পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম বিতর্কে নিষ্প্রভ বাইডেন, ফায়দা তুললেন ট্রাম্প - US presidential election 2024

Biden vs Trump First pre-election Debate: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সপ্তাহান্তে প্রাক-নির্বাচনী বিতর্কে ভয়ংকর পারফরম্যান্সের পরে জো বাইডেন অনেকটাই সমর্থন হারাচ্ছেন বলে ইঙ্গিত মিলছে । বিতর্কের সময় স্পষ্টভাবে বা শব্দের জোর দিয়ে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ব্যাখ্যা করতেই পারেননি তিনি । বাইডেনের এই বিভ্রান্তিকর বক্তব্যকে হাতিয়ার করছেন ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা ৷ লিখেছেন অনুরাধা চিনয় ৷

ETV BHARAT
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম বিতর্কে বাইডেন বনাম ট্রাম্প (ছবি: আইএএনএস)

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jul 1, 2024, 2:39 PM IST

নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রাক-নির্বাচন টেলিভিশন বিতর্ক তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করলেন দর্শকরা ৷ বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (যিনি 2020 সালে হেরেছিলেন)-এর টেলিভিশন বিতর্কে 90 মিনিট ধরে পর্দায় আটকেছিলেন 5 কোটিরও বেশি দর্শক ৷

এই মার্কিন নির্বাচনী অনুষ্ঠানটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে বিশ্লেষণ করেছেন মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা এবং এটি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে ৷ কারণ এই অনুষ্ঠান ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্টের নীতি, বিশ্বদর্শন এবং দৃষ্টিভঙ্গির সম্পর্কে ধারণা দেয় । এই বিতর্কের মূল সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কর্মক্ষমতা, তাঁর বয়স, ফিটনেস ও বিশেষত তাঁর জ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্য ।

এটি কোনও নতুন উদ্বেগ নয়, কারণ 81 বছর বয়সি প্রেসিডেন্ট গত চার বছরে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেওয়ার সময় এবং সাংবাদিক সম্মেলনের সময় এমন বিভিন্ন সময় হয়েছে, যখন বাইডেন পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করে তার ভাবনা হারিয়ে ফেলেছেন, বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন, কথা পিছলে গিয়েছে, এমনকী এসবের জন্য তাঁকে বহুবার সাহায্যও করতে হয়েছিল ।

তাহলে 86 বছর বয়স পর্যন্ত আগামী চার বছরে তিনি কেমন থাকবেন? তিনি কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব দিতে পারবেন ? একটি মেরুকৃত সমাজ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষকে পরিচালনা করতে পারবেন ? শারীরিকভাবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের প্রত্যাশা না-থাকলেও এই মাপকাঠিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন একেবারেই ব্যর্থ হয়েছেন । মঞ্চের দিকে ধীর গতিতে এগনো, তাঁর বিড়বিড় করা বক্তৃতা, বেশ কয়েকটি পয়েন্টে তাঁকে নিস্পৃহ দেখাচ্ছিল, তাঁর ভাবনা-চিন্তাও ছিল অস্পষ্ট । বিভিন্ন সময় তিনি চাকরি, কর এবং অর্থনীতির কথা বলার বেশকিছু নম্বরে তিনি তালগোল পাকিয়ে ফেলেন ৷ কয়েক হাজারের পরিবর্তে বলেন হাজারের কথা বা বিলিয়নের পরিবর্তে ট্রিলিয়নের কথা বলেন ৷

সবচেয়ে বড় গোলমাল বাঁধে যখন তিনি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অসংলগ্ন কথা বলে ফেলেন ৷ বোকার মতো বলেন, "আমরা অবশেষে মেডিকেয়ারকে পরাজিত করেছি ৷" অথচ এটি হল বয়স্ক স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারেরই একটি প্রকল্প । অন্যদিকে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে নিজেকে উপস্থাপিত করেন ৷ পয়েন্ট ধরে ধরে কথা বলেন ৷ দু'জনেই একে-অপরের বিপরীতে তাঁদের নিজস্ব সরকারের নীতির গুণাবলী নিয়ে কথা বলেছেন ।

ট্রাম্প দেখিয়েছেন কীভাবে তিনি কোভিড-19 অতিমারি সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতি পরিচালনা করেছেন, কর কমিয়েছেন এবং তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন কর্মসংস্থান বেড়েছে । উভয় প্রার্থীরই ইজরায়েলের নীতির প্রতি অনুরূপ সমর্থন রয়েছে, যদিও বাইডেন তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারেননি এবং বিদেশ নীতির বিষয়ে তাঁর বক্তব্য ছিল অপর্যাপ্ত ।

গর্ভপাতের ইস্যুতে যেখানে ট্রাম্পের অধীনে রক্ষণশীলরা সুপ্রিম কোর্টের একটি সিদ্ধান্ত (রো বনাম ওয়েড) বাতিল করেছিল এবং গর্ভপাতকে বেআইনি করে তুলেছিল, বাইডেন সেখানে তার নিজের ধারণা তুলে ধরেন- যা অনেক মহিলা নির্বাচকদের দ্বারা সমর্থিত । একাধিক মামলা, এমনকি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়ে বাইডেনের প্রশ্নগুলি এড়িয়ে গিয়েছেন ট্রাম্প ৷ 2021 সালে 6 জানুয়ারি, 2021-এ শেষ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ট্রাম্পের সমর্থকরা মার্কিন কংগ্রেসে হামলা চালিয়েছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছিল তার দাগ এখনও প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের গায়ে লেগে রয়েছে ।

অভিবাসনের মতো জ্বলন্ত ইস্যুতে, ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতা দিয়ে সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া অবৈধ অভিবাসীদের বৃদ্ধিকে তিনি আরও কঠোরভাবে পরিচালনা করবেন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ বৃদ্ধির ভয়ের উল্লেখ করার পাশাপাশি এবং এই ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের দুর্বল পরিচালনার সমালোচনাও করেন ট্রাম্প ৷

বিতর্কের সময় স্পষ্টতা বা শব্দের জোর দিয়ে একটি বিষয় ব্যাখ্যা করতে পারেননি বাইডেন । বাইডেনের বিভ্রান্তির প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা এই বিতর্ককে কাজে লাগিয়েছে ৷ বাইডেনের খারাপ পারফরম্যান্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পরিচালকদের উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে । এর কারণ হল বাইডেনের প্রচারে ইতিমধ্যেই তাঁর বয়স, তাঁর জ্ঞানীয় স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয়-সংকটের বিষয়ে উদ্বেগ প্রাধান্য পেয়েছে যা গড় ভোটারকে উদ্বিগ্ন করে ।

জনগণের ওপিনিয়ন পোল বলছে, মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণকারী বেশিরভাগ জাতীয় এবং সুইং স্টেটে বাইডেনের থেকে পিছিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প ৷ এই বিতর্কের পরে অনেক ডেমোক্র্যাট উদ্বেগ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তি দিচ্ছেন যে, যদি ডেমোক্র্যাটরা জিততে চায় তবে তাদের বাইডেনকে সরানো উচিত । এই জাতীয় প্রতিস্থাপনের দাবি বাড়ছে, তবে বারাক ওবামার মতো শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছেন, এই একটা বিতর্ক বাইডেনের জয়ে আঘাত করতে পারে না । তাঁরা মনে করেন, এই প্রশাসন সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছে ।

একইসঙ্গে, ট্রাম্প একজন মেরুকরণকারী ব্যক্তিত্ব । মধ্য আমেরিকায় তাঁর একটি বড় রক্ষণশীল এবং খ্রিস্টান সমর্থনের ভিত্তি রয়েছে । বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাটদের ঐতিহ্যগতভাবে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার এবং সংখ্যালঘুদের বিপুল সংখ্যক সমর্থন ছিল ।

তবে এবার প্রায়শই-অনিচ্ছুক এই সম্প্রদায়গুলিকে বের করে এনে তাঁদের ভোট দেওয়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে । গাজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে ইজরায়েলকে মার্কিন সামরিক সহায়তার বিরোধিতা করে কয়েক মাস ধরে রাস্তায় নেমেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা ।

এদিকে, অনেক মুসলিম ভোটার ইহুদিবাদী ইজরায়েলি রাষ্ট্রের প্রতি বাইডেনের সমর্থনে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ৷ তার উপর তৃতীয় প্রার্থী কেনেডিসের সবচেয়ে সুপরিচিত আমেরিকান পরিবারের রবার্ট কেনেডি জুনিয়র ডেমোক্র্যাটদের ভোট কাটতে পারেন, যদিও ঐতিহ্যগতভাবে আমেরিকান নির্বাচন একটি দ্বি-দলীয় বিষয় ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের দিন কাউন্টডাউনের জন্য ক্যালেন্ডারটি বেশ শক্ত । 19 অগাস্ট শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশন, এই কনভেনশনে সমস্ত প্রতিনিধিদের দ্বারা ভোট দেওয়া ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অফিসিয়াল প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে । ট্রাম্পের প্রার্থিপদ নিয়ে কোনও মতপার্থক্য নেই, তবে তা রিপাবলিকান পার্টি জুলাইয়ের মাঝামাঝি ঘোষণা করবে । এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে ।

বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রথম প্রাক-নির্বাচনী বিতর্কের আয়োজক সিএনএন টিভি নিউজ নেটওয়ার্ক অগস্টে দ্বিতীয় বিতর্কের কথা ঘোষণা করেছে । তবে প্রথম বিতর্কটিকে জনসংযোগ বিপর্যয় হিসেবে বিবেচনা করে বাইডেন এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির ম্যানেজাররা ফের বাইডেনকে সেই বিতর্কে সামনে আনবেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন ৷

তাঁরা বাইডেনকে পছন্দ করেন, যে বাইডেন শুধুমাত্র টেলিপ্রম্পটারের চোখ রেখে খুব নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দর্শকদের কাছে নিজেদের কথা তুলে ধরেন । তাঁরা অন্য বিতর্ক প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, যদিও প্রেসিডেন্ট বিতর্কগুলি আমেরিকান গণতন্ত্রের একটি বৈশিষ্ট্য এবং সিদ্ধান্তহীন ভোটাররা গত কয়েক বছরের পর্যালোচনা ছাড়াও এই কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে তাঁদের ভোটদান করেন ৷

সর্বোপরি, এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিতর্ক এবং এর ফলাফল বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে উদ্বেগ ও বিনোদন উভয়ই সরবরাহ করছে, যাঁরা আমেরিকান ভোটারদের সঙ্গে একটি অত্যন্ত স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ প্রদর্শন দেখছেন ।

(অনুরাধা চিনয় হলেন জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক এবং ট্রান্সন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের সহযোগী ফেলো)

ABOUT THE AUTHOR

...view details