কলকাতা, 13 এপ্রিল: পরিবারের সকলের সঙ্গে নিমন্ত্রণ বাড়ি খেতে গিয়েছিলেন 62 বছর বয়সি রাজারহাটের বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল । ভরপেট খাওয়াদাওয়া পর আচমকাই পেটের নীচ থেকে কিছু একটা যেন উপরের দিকে একটা ধাক্কা দেয়। প্রদীপবাবুর কথায় "যেন আমার পেটের ভিতরে বোম ফেটে গেল!" তবে ওই আওয়াজ তিনি ছাড়া আর কেউ টের পায়নি। তিনি নিজেও টের পাননি যে এক ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৷ রোগ এতটাই মারাত্মক যে শরীরের দুটি আলাদা জায়গা থেকে রক্ত চলাচলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ শুনে আঁতকে উঠতে হচ্ছে ৷ বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ ৷ চিকিৎসার পরিভাষায় এই রোগটিকে বলা হয়, আ্যওর্টিক ডিসেকশন ৷ শুধু প্রদীপ নন, শেষ এক সপ্তাহে আরও এই ধরনের দুটি রোগীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে৷ তাঁদের সকলের চিকিৎসার ভার নিয়েছেন আমরি হাসপাতালের চিকিৎসক সুজয় চট্টোপাধ্যায় ৷ বিরল অস্ত্রোপচার করে তাঁদের প্রাণের আশঙ্কা দূর করেছেন তিনি ৷
ফিরে আসা যাক প্রদীপের কথায় ৷ পেটের বোমা ফাটার মতো অনুভূতির রেশ কাটার আগেই মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে। শারীরিক অবস্থা বেগতিক দেখে বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের সকলকে ঘটনা জানানোর পর বাড়ির কাছে এক স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। কী হয়েছে বোঝার চেষ্টা শুরু করেন চিকিৎসকরা ৷ একেবারে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে গ্যাসের ইনজেকশন দেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মনে হয়, প্রাথমিক গোলমাল সামলে দেওয়া গিয়েছে ৷ সেই স্বস্তির মেয়াদ ছিল বেশ কম ৷
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসার পর রাতে আচমকাই বমি হয়। তারপরই হঠাৎ করে ডান পায়ে ভয়াবহ যন্ত্রণা শুরু হয়। পা কাজ করাই বন্ধ করে দেয় । কীসের এই যন্ত্রণা তা জানতে পরিবার তাঁকে বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখানে প্রথমে তাঁকে নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা দেখেন। কোনও সমস্যা ধরা পড়ে না। পরে তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন কার্ডিও বিভাগের চিকিৎসকরা। ইকো কার্ডিওগ্রাফিতেই ধরা পরে রোগ। এতক্ষণে অবশ্য অনেকটা সময় চলে গিয়েছে ৷ কার্ডিও সার্জেন্ট সুজয় চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় চিকিৎসা ৷
তখন প্রদীপের অবস্থা কেমন ছিল তা ইটিভি ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন চিকিৎসক ৷ তিনি বলেন, "ভদ্রলোকের মহাধমনীটির মধ্যে ছেদ হয়ে দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। ফলে ওই ব্যক্তির রক্ত চলাচলের জায়গা দুটি হয়ে গিয়েছিল। এ বিষয়টায় তৎক্ষণাৎ একটা অস্ত্রোপচারের দরকার ছিল। সেই কাজ দ্রুততার সঙ্গে করি আমরা ৷ বদলায় মহাধমনীও। ওঁর রক্ত চলাচলের যে দুটো জায়গা হয়েছে সেটাও বন্ধ করা হয়। তবে এঁর ক্ষেত্রে বিষয়টি খুব চ্যালেঞ্জের ছিল তার কারণ শরীরের তাপমাত্রা অনেকটা কমিয়ে এই অস্ত্রপ্রচারটা করতে হয়েছিল ৷ না হলে বড় বিপদ হতে পারত। "
শুধু প্রদীপবাবু নন, এমন রোগে একই সপ্তাহের মধ্যে আরও দু’জন আক্রান্ত হয়েছেন । তাঁদের একজন লিলুয়ার বাসিন্দা রুম্পা দত্ত এবং অন্যজন কোলাঘাটের বাসিন্দা বছর বরেন্দ্রনাথ হেমব্রম। তবে প্রদীপের মতো তাঁদের অবস্থা ততটা জটিল ছিল না ৷ সময়ে চিকিৎসা না-হলে ক্রমশ সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা।