বীরভূমের ভোটে তিহারে বন্দি কেষ্টই কি এক্স-ফ্যাক্টর? দুবরাজপুর, 27 মার্চ: 11 অগস্ট, 2022 ৷ বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি থেকে গরুপাচার মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় সিবিআই ৷ তার পর আর বীরভূমে ফেরার সুযোগ পাননি অনুব্রত মণ্ডল ৷ মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ চলে এসেছে লোকসভা ভোট ৷ এই সময়ের মধ্যে ঠিকানা বদলও হয়েছে কেষ্টর ৷ আসানসোল জেল থেকে অনেক টালবাহানার পর ইডি হেফাজত হয়ে এখন তিনি দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি ৷
তার পরও অনুব্রতকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে বীরভূমের ভোট রাজনীতি ৷ একদিকে তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে সামনে রেখেই প্রচারে নেমেছে ৷ অন্যদিকে বিজেপিও বীরভূম থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে কারাগারের অন্তরালে থাকা কেষ্টকেই নিশানা করে প্রচার করছে ৷
2009 সাল থেকে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় ৷ এবারও তাঁকেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তাঁর সমর্থনে প্রচারও শুরু করে দিয়েছে শাসক দল ৷ সেই প্রচারের দেওয়াল লিখনেই দেখা মিলছে অনুব্রতর ‘উপস্থিতি’ ৷ লেখা হয়েছে, 'তিহাড়ে বসেই খেলা হবে' ৷ যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় । গুঞ্জন শুরু হয়, তিহাড় থেকেই কি অনুব্রত ভোট পরিচালনা করবেন নাকি ?
যদিও এর মধ্যে বিতর্কের কিছু দেখছেন না বীরভূমের তিনবারের সাংসদ শতাব্দী রায় ৷ তিনি বলছেন, "যে মানুষগুলো দেওয়াল লেখেন, তারা নিজেদের আবেগ থেকে লেখেন ৷ অনুব্রত মণ্ডলের প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকে হোক বা ভালোবাসা থেকে হোক কর্মীরা তাদের আবেগ প্রকাশ করেছেন মাত্র ৷’’
পাশাপাশি তিনি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘‘তিহাড় থেকে খেলা তো আর সম্ভব নয় ৷ অন্য রাজ্য সেটা ।’’ তাহলে কি এবার ভোটে বীরভূমে তৃণমূলের ‘খেলা’ অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতিতে আটকে যাবে ? শতাব্দী অবশ্য বলছেন, ‘‘তবে খেলা তো হবেই । খেলা হবে, এটা আমাদের স্লোগান ।"
উল্লেখ্য, তৃণমূল জমানায় পঞ্চায়েত থেকে পৌরসভা, বিধানসভা থেকে লোকসভা, সব ভোটই নিয়ন্ত্রণ করতেন অনুব্রত মণ্ডল ৷ তাঁর ‘প্রতাপে’ বিরোধীরা কখনও প্রার্থী খুঁজে পেত না, কখনও আবার প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করে নিত ৷ আর অনুব্রত মণ্ডল কখনও চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোর কথা বলে, কখনও পুলিশকে বোমা মারার কথা বলে, আবার কখনও গুড়-বাতাসার তত্ত্ব আওড়ে ভোটের আবহে আলোচনায় থাকতেন ৷ এমনকী, জেলায় তৃণমূলের নেতারাও তাঁকে সমঝে চলতেন ৷
কিন্তু অনুব্রতর গ্রেফতারির পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত অনেক মুখ তৃণমূলে সামনে আসতে শুরু করে ৷ কিন্তু সম্প্রতি বীরভূম নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দেন যে অনুব্রত মণ্ডল না থাকলেও তাঁর মডেলেই বীরভূমে এবার ভোট করবে শাসক দল ৷ অনুব্রতর কাছের লোক বলে যাঁরা বীরভূমের রাজনীতিতে পরিচিত, তাঁদের অধিকাংশকেই সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷
বীরভূমে তৃণমূল কংগ্রেসের দেওয়াল লিখন তাছাড়া তৃণমূল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলার সভাপতি বদল করলেও অনুব্রত বরাবর বীরভূমের সভাপতি পদে থেকে গিয়েছেন ৷ তাঁর জেলযাত্রার পর নতুন কাউকে বীরভূমের সভাপতি করা হয়নি ৷ বদলে সংগঠনের ভার দেওয়া হয়েছে কোর কমিটিকে ৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, না থেকেও অনুব্রতই যে এখনও জেলা তৃণমূলের সব, সেটা বারবার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে স্পষ্ট করেছেন শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ৷
বীরভূমে বিজেপির দেওয়াল লিখন৷ আর সেটা বুঝেই বিজেপিও দেওয়াল লিখনে অনুব্রতকেই নিশানা করছে ৷ এখনও বীরভূমে বিজেপির প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি ৷ তার আগেই দেওয়ালে দেওয়ালে বিজেপির তরফে লেখা হয়েছে - ‘খেলতে খেলতে তিহাড় গেলে, সঙ্গে নিয়ে মেয়ে / বাকিরা সব বসে আছে, তোমার দিকে চেয়ে / ডাকবে কবে, বলো তুমি ডাকবে কবে ?’
মুখে অবশ্য বিজেপি নেতারা অনুব্রত মণ্ডলকে গুরুত্ব দিতে নারাজ ৷ দুবরাজপুরের বিধায়ক বিজেপির অনুপ সাহা বলেন, "আগামী নির্বাচনেই মানুষ এর জবাব দেবে ৷ অনুব্রতর ছবি তো তৃণমূলই সব জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়েছে । খেলা হবে করে লিখে কী হবে ? এই বীরভূম লোকসভা থেকে লক্ষাধিক ভোটে লিড দেবে বিজেপি ।"
অনুব্রতকে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির লড়াই দেখে সিপিএমের বীরভূম জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, "খেলা হবে মানেই মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা । এই নমুনা আমরা আগেও দেখেছি ৷ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তৃণমূল ও বিজেপির কোন ধারনা নেই, ওরা চায়ও না গণতন্ত্র থাকুক ৷ তাই মানুষকে ভুল বোঝাতে ও আতঙ্কে রাখতে এই ধরনের দেওয়াল লিখন করে ।"
আরও পড়ুন:
- জেলবন্দি কেষ্টর উপর আস্থা অটুট মমতার, ভোটে জিততে ভরসা অনুব্রত মডেলই
- কাজলের ডানা ছেঁটে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ চন্দ্রনাথকে বেশি বিধানসভার দায়িত্ব মমতার
- অনুব্রতর মুক্তি কামনায় 25 কেজি ঘি ও 5 কুইন্টাল বেলকাঠ পুড়িয়ে যজ্ঞ বোলপুরে