কলকাতা, 6 নভেম্বর: বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দিনকয়েক আগেই এই মন্তব্য করে বঙ্গ-রাজনীতিতে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের ওই বিধায়কের সেই মন্তব্যের রেশ কাটার আগেই অভিষেকের বাংলার ‘মসনদে’ বসা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য সামনে এল ৷
এবার মন্তব্য করেছেন কুণাল ঘোষ ৷ যাঁকে শাসক দলের প্রথম সারির নেতা হিসেবেই গণ্য করা হয় ৷ ফলে তাঁর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে হইচই শুরু হয়েছে ৷
সাংবাদিকদের মুখোমুখি কুণাল ঘোষ (ইটিভি ভারত) আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন আগামিকাল, 7 নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ৷ তার আগে আজ, 6 নভেম্বর (বুধবার) সোশাল মিডিয়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জন্মদিনের আগাম শুভেচ্ছা জানাতে একটি পোস্ট করেন কুণাল ৷ সেখানেই তিনি অভিষেকের বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেন ৷
সোশাল মিডিয়ায় কী লিখেছেন কুণাল ঘোষ ?
এদিন দুপুর 1টা 55 মিনিটে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করেন কুণাল ঘোষ ৷ সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘রাত পোহালেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন । খুব ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক, চোখের সমস্যাটা একদম ঠিক হয়ে যাক । কম বয়সেই যোগ্য নেতৃত্বের যে ছাপ অভিষেক রাখছে, সময়ের সঙ্গে তা আরও ব্যাপকতর হতে থাকুক ।’’
সাংবাদিকদের মুখোমুখি কুণাল ঘোষ (নিজস্ব চিত্র) তার পর কুণাল ঘোষ লেখেন, ‘‘আমি নিজে সক্রিয় রাজনীতিতে থাকি বা না থাকি, এই উদীয়মান তারকার উপর গুরুত্ব-সহ নজর রাখবই । বয়সে ছোট, কিন্তু যতদিন আমি তৃণমূলে সক্রিয় থাকব, ও আমার নেতা । তার বাইরে স্নেহ করি, ভালোবাসি । মমতাদিকে দীর্ঘকাল দেখেছি, এখন অভিষেককেও দেখছি । দ্রুত আরও পরিণত ।’’
এর পর ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের আরও প্রশংসা করে কুণাল লেখেন, ‘‘আবেগের সঙ্গে মিশছে আধুনিক পদ্ধতি, প্রযুক্তি । আরও ধারালো হচ্ছে অভিষেক ।’’ এর পরই অভিষেকের বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে নিজের মতামত লেখেন কুণাল ঘোষ ৷ তাঁর কথায়, ‘‘সময়ের নিয়মে মমতাদির পর একদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবে অভিষেক, তৃণমূল কংগ্রেসের সেনাপতি থেকে যুগান্তরের পতাকায় কান্ডারী । মমতাদির ঘরানার সময়োপযোগী ধারক ও বাহক ।’’
কিন্তু সময়ের নিয়মে কবে বাংলার প্রশাসনিক প্রধান হওয়ার সুযোগ অভিষেকের কাছে আসবে, তা অবশ্য ব্যাখ্যা করেননি কুণাল ঘোষ ৷ বরং ওই পোস্টের একেবারে শেষ অংশে তিনি লেখেন, ‘‘মমতাদির নেতৃত্ব চলতে থাকুক, আর তার মধ্যেই আগামীর পদধ্বনি হতে থাকুক বাংলার রাজনৈতিক সামাজিক চালচিত্রে ।’’
পরে সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন এই তৃণমূল নেতা ৷ শুরুতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ৷ কুণাল বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফল্যের সঙ্গে সরকার চালাচ্ছেন ৷ আরও দীর্ঘদিন চালাবেন ৷ মমতাদির নেতৃত্বে, অভিষেকের সেনাপতিত্বে তৃণমূল কংগ্রেস চলছে ৷ সেখানে আমাদের সৌভাগ্য সাংবাদিক হিসেবে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দীর্ঘদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেছি, দেখছি এবং দেখব ৷’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ফাইল ছবি) এর পর অভিষেকের প্রসঙ্গে কুণাল আরও বলেন, ‘‘তার পাশাপাশি আগামীর পদধ্বনি হিসেবে যেভাবে অভিষেক উঠে আসছে, ইয়ং ছেলে, বয়স আমাদের থেকে অনেক কম ৷ নেতা হিসেবে কত উচ্চতায় গিয়েছে ৷ কত পরিণত হয়েছে ৷ আবেগ ও ট্র্যাডিশনাল রাজনীতির সঙ্গে সময়োপযোগী স্ট্রাটেজি, পদ্ধতি, প্রসেস, তথ্যপ্রযুক্তি - এই সমস্ত কিছুর মিশেল হচ্ছে ৷ সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ঘরানা তার ধারক ও বাহক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘তাঁর জন্মদিনের প্রাক্কালে আমি সেই কারণেই এই শুভেচ্ছা জানিয়েছি ৷ কালের নিয়মে নিশ্চিতভাবেই একদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবেন ৷’’
উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল ৷ সেখানে কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ বলেন, "বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠান আমরা ধুমধামের সঙ্গে পালন করব ৷’’ পরে নিজের ভুল শুধরে তিনি বলেন, "রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা বছর উন্নয়নের কাজ করে চলেছেন ৷’’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় (ফাইল ছবি) প্রসঙ্গত, শেখ শাহনেওয়াজ কেন এই মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়েছিল কুণাল ঘোষের কাছে ৷ সেদিন বিষয়টিকে কেতুগ্রামের বিধায়কের নিজস্ব মতামত বলে এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি ৷ তবে বুধবার সরাসরি জানিয়েদিলেন যে সময়ের নিয়মে একদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবেন অভিষেক ৷
কুণাল ঘোষ দিনক্ষণ না-জানালেও এই ইস্যুকে হাতছাড়া করতে রাজি হয়নি বিরোধীরা ৷ তারা স্বাভাবিকভাবেই আসরে নেমে এই নিয়ে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ সামনে আনার চেষ্টা করেছেন ৷ রাজ্যসভার সাংসদ বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কুণাল ঘোষের বলার অপেক্ষা রাখে না সরকারের বাইরে থেকে রাজ্যে আরও একটা সরকার চলছে । এটা বাংলার মানুষের জানা । এই জন্যই পশ্চিমবঙ্গের এমন অবস্থা । এটা কি তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর উপর চাপ তৈরির প্রচেষ্টা ?’’
তবে কুণালের এই মন্তব্যকে চাপ তৈরির কৌশল বলে মনে করছেন না কলকাতা পুরনিগমের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ ৷ তাঁর কথায়, ‘‘এ অভিষেককে প্রশস্তির প্রয়াস ছাড়া কিছু নয় । উনি বিদূষক ছাড়া কিছু নন । 26-এর পর হতে পারলে হয়ে দেখাক !’’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী অবশ্য কুণাল ঘোষের এই মন্তব্যের মধ্যেও বিজেপি-তৃণমূল সেটিংয়ের তত্ত্বই খুঁজে পাচ্ছেন ৷ সুজনের কথায়, ‘‘আমি অনেক আগে বলেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গে শিন্ডে তৈরি করার প্রক্রিয়া চলছে । তৃণমূলের মধ্যে থেকে কাউকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি সরকার গড়ার চেষ্টা করছে । যদিও মানুষ তৃণমূল এবং বিজেপি-কে ভরসা করছেন না । শিন্ডে গড়ার ইঙ্গিত হয়তো দিয়ে রাখলেন কুণাল ।’’