কলকাতা, 13 ফেব্রুয়ারি: বেকারদের কাজ, শ্রমকোড ও স্মার্ট মিটার চালু-সহ বিদ্যুৎ বিল বাতিল, কৃষিপণ্যের ন্যায্যদাম, মনরেগার বকেয়া মজুরি পরিশোধ, মূল্যবৃদ্ধি রোধ, দেশের সংবিধান, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রক্ষা-সহ দুর্নীতি রোধের দাবিতে মিছিল হল কলকাতায় । মঙ্গলবার রিপন স্ট্রিটের বাম্বুভিলা থেকে নিজাম প্যালেস পর্যন্ত এই মিছিল হয় । বাম-কংগ্রেস-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতারা এই মিছিলে পা মেলান । উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ একাধিক বাম নেতৃত্ব । কলকাতা ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে । নেতাদের দাবি, রাজ্যের প্রতিটি জেলাশাসক দফতরে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে ।
সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্য়ায়ের অভিযোগ, "ধর্মীয় ভাবাবেগকে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় । শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের খাতে সরকারি বরাদ্দ কমিয়ে বেসরকারি মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফা লুঠের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে । নয়া শিক্ষানীতির মাধ্যমে সার্বজনীন শিক্ষার অধিকারও সংকুচিত করা হচ্ছে । কেন্দ্রীয় সরকারের এই জনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী নীতির পরিবর্তনের দাবিতে গত 26-28 অগস্ট ও 26-28 নভেম্বর দেশজুড়ে শ্রমিক কৃষকদের ঐতিহাসিক সমাবেশ ও রাজভবন অভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছে ।’’
তিনি জানান, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তার নীতির পরিবর্তন করেনি । এই পরিস্থিতিতে সারা দেশের কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন সমূহ শিল্প ভিত্তিক ফেডারেশন ও সর্বভারতীয় কৃষক ক্ষেতমজুর সংগঠন, সংযুক্ত কিষান মোর্চা 16 ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে গ্রামীণ বনধ ও আইন অমান্য জেল ভরো কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ।
তিনি আরও জানান, বাংলার পরিস্থিতিও একইরকম। বর্তমানে রাজ্য সরকারের দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে । রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী-সহ শাসকদলের বহু নেতা-বিধায়ক জেলবন্দি । বন্ধ শিল্পের জমি তুলে দেওয়া হচ্ছে সরকারি দলের রিয়েল এস্টেটের দালালদের হাতে । এমনকি চা-বাগানের লিজ জমি ফ্রী হোল্ড করে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে হোটেল, রিসর্ট বানানোর জন্য । রাজ্যে 300-র বেশী বড়, মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই সময়ে । এই সরকারের আমলে বিকো লরি, এন্ড্রু ইউলের 2টি ইউনিট, রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্থান কেবলস্ বন্ধ হয়েছে । শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা তহবিলের টাকা রাজ্য সরকার অন্য খাতে খরচ করেছে ৷ এতে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ।
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতিদের নিয়ে বারবার সম্মেলন করলেও রাজ্যে কোনও নতুন বড় শিল্প হচ্ছে না । ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার 46টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে তুলে দিয়েছে । গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে জেশপ, ডানলপ, হিন্দ মোটর কারখানা খোলার যে প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় দিয়েছিলেন, এই বিষয়ে সরকারের কোনও উদ্যোগ নেই ৷ বিপরীতে কেন্দ্র বেঙ্গল কেমিক্যাল, ব্রিজ আন্ড রুফ, চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভের বেসরকারিকরণের চেষ্টা করছে । রাজ্য সরকার নীরব । আসলে কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকারের নীতি একই ।"