হায়দরাবাদ, 21 ফেব্রুয়ারি: আগামী 30 বছরে বিশ্বের যেকোনও দেশের তুলনায় ভারতে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে । তাই বিদ্যুতের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আমরা আর কয়লা ও অন্যান্য উৎসের উপর নির্ভর করতে পারি না ৷ তাই সৌরশক্তির জন্য আমাদের ক্ষমতা বাড়াতে হবে । কয়লা উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভারত 2030 সালের মধ্যে 500 গিগাওয়াট পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির ক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । এছাড়াও দেশ 2030 সালের মধ্যে অ-জীবাশ্ম জ্বালানি উৎস থেকে 50 শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ৷ ইতিমধ্যেই তা 43 শতাংশে পৌঁছেছে ৷ এর মধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি 30 শতাংশ ।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছেন । 2024 সালের অন্তর্বর্তী বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ঘোষণা করেছেন যে এই প্রকল্পের উপভোক্তারা প্রতি মাসে 300 ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিনামূল্যে পাবেন এবং উদ্বৃত্ত সৌরশক্তি বিক্রি করতে পারবেন ৷ এর ফলে তাঁদের বছরে প্রায় 15-18 হাজার টাকা সাশ্রয় হবে ৷ এই প্রকল্পের লক্ষ্য সারা ভারতে 1 কোটি পরিবারে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করা, যা খুবই আশ্চর্যজনক ! যাই হোক, 2023 সালের 31 জুলাই পর্যন্ত যেসব ভারতীয় বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল বসেছে, সেখান থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ 2.2 গিগাওয়াট ৷
আমাদের অনেক কাজ করতে হবে । সরকার 2014 সালে এই নিয়ে একটি প্রকল্প চালু করে ৷ তবে তা নিয়ে খুব বেশি প্রচার হয়নি ৷ আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং দেখতে হবে যে এই নতুন প্রকল্পটি সাফল্য পায় কি না ! আমরা যখন আরও দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন ছাদে সৌর সিস্টেমের প্রচারের জন্য সরকারের প্রচেষ্টা আগের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ।
2014 সালে চালু করা জাতীয় রুফটপ স্কিম 2022 সালের মধ্যে 40 গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জনে সোলার প্যানেল বসানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল । তবে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি৷ ফলে সরকার সময়সীমা 2026 পর্যন্ত বাড়িয়েছে । এখন দেখা যাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার নতুন করে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ।
সৌরশক্তির ব্যবহারে এবং কার্বন ফুটপ্রিন্টস কমাতে আরও পরিবারকে এই বিষয়ে উৎসাহিত করতে হবে ৷ এর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন ৷ আর সেই ব্যবস্থা করে সরকার স্বচ্ছ ও সবুজ ভবিষ্যতের দিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ করেছে । আরও বেশিসংখ্যক লোক পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির গুরুত্ব বুঝতে পারলে আমরা আশা করতে পারি যে আগামী বছরগুলিতে সোলার রুফটপ সিস্টেম ব্যবহারের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখতে যাবে ৷ প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনা ঘোষণা প্রতিটি ভারতীয় পরিবারের দীর্ঘমেয়াদী শক্তির ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে এক কোটি দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাদে সোলার প্যানেল বসানো গেলে পাওয়ার গ্রিডের উপর নির্ভরতা কমানো যাবে ৷ সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলিকে বিদ্যুতের ব্য়বহারে স্বনির্ভর হবে ৷ তাদের বিদ্যুৎ বিল কমানো যাবে । এটি জীবাশ্ম জ্বালানির উপর আমাদের নির্ভরতা ও পাওয়ার গ্রিডের উপর লোড কমিয়ে দেবে, যা বিদ্যুতের ব্যবহার সুযোগ বৃদ্ধি করবে । সৌরশক্তির ব্যবহার শুধু নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগই তৈরি করবে না ৷ বরং একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ পরিবেশ তৈরিতে অবদান রাখবে । এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে, আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি, যেখানে ভারত পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে ।
প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনার সুবিধা পাওয়ার জন্য একটি মাপকাঠি থাকবে ৷ সেটা পূরণ হলে তবেই এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবে ৷ আবেদনকারীদের অবশ্যই ভারতের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে । আবেদনকারীর বার্ষিক আয় একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করা উচিত নয় (সেটা নির্ধারণ করা হবে)। আধার কার্ড, আয় ও বসবাসের শংসাপত্র, মোবাইল নম্বর, বিদ্যুৎ বিল, ব্যাঙ্কের পাসবুক, পাসপোর্ট আকারের ছবি এবং রেশন কার্ড থাকতে হবে আবেদনকারীদের ৷ এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশিকা জারি করার কাজ করছে ৷ নির্দেশিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে আগ্রহী পরিবারগুলি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পারে ।
2023 সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে সৌরশক্তির ব্য়বহার বেড়েছে প্রায় 73.31 গিগাওয়াট । যদিও ছাদে সৌর বিদ্যুৎ ইনস্টল করার ক্ষমতা প্রায় 11.08 গিগাওয়াট, যা 2022 সালের মধ্যে 40 গিগাওয়াট সৌরশক্তির ব্য়বহারের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে ছিল ।
আমরা যদি রাজ্যগুলির কথা বলি, তাহলে রাজস্থান 18.7 গিগাওয়াট সৌর ক্ষমতা নিয়ে এগিয়ে আছে ৷ তারপরে 10.5 গিগাওয়াট নিয়ে গুজরাত । কিন্তু এটা লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে এটা মোট সৌর ক্ষমতা, শুধুমাত্র ছাদের সৌর ক্ষমতা নয় । গুজরাত 2.8 গিগাওয়াট-সহ ছাদে সৌরশক্তি ব্যবহারে এগিয়ে রয়েছে ৷ এর পরে মহারাষ্ট্র, সেখানে 1.7 গিগাওয়াট সৌরশক্তি ব্যবহার হয়েছে ।
ভারতের বর্তমান পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির ধারণক্ষমতা প্রায় 180 গিগাওয়াট ৷ এর মধ্যে প্রধান অংশ রয়েছে সৌরশক্তির ৷ এর পরিমাণ 72.3 গিগাওয়াট ৷ এর পরে সবচেয়ে বড় হাইড্রো (46.88 গিগাওয়াট) । কিন্তু ছাদে সোলার সিস্টেমের ব্যবহার বৃদ্ধির এখনও অনেক জায়গা আছে । আমরা ইতিমধ্যেই দারুণ অগ্রগতি করেছি ৷ কিন্তু 2022 সালের মধ্যে 40 গিগাওয়াটে পৌঁছানোর যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, সেখানে পৌঁছানোর জন্য আমাদের অবশ্যই জোর দিতে হবে ।