দুর্গাপুর, 26 অক্টোবর: বাড়ির মেয়ের নাম ছিল কল্যাণী বন্দোপাধ্যায়। আজ প্রায় 300 বছর পরেও দুর্গাপুরের বর্ধিষ্ণু আমরাই গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যদের দ্বারা কালীরূপেই পূজিতা হন এই কল্যাণী। পুজোর সঙ্গে মিশে রয়েছে বহু অজানা ইতিহাস। মন্দিরে 12 মাস রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ থেকে শুরু ভিন রাজ্যের ভক্তবৃন্দরা আসেন।
মা কালীর পুজোর ইতিহাস-
আজ থেকে প্রায় 400 বছর আগের কথা ৷ কাটোয়ার বন্দীঘাঁটি থেকে বন্দোপাধ্যায় পরিবারের প্রথম পুরুষ রত্নেশ্বর বন্দোপাধ্যায় আমরাই গ্রামের চ্যাটার্জি পাড়ায় এসে বসতি স্থাপন করেন। রত্নেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক ছেলে কৃষ্ণমোহন এবং এক মেয়ে কল্যাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। কথিত আছে, কল্যাণী গ্রামের নির্জন তামলা পুকুরে তাঁর বান্ধবীদের সঙ্গে স্নান করতে গিয়েছিলেন। এক বান্ধবী জলে নামার পর তাঁর পায়ে কোনও কিছুর স্পর্শ পান। ভয় পেয়ে জল থেকে উঠে আসেন ৷ তারপর কল্যাণীকে সে কথা বলেন।
স্বপ্নাদেশ রত্নেশ্বরের-
সাহসী স্বভাবের কল্যাণী তামলার কুচকুচে কালো জলে নামেন। বান্ধবীকে ভয় মুক্ত করতে চান। কিন্তু বান্ধবীদের চোখের সামনে হঠাৎ তলিয়ে যান কল্যাণী। তৎক্ষণাৎ তাঁরা এসে বাড়িতে খবর দিলে হইহই পড়ে যায় এলাকাজুড়ে ৷ সেইসময় গ্রামে বসবাসকারী 30টি ধীবর পরিবারকে ডেকে নিয়ে এসে গোটা পুকুরে জাল ফেলে তন্ন তন্ন করে কল্যাণীর খোঁজ চালিয়েও লাভ হয়নি। এরপর শুরু হয় পুকুরের মাটির পার কেটে পুরো পুকুরে জল বের করে দেওয়ার কাজ। কিন্তু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায়। পুকুর পাড়ে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে রত্নেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পুত্র কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে স্বপ্নাদেশ পান।
কল্যাণীর দেবিত্বলাভ-
পরদিন ভোরবেলা কল্যাণী পুকুর থেকে উঠে বাড়িতে যাবে এমন স্বপ্নাদেশ পেয়ে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন পিতা-ভ্রাতা। এই একই স্বপ্নাদেশ পান গ্রামের এক কোণে থাকা এক ঢাকি। তাঁকে স্বপ্নাদেশে বলা হয়, 'পরদিন ভোরবেলা তামলা পুকুরের ঈশান কোণে আমি উঠে আসব। তুই ঢাক নিয়ে সেখানে যাবি।' সেই মতোই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য-সহ গ্রামের সিংহভাগ মানুষ ভোরবেলা তামলা পুকুরে গিয়ে ভিড় জমান। সবার চোখের সামনে এক বুক জল থেকে মাথায় একটি কলস নিয়ে কল্যাণী উঠে আসেন।