কলকাতা, 26 নভেম্বর: ক্ষোভে ফুটছে বাংলার আম্পায়াররা । জেসি মুখার্জি ট্রফিতে টালিগঞ্জ অগ্রগামী বনাম কুমারটুলি ম্যাচে বিতর্কিত ওভার কাণ্ড নিয়ে ফুটছে কলকাতা ময়দানের আম্পায়াররা । ওই ম্যাচে দুই আম্পায়ার স্বস্তিক দত্ত চৌধুরী, দেবতোষ মুস্তাফি এবং অবজার্ভার দীপেন্দু মাহাতোকে 4 বলে ওভার ঘোষণার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া হয়েছে । অথচ দুই স্কোরার শুভম মণ্ডল, অতনু জানা এবং তৃতীয় আম্পায়ার সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে শাস্তি দেওয়া হয়নি । ম্যাচে বেনিয়ম হওয়ার যুক্তি মেনে নেওয়া হলে, তাহলে তা পুনরায় করার কথা কেন বলা হচ্ছে না ?
নিয়ম বলছে, আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না । স্কোরারের চোখে যদি বল কম হওয়ার ব্যাপারটি ধরা পড়ত, তাহলে কেন বলেননি তাও রহস্যের । পাশাপাশি কীভাবে তিনি তাঁর স্কোরশিটে বল সংখ্যা মিলিয়ে দিলেন ? গোঁজামিল ছাড়া তো সম্ভব নয় ।
টুর্নামেন্ট কমিটি এই বিতর্কিত ম্যাচের জন্য শুনানি ডেকেছিলেন । তারা কেন এই বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়েছেন তা আম্পায়াররা বুঝতে পারছেন না । তাঁদের আশঙ্কা, এইভাবে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রক্রিয়া শুরু হলে যেকোনও দলই চিঠি দিয়ে প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটবে । তাতে আম্পায়াররা যেমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবেন, তেমনই লিগের কোনও ম্যাচেরই ফয়সালা হবে না । কার্যত লিগ শেষ করাই দায় হয়ে উঠবে ।
জেসি মুখার্জি ট্রফিতে বিতর্কিত ওভার কাণ্ডে আম্পায়ারদের শাস্তির বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি তোলা হয়েছে তা যথেষ্ট সারমর্ম রয়েছে মনে করছে সিএবির অন্দরমহলের ব্যক্তিরা । সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় আম্পায়ারদের সুযোগসুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে আন্তরিক । ইতিমধ্যে আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ (বালু) বন্দ্যোপাধ্যায় সিএবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে পুরো ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন ।
আম্পায়ার মহল বলছে:
আম্পায়াররা টালিগঞ্জ অগ্রগামী বনাম কুমাটুলি ম্যাচে দু’বল কমে ওভার ঘোষণা করেছেন । এই বিষয়টি সরকারিভাবে নথিভুক্ত নয় । কারণ স্কোরকার্ডে দু’বল কমে ওভার দেওয়ার বিষয়টি দেখানো হয়নি। তাহলে কেন মুখের কথা শুনে দুই আম্পায়ারকে শাস্তি দেওয়া হল ?
নথি বা রেকর্ড বুক অনুসারে দু’বল কমে ওভার দেওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়ার জায়গা নেই । স্কোরারের নথিতে স্পষ্টত ছ’টি বল দেখানো হচ্ছে ৷ তাহলে দু’বল কম খেলিয়ে ওভার ঘোষণার জন্য আম্পায়ারদের শাস্তি কোন যুক্তিতে ?
আম্পায়ারদের শাস্তি হলে ম্যাচটি বৈধ হতে পারে না । পিসিটি বা প্লেয়ার্স কন্ট্রোল টিমের সদস্য সংখ্যা ছয় । কিন্তু ওভার বিতর্কে পিসিটি’র তিনজন শাস্তি পেল আর বাকি তিনজন বেকসুর খালাস হল কোন যুক্তিতে ?
গোঁজামিলটা স্কোরার দিয়েছে । আম্পায়াররা কম বলে ওভার দেওয়ার কারণে অভিযুক্ত, অথচ স্কোরার তাঁর নথিতে বলছেন ছ’টি বলেই ওভার হয়েছে । তাহলে ম্যাচটা পুনরায় হবে না কেন ? কিন্তু নিয়ম অনুসারে ম্যাচ পুনরায় করার সুযোগও নেই । পুরোটাই ভুলে ভরা বিচার করা হয়েছে ।
আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন প্রতিবাদ ও তার প্রেক্ষিতে শাস্তি দেওয়ায় আদতে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে বাধ্য করবে । টালিগঞ্জ অগ্রগামীর তরফে যে প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়েছে তা 27 ঘণ্টা পরে দেওয়া হয়েছে । নিয়ম অনুসারে, কোনও প্রতিবাদ জানাতে হলে তা 24 ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হয় । অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পরে অভিযোগ জমা পড়েছে । স্কোরশিটে দু’দলের অধিনায়ক স্বাক্ষর করেছে । তাহলে স্কোরশিটে কম বলে ওভার ঘোষণার উল্লেখ নেই । নিয়ম অনুসারে, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যায় না। আম্পায়ার যদি কোনও নিয়ম না-মেনে থাকেন, তাহলে প্রতিবাদ করে চিঠি 24 ঘণ্টার মধ্যে জমা দেওয়া যায় । সব মিলিয়ে ভরা ক্রিকেট মরশুমে আম্পায়ার বিতর্কে সরগরম সিএবি ।