হায়দরাবাদ, 19 ফেব্রুয়ারি: পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই এবিষয়ে সচেতন করছেন ৷ শিল্পায়নের আগে অর্থাৎ 1850-1900 সাল পর্যন্ত বিশ্বের সব দেশে তাপমাত্রা গড়ে 1 ডিগ্রি করে বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির আর 1 ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ নেই । তাও বেড়ে 1.5 ডিগ্রি হয়েছে ৷ গত 2016, 2017, 2019 এবং 2023 সালে কখনও কখনও 1.5 ডিগ্রি উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ আন্তর্জাতিক স্তরে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, উষ্ণতা বৃদ্ধি 1.5 ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যাবে ৷ আর 2024 সালে তার কিছুটা আভাস পাওয়া যাবে ৷
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, 2050 সালে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে ৷ বেঁচে থাকার জন্য আশপাশ কীভাবে ঠান্ডা রাখা যায়, তার উপায় খুঁজে বের করতে হবে মানুষকে ৷ অতিরিক্ত উষ্ণতায় আঞ্চলিক এবং বিভিন্ন ঋতুতে তাপমাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছবে ৷ তাতে দুই মেরু অঞ্চলের বরফের স্তর আরও কমে যাবে ৷ হিমালয় পর্বতমালাও তার মধ্যে ৷ ঘন ঘন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে ৷ উদ্ভিদ থেকে পশু, মানুষ সবার দৈনন্দিন জীবনে প্রভূত প্রভাব পড়বে ৷
ইতিমধ্যে আমরা ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভূমিধস, দাবানল, হড়কাবান, ঘূর্ণিঝড়ের খবর পাচ্ছি ৷ আর এই ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে ৷ এতে মানবজীবনের বিশাল ক্ষতি তো হচ্ছেই, পাশাপাশি বিপুল অর্থনৈতিক লোকসানেরও মুখোমুখি হতে হচ্ছে ৷ রাষ্ট্রসংঘের সাম্প্রতিক ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল সতর্ক করেছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ আগামী শতক, আগামী হাজার বছর পর্যন্ত এই পরিবর্তন, বিশেষত সমুদ্র, হিমবাহ এবং বিশ্বজুড়ে সমুদ্রস্তরে ওঠা-নামা আর বদলানো সম্ভব নয় ৷
তাই বৈজ্ঞানিকরা গবেষণা করে যে সতর্কবাণী দিচ্ছেন তা পরিষ্কার ৷ তাঁদের মতে, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের হার কমাতে আমরা যা-ই করি না কেন জলবায়ু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী ৷ তবে আমরা শুধু এর প্রভাবকে কমাতে পারি মাত্র ৷ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্দিমত্তা ব্যবহার করে নতুন গবেষণাতেও একই তথ্য পাওয়া গিয়েছে ৷ জলবায়ু পরিবর্তন একটা চ্যালেঞ্জ ৷ এর মোকাবিলা করতে সমাজকে অভিযোজনের পথে হাঁটতে হবে ৷ পরিবর্তনকে গ্রহণ করার মানসিকতা দেখাতে হবে ৷
জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় রাষ্ট্রসংঘের 'কনফারেন্স অফ পার্টিস' গঠিত হয়েছে ৷ এখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি তাপমাত্রা 1.5 ডিগ্রি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করতে পারে ৷ কার্বন নির্গমনের ডেডলাইন নিয়ে দেশগুলির মধ্যে বিতর্ক চলছে ৷ এভাবে বিতর্ক চলতে পারলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা 1.5 ডিগ্রি বৃদ্ধি কেউ আটকাতে পারবে না ৷ এই পরিস্থিতিতে অভিযোজনের কৌশলকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে ৷ কার্বন নির্গমন হ্রাস নিয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনার কথা আমরা তাও শুনতে পাই ৷ তবে এই অভিযোজনের কৌশল নিয়ে অনেক কম কথা হয় ৷
সমাজকে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে ৷ তেমন একটা সমাজ গড়ে তুলতে হবে ৷ আর এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনই সবচেয়ে ভালো পথ ৷ প্যারিস চুক্তিতে অভিযোজন নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে ৷ এতে অভিযোজনের ক্ষমতা বৃদ্ধি, সহ্যক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত ক্ষণভঙ্গুরতাকে কমানোর কথা বলা হয়েছে ৷
বিশ্ব উষ্ণায়নে পরিবেশ, সমাজ, জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি-সহ আরও অনেক কিছু উপরেই প্রতিকূল প্রভাব পড়বে ৷ সেই প্রতিকূল প্রভাব হ্রাসে সমাজ নানাভাবে চেষ্টা করতে পারে ৷ জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের কৌশল সেই কাজকর্মগুলি করার কথা বলছে ৷ এই প্রভাবগুলির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে বাস্তবসম্মত সমাধান প্রয়োজন ৷ তাতে বিশ্বের প্রতিটি সম্প্রদায়, অঞ্চল, প্রত্যেকটি দেশকে অংশ নিতে হবে ৷ একেকটি জায়গায় জলবায়ু পরিবর্তনে একেক রকম প্রভাব পড়বে ৷ তাই প্রত্যেক গোষ্ঠীকে তাদের বসবাসের এলাকা অনুযায়ী অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করতে হবে ৷