ওয়াশিংটন, 13 ফেব্রুয়ারি: দু'দিনের মার্কিন সফরে ওয়াশিংটনে পৌঁছলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ ফ্রান্স সফরে শেষ করে ভারতীয় সময় বুধবার রাতে ওয়াশিংটনে পৌঁছন তিনি ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকও করবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ৷ ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এটাই মোদির প্রথম মার্কিন সফর ৷ সম্প্রতি আমেরিকায় অবৈধবাসী বিতর্ক এবং ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়ে মোদির আমেরিকা সফর আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে মার্কিন ডিরেক্টর অফ ন্যাশানাল ইন্টেলিজেন্স তুলসি গ্যাবার্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মোদি ৷ 20 জানুয়ারি ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর, মোদি তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে ফোন করেছিলেন ৷ তারপরেই তাঁকে দেশে আমন্ত্রণ জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প ৷ কিছুদিন আগেই শতাধিক ভারতীয়কে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকা ৷ অনুপ্রবেশের কারণে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানোর সময় হাতকড়াও পরিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন ৷ এর মাঝেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রধানমন্ত্রী মোদির বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে ৷
দুই রাষ্ট্রনেতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের প্রথম জমানায় 2019 সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসের হিউস্টনে ‘হাউডি মোদি’ আয়োজিত হয়। আর 2020 সালে গুজরাতে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প শপথ নেওয়ার সময় উপস্থিত থাকতে পারেননি মোদি ৷ তবে শপথের কয়েকদিনের মধ্যেই মোদির মার্কিন সফরের কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প ৷
চলতি মাসের 7 তারিখ সাংবাদিকদের ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি বলেছিলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফর ভারত-মার্কিন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ । পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অংশীদারিত্বকে কীভাবে দেখে তারও প্রতিফলন ৷’’ সফরকালে মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়ী এবং ভারতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গেও আলাপচারিতা সারবেন।
ওয়াশিংটনে পৌঁছনোর খবর ছবি-সহ এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মোদি লেখেন, "কিছুক্ষণ আগে ওয়াশিংটন ডিসি-তে অবতরণ করছি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে ভারত-মার্কিন আলোচনায় বিশ্বব্যাপী কৌশলী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। দেশের জনগণের সুবিধার কথা ভেবে উন্নত ভবিষ্যতের জন্য আমরা একযোগে কাজ করে যাব।"
ওয়াশিংটন ডিসি-তে মার্কিন প্রেসিটেন্টের অতিথি ভবন ব্লেয়ার হাউসে থাকবেন মোদি ৷ ব্লেয়ার হাউসে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকায় প্রবাসী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
আমেরিকায় প্রবাসী ভারতীয়দের অভ্যর্থনা (মোদির এক্স হ্যান্ডেল) ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশ্বকে ধাক্কা দিয়েছে ৷ মোদির মূল অগ্রাধিকার হবে ভারতের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের যে কোনও শাস্তিমূলক বাণিজ্য পদক্ষেপ করা ৷ ভারত-মার্কিন সম্পর্ক পর্যবেক্ষণকারীদের মতে, উচ্চ শুল্ক এড়াতে এবং বাণিজ্যের সামগ্রিক সম্প্রসারণের জন্য উভয় দেশের একটি বাণিজ্য চুক্তির বিকল্প খোঁজার সম্ভাবনা রয়েছে এই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকে।
দুই রাষ্ট্রনেতাই বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং অভিবাসনের মতো বিষয়গুলি নিয়ে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর ব্যাপকভাবে মনোনিবেশ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন 104 জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে একটি সামরিক বিমানে হাতকড়া এবং শিকল পরিয়ে ভারতে ফেরত পাঠিয়েছেন ৷ যা নিয়ে সংসদে প্রতিবাদ দেখান বিরোধীরা ৷ স্বাভাবিকভাবেই এই কয়েকদিন পরই প্রধানমন্ত্রী মোদির মার্কিন সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ৷
দু'দিনের সফরে ওয়াশিংটন পৌঁছলেন মোদি (এপি) পাশাপাশি বাণিজ্য ক্ষেত্রে মোদির আমেরিকা সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বব্যাপী ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর 25 শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন ৷ এই পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানিকারী ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য চিন্তার কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারত যে কট্টরপন্থী মনোভাবের মুখোমুখি হয়েছিল, এবার এই সংবেদনশীল ইস্যুতে ভারত আরও সমঝোতা দিকে দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের জন্য প্রস্তুত বলে ইঙ্গিত মিলেছে। জানা গিয়েছে, হোয়াইট হাউসের তরফে সাড়া পেলে নয়াদিল্লি কমপক্ষে এক ডজন ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর কথা বিবেচনা করতে পারে। মোদি এবং ট্রাম্প শুল্কের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা করার সম্ভাবনা কম, তবে এই দুই রাষ্ট্রনেতা এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারেন। গত বছর ভারত এবং আমেরিকার মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ছিল প্রায় 130 বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ওয়াশিংটনে বিমান থেকে নামছেন মোদি (এপি) 27 জানুয়ারি মোদি-ট্রাম্পের টেলিফোনিক কথোপকথনে বাণিজ্য, জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর বিশ্বস্ত অংশীদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দুই রাষ্ট্রনেতার ফোনে আলোচনার পর হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছিল, ট্রাম্প আমেরিকায় তৈরি নিরাপত্তা সরঞ্জাম ক্রয় বৃদ্ধি এবং একটি ন্যায্য দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপর ভারতের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। এছাড়াও ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, ইউক্রেন এবং পশ্চিম এশিয়ার উন্নয়নের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়েও মোদি-ট্রাম্পের আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
হোয়াইট হাউসে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার এক মাসেরও মধ্যেই ট্রাম্প ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এবং জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করেছেন ৷ এবার দুই বৃহৎ রাষ্ট্রনেতার বৈঠকের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব ৷