কলকাতা, 6 ফেব্রুয়ারি: বাংলাদেশ ইস্যুতে একসুর শোনা গেল তৃণমূলের কুণাল ঘোষ ও সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের গলায় ৷ দু’জনেই মনে করেন ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে ভারতের প্রতিবেশী দেশে ৷ এই নিয়ে একদিকে কুণাল তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ৷ আর সেলিমের নিশানায় বিজেপি-আরএসএস ৷
বাংলাদেশ নিয়ে কুণাল ঘোষের বক্তব্য: বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিঁধেছেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ৷ তিনি বলেন, “বাংলাদেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কী করছে ? শুধু বড় বড় কথা ৷ সারা পৃথিবী একজন লোক ঘুরে বেড়াতে পারে ৷ শুধু মনিপুরে যাওয়ার সময় হয় না আর বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলার সময় হয় না ৷”
বাংলাদেশ ইস্যুতে কুণাল এদিন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ থেকে দাঁড়িয়ে আমরা আন্তর্জাতিক বিষয়ে কথা বলতে চাই না ৷ আমাদের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব গোটা বিষয়টি নজর রাখছেন ৷ এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক আগে থেকে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত ছিল ৷ আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র শুধু নয়, প্রতিবেশী রাজ্যও ৷ আমাদের ভাষা এক ৷ কেন্দ্রীয় সরকার গোটা বিষয়টি নিয়ে কার্যত নিষ্ক্রিয় থেকে গেল ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘তবে যেহেতু এটা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই আমরা দলগতভাবে কিছু বলতে চাই না ৷ বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের নিশ্চিতভাবে আবেগ ও শ্রদ্ধা ছিল, আছে, থাকবে ৷ কিছু দুষ্কৃতী কিছুদিনের জন্য কিছু বাড়ি, স্মারক, স্থাবর জিনিস লণ্ডভণ্ড বা ধ্বংস করতে পারে ৷ কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না ৷ যাঁরা সুস্থ ও সচেতন মানুষ, তাঁরা নিশ্চিতভাবে হৃদয় দিয়ে ইতিহাস বাঁচিয়ে রাখবেন ৷”
কুণালের আরও বক্তব্য, “আমরা আন্তর্জাতিক বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারি না ৷ আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আপত্তিকর কাজকর্ম চলছে বাংলাদেশে ৷ কেন্দ্রীয় সরকার কি আঙুল চুষছে ? তাদের হস্তক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে ৷ বার্তা দেওয়ার অধিকার রয়েছে ৷ বাংলাদেশ নিয়ে অনেক আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ করা উচিত ছিল ৷ সেটা তারা নেয়নি ৷ ফলে ঘটনার পর ঘটনা সেখানে ঘটছে ৷’’
তৃণমূলের এই নেতা আরও বলেন, ‘‘একটা অশুভ শক্তি বাংলাদেশকে ভারত বিরোধী মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করছে ৷ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত বিরোধী শক্তি বাংলাদেশের মঞ্চ ব্যবহার করছে ৷ কিন্তু ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়ভাবে এই বিপজ্জনক প্রবণতাকে অনুমতি দিয়ে যাচ্ছে ৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমরা উদ্বেগ জানাতে পারি ৷ কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক বিষয় ৷ আমরা কোনও কথা বলব না ৷ মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার বলে রেখেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যা করবে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সমর্থন করবে ৷”
শত্রুঘ্ন সিনহার মন্তব্য প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ: মঙ্গলবার আমিষ খাবারে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সওয়াল করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা ৷ এদিন দলীয় সাংসদকে আড়াল করতে কুণালের দাবি, “আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের স্পষ্ট নীতি, কে কী খাবেন, কে কী পরবেন, এটা সম্পূর্ণ তাঁর স্বাধীনতা ৷ এটা কেউ কাউকে চাপিয়ে দিতে পারে না ৷ কেউ কাউকে মনিটর করতে পারে না ৷ এর বাইরে যদি কেউ তাঁর মতামত জানিয়ে থাকেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মতামত ৷ প্রত্যেকের মতামতের উপর আলাদা মন্তব্য করা সম্ভব নয় ৷”
মুজিবের বাড়ি ধ্বংস আসলে ইতিহাসের ওপর আক্রমণ, সেলিমের কটাক্ষ: বাংলাদেশের শেখ মুজিবর এর বাড়ি ধ্বংস করাকে উগ্রদক্ষিণ পন্থার ভয়াবহতা হিসেবেই মনে করছে সিপিআইএম । বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, "বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, উগ্র-দক্ষিণপন্থা আক্রমণ করছে সে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের ওপর । ভারতেও স্বাধীনতার ইতিহাসকে আক্রমণ করছে উগ্র-দক্ষিণপন্থা । ওপারে জামাত যা করেছে, এপারে আরএসএস-বিজেপি তাই করছে । প্রগতিশীল যুক্তিবাদী সব শক্তিকে এই আক্রমণের মোকাবিলা করতে হবে ।’’
সেলিম আরও বলেন, ‘‘এই হামলা শুধু একটা বাসভবনের ওপর নয়, শুধু মুজিবর রহমানের স্মৃতির প্রশ্ন জড়িয়ে আছে তা নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের যে চিহ্নগুলো আছে, তার ওপর আক্রমণ চলছে । যারা বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায়, শেষ করতে চায় তারাই এই হামলা চালাচ্ছে । ইতিহাসের ওপর এই আক্রমণের চেহারা আমরা এই দেশেও দেখছি । মনে রাখা ভালো এই ধরনের উগ্র-দক্ষিণপন্থী আক্রমণে ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না ।"
বিজেপিকে নিশানা করে সেলিম আরও বলেন, ‘‘দক্ষিণপন্থা অভ্যুত্থান করলে কী হয়, তা আমরা বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি । উগ্র-দক্ষিণপন্থা ইতিহাসকে বিকৃত করতে চায় । ওখানে দেখছি 5 অগস্টকে স্বাধীনতা দিবস বলা হচ্ছে । আর আমাদের এখানে রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনকে স্বাধীনতা দিবস বলা হচ্ছে । সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার ইতিহাসকে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে । বাংলাদেশের ঘটনা দেশি বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে মদত জোগাচ্ছে । আমাদের এখানে যেমন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইকে অস্বীকার করার চেষ্টায় সাম্রাজ্যবাদ উৎসাহিত হচ্ছে ।"
বঙ্গের প্রসঙ্গ টেনে সেলিমের বক্তব্য, "রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে আরএসএস ঘৃণার রাজনীতি শুরু করেছে । ওখানে জামাত এই কাজ করছে এখানে আরএসএস-বিজেপি এই একই কাজ করছে । ধর্মের মোড়কে রাজনীতি করা যাবে না ।’’