মালদা, 8 অক্টোবর: ধীরে ধীরে কমছে গঙ্গার জলস্তর ৷ সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতিরও উন্নতি হতে শুরু করেছে ৷ কিন্তু, বিপদ বাড়ছে অন্যদিকে ৷ জলস্তর কমার সঙ্গে, ভাঙন শুরু হয়েছে গঙ্গার ৷ এবার গঙ্গার ভাঙন ছোবল মেরেছে মানিকচক ব্লকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কামালতিপুরে ৷ দু’মাস ধরে বন্যায় ডুবে ছিলেন এই গ্রামের মানুষ ৷ এবার শুরু ভাঙন ৷ গঙ্গার সাঁড়াশি আক্রমণে দিশেহারা গ্রামবাসী ৷
চলতি বছরের প্রথম থেকেই মানিকচক ও রতুয়া 1 নম্বর ব্লকে গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়েছিল ৷ প্রথমদিকে বেশি নদী পাড় ভেঙেছে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৷ মানিকচকের গোপালপুর, উত্তর চণ্ডীপুরেও অল্পবিস্তর নদী ভাঙন হয়েছে ৷ এরই মধ্যে বন্যা দেখা দেয় ৷
গঙ্গার ভাঙনের গ্রাসে পড়ার আগে পরিত্রাণের চেষ্টা বাসিন্দাদের ৷ (নিজস্ব চিত্র) গঙ্গার জলে তলিয়ে যায় মানিকচকের উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুর, হীরানন্দপুর ও গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ৷ বানভাসি হন কয়েক লাখ মানুষ ৷ অনেকে সরকারি ত্রাণ শিবিরে, বেশিরভাগই উঁচু জায়গায় ত্রিপল টাঙিয়ে বসবাস করছেন ৷ এখনও বেশিরভাগ জায়গায় ঘরবাড়ি থেকে জল নামেনি ৷ এবারের পুজোটা যে অস্থায়ী আশ্রয়েই কাটাতে হবে, তা নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই দুর্গতদের ৷
নদী ভাঙন মূলত দু’বার দেখা যায় ৷ জলস্তর বাড়া এবং কমার সময় ৷ জলস্তর কমার সময় নদী ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেড়ে যায় ৷ কামালতিপুরে ঠিক সেটাই হয়েছে ৷ সোমবার দুপুর থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে ইতিমধ্যে নদীগর্ভে চলে গিয়েছে 300 মিটারেরও বেশি এলাকা ৷ অস্থায়ী আশ্রয়ে থেকে চোখের সামনে নিজেদের জমি তলিয়ে যেতে দেখেছেন জমির মালিকরা ৷
তাঁদেরই একজন মহম্মদ কুতুবুদ্দিন বললেন, "চোখের সামনে সব জমি গঙ্গায় চলে গেল ৷ এরপর কীভাবে বাঁচব জানি না ৷ বন্যায় ঘরছাড়া হয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি ৷ জল নামলে ঘরেও ফিরে যাব ৷ কিন্তু, পেট কীভাবে চলবে ? যেভাবে নদী পাড় কাটছে, তাতে ঘর যেতেও বেশি সময় নেই ৷ আমরা সরকারের কাছে কোনও ত্রাণ চাই না ৷ আমাদের শুধু পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক ৷"
গঙ্গা ভাঙন থেকে বাঁচতে বাড়ি ভেঙে সরছেন লোকজন ৷ (নিজস্ব চিত্র) গ্রামে যাঁদের বাড়িতে বন্যার জল ঢোকেনি, তাঁরাও সময় থাকতে ঘরবাড়ি ভাঙতে শুরু করেছেন ৷ তাঁদেরই একজন মহম্মদ নইমুদ্দিন বলেন, "পরিস্থিতি যে এতটা খারাপ হবে, বুঝতে পারিনি ৷ বন্যার জল আমার ঘরে ওঠেনি, সেটাই বাঁচোয়া ৷ সময় থাকতে ঘর ভেঙে দেওয়া ভালো ৷ তাতে হয়তো ইট-কাঠ কিছু পাওয়া যাবে ৷ নদী যেভাবে পাড় কাটতে শুরু করেছে, দু’একদিনের মধ্যেই আমার ভিটে চলে আসবে ৷ এখন কাউকে এখানে দেখা যাচ্ছে না ৷ বিধায়ক, সাংসদ, এমনকি প্রশাসনের কর্তারাও কেউ আসেননি ৷ আমরা কিছু চাই না ৷ শুধু বাড়ি তৈরির জন্য জমি দেওয়া হোক ৷"
কামালতিপুর গ্রামে প্রায় সাড়ে পাঁচশো পরিবারের বসবাস ৷ এর মধ্যে দু’শোর বেশি পরিবার ঘরবাড়ি ভেঙে অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার দিন গুনছে ৷ মানিকচকের বাসিন্দা, সিআইটিইউ-এর জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, "চলতি মরশুমে মানিকচক ব্লকে দু’শোরও বেশি বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে ৷ আমরা প্রশাসনের কাছে দুর্গতদের পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছি ৷"
ফোন না-ধরায় প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি স্থানীয় বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের ৷ তবে, সাংসদ ইশা খান চৌধুরী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তিনি জেলার বাইরে রয়েছেন ৷ জেলায় ফিরেই তিনি কামালতিপুর যাচ্ছেন ৷ দুর্গত মানুষজনের দাবি তিনি সংসদেও তুলে ধরবেন ৷
জেলাশাসক নিতীন সিংহানিয়া বলেন, "পরিস্থিতির উপর প্রশাসন নজর রেখেছে ৷ দুর্গতদের যাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়, তার জন্য মানিকচক ব্লক প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ নদীর জল কমলেই ভাঙন রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে ৷"