জয়নগর, 7 অক্টোবর: আনুমানিক প্রায় 400 বছর আগে দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগর-সহ একাধিক জায়গায় ছিল ঘন জঙ্গল ৷ তৎকালীন সময় বাকসিদ্ধ তান্ত্রিক বামাচরণ ভট্টাচার্য ধীরে ধীরে জঙ্গল কেটে জয়নগরের দক্ষিণ বারাসতে গড়ে তোলেন বসত ভিটে ৷
এলাকার লোকমুখে প্রচলিত কথা অনুযায়ী, সেই সময় বারুইপুর থেকে জয়নগর হয়ে দক্ষিণ বিষ্ণুপুরের মহাশ্মশান পর্যন্ত আদি গঙ্গার প্রবাহ ছিল । ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য এই আদি গঙ্গার জলপথকে ব্যবহার করত ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে জমিদাররা । কালের নিয়মে সেই আদিগঙ্গা এখন বিলীন হয়ে গিয়েছে ।
তৎকালীন সময়ে একদিন এলাকার এক স্বনামধন্য জমিদার বেশ কিছু স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে রাজার কাছে খাজনা দেওয়ার জন্য রওনা দিয়েছিলেন ৷ দক্ষিণ বারাসতের এই জায়গাতে এসে জমিদারের সেই স্বর্ণমুদ্রা ডাকাতদের হাতে লুট হয়ে যায় । এরপর সেই জমিদার হতাশ হয়ে এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে তান্ত্রিক বামাচরণ ভট্টাচার্যের কাছে এসে পৌঁছন । তৎকালীন সময়ে তন্ত্রসাধনা করে এলাকায় নাম ডাক করেছিলেন বামাচরণ । জমিদার নিজের অসহায় অবস্থার কথা জানালে আপন সাধনার শক্তিতে বামাচরণ একটি গাছের কথা উল্লেখ করে জমিদারকে বলেন, "ওই গাছের তলায় রয়েছে তোমার স্বর্ণমুদ্রা ।"
জমিদার সেই কথা শুনে গাছের কাছে গিয়ে দেখেন লুট হয়ে যাওয়া স্বর্ণমুদ্রা সেই গাছের তলায় রয়েছে । এরপর তিনি সেই স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে রাজার কাছে যান এবং নিজের জমিদারিত্ব রক্ষা করেন ৷ প্রণামীস্বরূপ বামাচরণ ভট্টাচার্যকে তাঁর জমিদারের অংশ থেকে বেশ কিছু জমি দান করেন ৷ এরপর বামাচরণ 1593 সালে দক্ষিণ বারাসতে এই ভট্টাচার্য বাড়ির সুবিশাল দালান বাড়ি প্রতিষ্ঠা করে নিজের হাতে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু করেন । তান্ত্রিক হওয়ার জন্য তন্ত্র মতে দেবীর আরাধনা করতেন ৷ সেই থেকে এখনও এখানে তন্ত্র মতেই পুজো হয় । তৎকালীন সময়ে বামাচরণ ভট্টাচার্য যে নিয়মকানুন এবং মন্ত্র পুঁথিতে লিখে রেখেছিলেন সেই মন্ত্রোচ্চারণেই এখনও পুজো হয় ৷ সেই সময়ের বলিদান প্রথা আজও বহাল রয়েছে ।