ঢাকা, 4 অগস্ট: সংরক্ষণ বিরোধিতায় নতুন করে উত্তাল বাংলাদেশ ৷ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছেন দেশের ছাত্রদের একটা বড় অংশ ৷ আর তার জেরে শনিবার রাত থেকে আন্দোলনকারী এবং বাংলাদেশ আওয়ামি লিগের (বাংলাদেশের শাসকদল) মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে ৷ আর সেই সংঘর্ষে রবিবার বিকেল পর্যন্ত কমপক্ষে 91 জনের প্রাণ গিয়েছে ৷ মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছে বাংলাদেশের ছাত্রদের একাংশ ৷ পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে বেরিয়ে না যায় তার জন্য দেশদুড়ে কারফিউ জারি হয়েছে ৷ সংবাদসংস্থা আরও জানিয়েছে নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে 14 জন পুলিশ কর্মী আছেন ৷
উল্লেখ্য, শনিবার রাত থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার আঁচ পেয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার ৷ সেই কারণ, মধ্যরাতেই জরুরি বৈঠক করেন হাসিনা ৷ অভিযোগ, রবিবার সকালে আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা যখন অসহযোগ কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, তখন আওয়ামি লিগ, ছাত্র লিগ এবং যুব লিগের সদস্য ও সমর্থকরা বাধা দেন ৷ আর তার জেরে দু’পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয় ৷ রবিবার বিকেলের দিকে সংবাদসংস্থা পিটিআই বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদপত্র 'প্রথম আলো'-কে উল্লেখ করে জানিয়েছিল, এই সংঘর্ষে 13টি জেলায় 32 জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে ৷ পরে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে ৷
প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ফেনিতে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ সিরাজগঞ্জে 4 জন, মুন্সিগঞ্জে 3 জন, বগুড়াতে 3 জন, মগুরায় তিন জন, ভোলা জেলায় 3 জন, রংপুরে তিন, পাবনা ও সিলেটে 2 জন এবং কুমিল্লা, জয়ুপুর হাট, বড়িশাল ও ঢাকায় একজন করে মারা গিয়েছেন ৷ আর তার জেরে ফের একবার এদিন সন্ধ্যা 6টার পর থেকে বাংলাদেশ জুড়ে নতুন করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে হাসিনা সরকার ৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে সকল জাতীয় সংস্থাগুলির তরফে মেটা প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, ম্যাসেনজার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৷ এমনকী এক বিশেষ নির্দেশিকায় বাংলাদেশের টেলিকম সংস্থাগুলিকে 4জি পরিষেবাও বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে স্টুডেন্টস এগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশন নামে আন্দোলকারী সংগঠন ৷
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সিলেটে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের অফিস থেকে একটি অ্যাডভাইসরি প্রকাশ করা হয়েছে এক্স হ্যান্ডেলে ৷ সেখানে থাকা ভারতীয়দের জন্য জরুরি ক্ষেত্রে একটি ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে ৷ হাইকমিশনের সেই অ্যাডভাইসরিতে বলা হয়েছে, "সিলেটে অবস্থিত ভারতের হাইকমিশনের এই সহকারী অফিসের অন্তর্গত এলাকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের বলা হচ্ছে, আপনারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলুন ৷ পাশাপাশি, প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকুন ৷ যদি কোনও জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তাহলে, +88-01313076402 নম্বরে যোগাযোগ করবেন ৷"
এদিকে দেশের এই পরিস্থিতিতে সকলকে সন্ত্রাস থামানোর বার্তা দিয়েছেন পরিচালক মুস্তাফা সারোয়ার ফারুকি ৷ রবিবার দুপুরে ফেসবুকে তিনি দাবি করেন এ পর্যন্ত দেশে 42 জনের প্রাণ গিয়েছে ৷ পাশাপাশি প্রতিবাদী ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তাও দিয়েছেন পরিচালক ৷ তিনি লেখেন, "সন্ত্রাস থামান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, আপনাদের কাজ যারাই সন্ত্রাস করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান! তা সে যে পক্ষেরই হোক। যার যে মত, সে সেই মত প্রকাশ করবে, সমাবেশ করবে, মিছিল করবে। কিন্তু পিস্তল দিয়ে, শর্ট গান দিয়ে কোন জনমত প্রকাশ করা হচ্ছে? কালকে লাখ লাখ লোক সমাবেশ করল, দেশাত্মবোধক গান গাইল, আমরা তাদের কারো হাতে পিস্তল দুরের কথা, একটা লাঠিও দেখলাম না। আজকে কেন এই সন্ত্রাস? কেন 42টা (এখন পর্যন্ত হিসেব) লাশ পড়লো? যারা মারছেন, মার দিতে দিতে সাধারণ জনতাকে এরকম সাহসী বানিয়ে দিবেন না যে সে ঘুরে দাঁড়ায়! তখন যে অগ্নুৎপাত হবে সেটা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তার আগেই সন্ত্রাস থামান!"