ঝাড়গ্রাম/দাঁতন, 4 ডিসেম্বর: রাজ্যের ভাণ্ডারে আলু প্রায় শেষের মুখে । জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ের আগে নতুন আলু উঠবে না বাজারে ৷ এই সংকটের মুহূর্তে তাই ভিনরাজ্যে আলু রফতানি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার ৷ কিন্তু, সেই নির্দেশ অমান্য করে রাতের অন্ধকারে ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশায় আলু পাচারের অভিযোগ উঠেছে ৷ আলুর সেই চোরাচালান রুখতে ভোররাতে অভিযানে নামলেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না ৷
মঙ্গলবার রাতে প্রথমে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায় খড়গপুর-বালাসোর জাতীয় সড়ক, দাঁতনের বামনপুকুর ও সোনাকোনিয়াতে তিনটি নাকা পরিদর্শন করেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না ৷ সেখানে পুলিশের সঙ্গে জাতীয় সড়ক দিয়ে ওড়িশার দিকে যাওয়া প্রতিটি ট্রাক পরীক্ষা করেন তিনি ৷ প্রতিটি গাড়িতে থাকা জিনিসপত্রের চালান পরীক্ষা করে দেখা হয় ৷
ভোররাতে বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমানায় মন্ত্রী (নিজস্ব ভিডিয়ো) বেচারাম মান্না সেখান থেকে সোজা চলে যান ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের চিল্কিগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনামুখী গ্রামে ৷ সেখানে ভোররাত থেকে জেলার পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে ঝাড়খণ্ডগামী ট্রাকগুলি পরীক্ষা করা হয় ৷ উল্লেখ্য, সোনামুখী গ্রামের মধ্যে দিয়ে দু’টি রাস্তা দু ভাগ হয়ে ঝাড়খণ্ড চলে যাচ্ছে ৷ একটি রাস্তা ঝাড়খণ্ডের মানুষমুড়িয়া হয়ে ওড়িশার দিকে যাচ্ছে ৷ অন্য একটি রাস্তা চাকুলিয়া হয়ে সরাসরি ঝাড়খণ্ডে ঢুকছে ৷ অভিযোগ, জঙ্গলে ঘেরা এই রাস্তা দিয়ে রোজ রাতে আলু পাচার হয়ে যাচ্ছে ৷
আলু পাচার রুখতে ঝাড়গ্রামে জঙ্গলের রাস্তায় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান মন্ত্রী বেচারাম মান্নার ৷ (নিজস্ব চিত্র) সেই আলু পাচার রুখতেই পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে অভিযানে নামেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী ৷ ভোরের আলো ফোটার পর, মন্ত্রী এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি সোনামুখী গ্রামের গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাও বলেন ৷ এই জঙ্গল পথের রাস্তা দিয়ে আলু গাড়ি চলছে কি না তা জিজ্ঞেস করেন তিনি ৷ তবে, গ্রামবাসীরা দাবি করেছেন ওই রাস্তা দিয়ে আলুর গাড়ি যাতায়াত করে না ৷
ভোররাতে খড়গপুর-বালাসোর জাতীয় সড়কে অভিযান মন্ত্রী বেচারাম মান্নার ৷ (নিজস্ব চিত্র) পরে মন্ত্রী জানান, "আমাদের কাছে তথ্য ছিল জামবনি-সহ বিভিন্ন সীমানা লাগোয়া এলাকা দিয়ে ঝাড়খণ্ড হয়ে ওড়িশার দিকে আলুর গাড়ি চলে যাচ্ছে ৷ একবার চাক্ষুস দেখার জন্য এসেছিলাম ৷ হিজলি হয়ে সোনামুখী গ্রামে এসেছিলাম ৷ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বললাম ৷ তেমন কোনও খবর নেই ৷ আমরা সীমানায় নজরদারি রাখছি ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যের মানুষের যতটা আলুর প্রয়োজন, তা রেখে বাড়তি আলু বাইরে পাঠাতে হবে ৷
মজুত থাকা আলু নিয়ে মন্ত্রী বলেন, "2 ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী আমাদের কাছে 6 লক্ষ 2 হাজার মেট্রিক টন চালু রয়েছে ৷ আমাদের 45 দিন আলু চালাতে হবে ৷ দানা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আলু চাষ পিছিয়ে গিয়েছে ৷ ডিসেম্বরের 25 তারিখ যে নতুন আলু পাওয়া যেত, তা জানুয়ারির 10-15 তারিখের দিকে পাওয়া যাবে ৷ আমাদের কাছে বর্তমানে যথেষ্ট পরিমাণে আলু রয়েছে ৷ রাজ্যের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রাজ্যের মানুষের কথা না ভেবে চোরাপথে ভিনরাজ্যে চালান করছে ৷"
পুলিশের কাজেও তিনি সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী ৷ বেচারাম বলেন, "ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার খুবই ভালো কাজ করছেন ৷ এলাকার সীমানায় নজরদারি রাখছেন তাঁরা ৷ আমাদের রাজ্যের মানুষের চাহিদা মিটলে, তবেই বাইরের রাজ্যে আলু রফতানি করা হবে ৷"