পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

আরজি কর-কাণ্ডের পর প্রকাশ্যে স্বাস্থ্যে দুর্নীতির বহু অভিযোগ, ড. সুশান্ত রায়কে নিয়ে সরব জলপাইগুড়ি - RG Kar Doctor Rape and Murder - RG KAR DOCTOR RAPE AND MURDER

RG Kar Doctor Rape and Murder: স্বাস্থ্য বিভাগের উত্তরবঙ্গের প্রাক্তন ওএসডি ড. সুশান্ত রায় আরজি কর-কাণ্ডে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ তবে তাঁর বিরুদ্ধে আগেও অনেক বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ৷ আরজি কর-কাণ্ডের পর সেই নিয়েই ফের হইচই পড়েছে ৷

RG Kar Doctor Rape and Murder
ড. সুশান্ত রায়কে নিয়ে সরব জলপাইগুড়ি (ইটিভি ভারত)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 22, 2024, 5:37 PM IST

জলপাইগুড়ি, 22 অগস্ট: আরজি কর-কাণ্ডের পর স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে ৷ যার বেশিরভাগই রয়েছে ওই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ৷ এই ঘটনায় যাঁরা জড়িত বলে যাঁদের নামে অভিযোগ উঠেছে, তাঁদেরই একজন ড. সুশান্ত রায় ৷ তাঁর বিরুদ্ধে অতীতে যে অভিযোগগুলি উঠেছিল, সেগুলি নিয়েই ফের হইচই শুরু হয়েছে ৷ যদিও অভিযোগকারীদের গুরুত্ব দিতে নারাজ ড. সুশান্ত রায় ৷

আরজি কর-কাণ্ডের পর প্রকাশ্যে স্বাস্থ্যে দুর্নীতির বহু অভিযোগ, ড. সুশান্ত রায়কে নিয়ে সরব জলপাইগুড়ি (ইটিভি ভারত)

চোখের ডাক্তার থেকে উত্তরবঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি ৷ প্রভাবশালী ডাক্তারবাবু । সেই প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক বেনিয়ম-স্বজনপোষণ করার অভিযোগ ওঠে ড. সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে ৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে কোভিড অতিমারীর সময় থেকে ৷ অভিযোগ ওঠে, প্রভাব খাটিয়ে তিনি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার স্বাস্থ্য বিভাগগুলিতে নিজের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করেন ৷ তার পর তিনি স্বাস্থ্য় দফতরে উত্তরবঙ্গের ওএসডি হয়ে যান ৷ সেই সময়ই তাঁর বিরুদ্ধে বেনিয়ম ও স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে ৷

জলপাইগুড়িতে ড. সুশান্ত রায়ের বাড়ি (নিজস্ব চিত্র)

তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, তিনি প্রভাব খাটিয়ে নিজের ছেলের জন্য সরকারি বেতনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন ৷ তাঁর ছেলে ড. সৌত্রিক রায় ৷ সৌত্রিক যখন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এমডি পড়ছেন, সেই সময় তাঁকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে কন্ট্র্যাকচুয়াল মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে দেখানো হয় ৷ সেই জন্য সৌত্রিক মাসে মাসে সরকারের থেকে বেতনও পেয়েছেন ৷ প্রশ্ন ওঠে, চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করা একজন চিকিৎসক কীভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য সবেতন ছুটি পান ? শুধু তাই নয়, ছেলের হবু স্ত্রী, যিনি পেশায় নার্স, তাঁকে কে থ্যালাসেমিয়া ইউনিটে ছেলের সঙ্গেই ডিউটি করানোরও অভিযোগ উঠেছিল ।

এই নিয়ে হইচই পড়েছিল ৷ তদন্তও শুরু হয়৷ অভিযোগ, তার পরই তৎকালীন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বদলি করে দেওয়া হয় ৷ এই নিয়ে সেই সময়ই একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ইটিভি ভারত-এ ৷ তাছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও জমা পড়ে ৷ গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্রিন জলপাইগুড়ি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে 13 পাতার অভিযোগ করা হয় ড. সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে ৷

জলপাইগুড়িতে ড. সুশান্ত রায়ের বাড়ি (নিজস্ব চিত্র)

সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে ডাক্তারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরসও অভিযোগ করেছিল ৷ তারা রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, ডিরেক্টর অফ মেডিক্যাল এডুকেশন-সহ প্রশাসনের একাধিক অভিযোগ করা হয় ৷ সুশান্ত রায় ও তাঁর ছেলে সৌত্রিক রায়ের বিরুদ্ধে তদন্ত চাওয়া হয় ৷ ওই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক ড. সুবর্ণ গোস্বামীর কথায়, সুশান্ত রায় একজন আপাদ-মস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত লোক ৷

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা আগেও অভিযোগ করেছিলাম, একজন চোখের ডাক্তার হয়ে উনি কীভাবে উত্তরবঙ্গের সব জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে শুরু করে ডাক্তারদের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছেন । উনি সিকিউরিটি নিয়ে নীল বাতি লাগিয়ে ঘুরতেন । কোনোভাবেই অস্থায়ী ডাক্তার এমডি ছাত্র হিসেবে সরকারি বেতন পেতে পারেন না । কিন্তু সুশান্ত রায় তাঁর প্রভাব খাটিয়ে ছেলের মাইনে দেওয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন । সরকারি টাকা এই ভাবে তছরুপ করা যায় না ।’’

তাঁর দাবি, অভিযোগের তদন্ত করায় জলপাইগুড়ির তৎকালীন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. জগন্নাথ সরকারকে প্রভাব খাটিয়ে বদলি করা হয়েছিল । তদন্ত ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে । অভিযোগ জানানোর পরও সরকার কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷

একই সঙ্গে তিনি আরজি করের প্রসঙ্গ তুলেছেন ৷ অভয়ার নির্মম পরিণতির নেপথ্যেও সুশান্ত রায়ের যোগসূত্র আছে বলে তিনি দাবি করেছেন ৷ এই বিষয়ে অভিযোগ করা হবে বলেও ড. সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন ৷ তবে শুধু ড. গোস্বামী নন, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও আরজি কর-কাণ্ডে ড. সুশান্ত রায়ের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন ৷ ফলে জলপাইগুড়িতে নতুন করে হইচই পড়েছে ৷ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি নিয়ে ফের সরব হয়েছেন অনেকে ৷

ড. সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে চিকিৎসক সংগঠনের পুরনো অভিযোগপত্র (নিজস্ব চিত্র)

গ্রিন জলপাইগুড়ির অঙ্কুর দাস বলেন, ‘‘আমরা ইতিমধ্যেই ড. সুশান্ত রায়ের দুর্নীতি নিয়ে 13 পাতার অভিযোগ ইডির কাছে জমা করেছি । মুখ্যমন্ত্রী, জেলাশাসক ও এসজেডিএ (শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)-র কাছে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছি যে বাম সরকারকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসজেডিএ-র কমপ্লেক্সের জমি নিয়েছিলেন সুশান্ত রায় । সেখানে চোখের চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা করবেন বলে জমি নিয়েছিলেন । সেই জমিতে বাড়ি হিসেবে বানিয়ে ব্যবহার করেছেন । জমির চরিত্র বদল করেছেন ।’’

ড. সুশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে চিকিৎসক সংগঠনের পুরনো অভিযোগপত্র (নিজস্ব চিত্র)

তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘বর্তমানে সুশান্ত রায়ের বাড়ির সামনে ‘দৃষ্টিদান চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র’" বোর্ড লেখা থাকলেও সেখানে কোনও চিকিৎসা হয় না ৷ আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি জমিটি সরকার ফের নিয়ে ভবঘুরেদের জন্য শেল্টার হোমের ব্যবস্থা করুক । যেখানে ভবঘুরেরা থাকতে পারবেন ও দু’বেলা খেতেও পারবেন ।’’

যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তিনি কিন্তু অবসর নিয়েছেন ৷ তিনি এখন ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি । তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে ইটিভি ভারত-এর তরফে যোগাযোগ করা হয় ড. সুশান্ত রায়ের সঙ্গে ৷ তিনি জানান, কে কী বলল, তা নিয়ে উনি মাথা ঘামান না । যার যেখানে চিঠি পাঠানোর পাঠাতে পারে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details