বাচ্চার পরিস্থিতি খারাপ থাকায় ওকে মালদা মেডিক্যালে রেফার করে দেওয়া হয় ৷ সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল ৷ চিকিৎসকরাও সঠিক কাজ করেছিলেন ৷ হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্সের ইউনিয়ন অফিস রয়েছে ৷ সেখান থেকে আমাকে বলা হয়েছিল, দু’মিনিটের মধ্যে গাড়ি চলে আসবে ৷ সে কথা শুনে আমি বাচ্চা-সহ সবাইকে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে আসি ৷ কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স আর আসেনি ৷ এখান থেকে একজন অ্যাম্বুল্যান্স চালকও মালদা যেতে রাজি হননি ৷ এক ঘণ্টা পর শেষ পর্যন্ত অ্যাম্বুল্যান্স আসে ৷ কিন্তু ততক্ষণে বাচ্চা মারা গিয়েছে ৷ এর দায় কে নেবে ?”
এ নিয়ে রতুয়া 1 নম্বর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রাকেশ কুমার বলেন, "নিয়ম অনুযায়ী কোনও হাসপাতালের অধীনে থাকা প্রতিটি অ্যাম্বুল্যান্সকে পেশেন্ট কল আসার সঙ্গে সঙ্গেই যেতে হবে ৷ পরে হাসপাতাল থেকে তার ভাউচার দিয়ে দেওয়া হয় ৷ প্রসূতি এবং এক বছর বয়সের নীচে থাকা বাচ্চাদের জন্য নিশ্চয় যান রয়েছে ৷ 102 নম্বরে ফোন করলে সেই অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায় ৷ এখানে ঠিক কী ঘটেছিল, আমার জানা নেই ৷ আমি দেখছি ৷ যদি অভিযোগ সত্যি হয়, তবে ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালককে ছাড়া হবে না ৷" তবে এ নিয়ে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স চালক কিংবা তাঁদের ইউনিয়নের কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি ৷