হায়দরাবাদ, 8 মার্চ: কবাডি খেলা মানেই যেন পুরুষ, পেশি এবং শক্তি ৷ সেখানে মহিলাদের অংশগ্রহণ তেমন একটা নজরে পড়ত না ৷ একবিংশ শতকে এসে অবশ্য সেই পরিস্থিতির সামান্য বদল হয়েছে ৷ প্রো কবাডি লিগে পুরুষদের আধিপত্যের মাঝে একজন মাত্র মহিলা, যিনি পুরুষ কবাডি দলের মালিক ৷ তিনি রাধা কাপুর ৷ আজ বিশ্ব নারী দিবসে রাধা কাপুরের সঙ্গে কথা বললেন মীনাক্ষী রাও ৷
রাধা কাপুর এক বিরল, তরুণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মহিলা ৷ তাঁর কবাডি দল দাবাং দিল্লি টিমের পারফরম্যান্স কিন্তু দুর্দান্ত ৷ এই একমাত্র মহিলাদের কবাডি দলে মহিলাদের অংশগ্রহণটাকে খুব সহজভাবেই দেখা হয় ৷ এই প্রসঙ্গে রাধা বলেন, "এটা গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপার ৷ সব শ্রেণি থেকেই এমন তরুণ প্রতিভারা উঠে আসছে যে সেখানে লিঙ্গের তফাতটা ফিকে হয়ে গিয়েছে ৷"
রাধা কাপুরের জীবন কিন্তু শুরু হয়েছিল সম্পূর্ণ অন্য ক্ষেত্রে ৷ তিনি নিউ ইয়র্কে ডিজাইন নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করেন ৷ সেখান থেকে একেবারে খেলাধুলোয় ৷ ক্ষমতায়ন এবং প্রতিভা পরিস্ফুটনের প্রতি রাধা কতটা দায়বদ্ধ, বিশেষত মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে, তা প্রমাণ করে তাঁর খেলাধুলোয় যোগ দেওয়ার ঘটনা ৷
2013 সালে মুম্বইয়ে রাধা কাপুরের যাত্রা শুরু ৷ তিনি শিক্ষাজগতে দুর্দান্ত কেরিয়ার গড়ে তোলার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন ৷ এই প্রসঙ্গে রাধা বলেন, "সেটা যেন একটা বাস্তুতন্ত্র ৷ তরুণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী ডিজাইনাররা যেন পড়াশোনার সুযোগ পায়, সেটা তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম ৷ এই বিষয়টি তরুণ ডিজাইনারের ক্ষমতায়নের সঙ্গে জড়িত ৷ আবার তরুণ প্রতিভার উন্নতিও ৷ লক্ষ্য একই ৷"
দেশের নিজস্ব খেলাগুলির প্রচার করা এবং তরুণ প্রতিভাদের খুঁজে বের করা ৷ রাধার মনের অনেক গভীরে এই দু'টি কারণ প্রোথিত ছিল ৷ সেই তাড়না থেকেই প্রো কবাডি লিগে পা রেখেছিলেন রাধা কাপুর ৷ আত্মবিশ্বাসী রাধা বলেন, "আমি সবসময় খেলার শক্তিতে বিশ্বাস করে এসেছি ৷ বিশেষত দুঃস্থ, প্রত্যন্ত শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে খেলা অন্যতম শক্তি ৷ কবাডি একেবারে ভারতের নিজস্ব খেলা ৷ আমাদের সমৃদ্ধ ভারতীয় খেলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরার একটা প্ল্যাটফর্ম এটা ৷ এই খেলাকে কীভাবে বিশ্বের বৃহত্তর ক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়া যায়, যাতে এই খেলা আরও জনপ্রিয় হয় . সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এই ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রচুর প্রতিভা রয়েছে ৷ বেশ কিছু স্কুল কবাডি খেলাকে ফিরিয়েও আনছে ৷"
ক্রিকেট বা ব্যাডমিন্টন নয়, কবাডিকেই বেছে নিয়েছিলেন রাধা কাপুর ৷ কারণ এই খেলাটি তুলনায় কম প্রচার পায় ৷ এদিকে কবাডিতে যথেষ্ট ভালো একটা কেরিয়ার গড়া যায় ৷ পাশাপাশি বহু প্রতিভা যেখানে মূলধারাJ খেলাগুলিতে হারিয়ে যান, তাঁরাই আবার কবাডিতে ভালো জায়গা করে নিতে পারেন ৷
রাধার কথায়, "আমি নতুন কিছু করতে চেয়েছিলাম, যা অন্যরকম, আলাদা ৷ কবাডি সেই সুযোগটা করে দিয়েছে ৷ এতে শুধু যে খেলার প্রচার করা যাবে, তা নয়, মাটির কাছাকাছি থাকা প্রতিভাগুলিকেও তুলে আনা যাবে ৷ আজ আমাদের দেশে কবাডি যেখানে রয়েছে, সেখান থেকে তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আরও সমর্থন প্রয়োজন ৷ অনেক কাজ করতে হবে ৷ তবে একটি টিম তৈরি করে এর বাস্তুতন্ত্রটা তৈরি হয়ে গিয়েছে ৷ এবার আমরা কীভাবে প্রতিভাদের সাহায্য করা যায়, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে একটা কেরিয়ার তৈরি করা যায়, তা করতে পারব ৷"