দার্জিলিং, 31 জানুয়ারি: সাত বছর পর পুলিশ আধিকারিক খুনের মামলায় জামিন পেলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং ৷ একদা পাহাড়ের এই তাবড় নেতা, যিনি নিজেকে পাহাড়ের 'মুখ্যমন্ত্রী' হিসেবে স্থাপিত করেছিলেন। সেই গুরুং সাব-ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিক খুনের পর গা ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর জামিন মঞ্জুর করে ৷
2017 সালের জুন মাস ৷ পৃথক রাজ্যের দাবিতে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। ততদিনে পাহাড়ের আন্দোলন 100 দিন পার করে গিয়েছে ৷ এদিকে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিনই পাহাড়ে শুরু হয়েছিল তুমুল হট্টগোল ৷ পাহাড়ের ওই আন্দোলনকে প্রশমিত করতে ময়দানে নামে পুলিশ। বিমল গুরুংয়ের খোঁজে শিরুবাড়ির জঙ্গলে চলছিল তল্লাশি। পাহাড়ি এলাকায় হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। আর সেই অভিযানে নেমেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারান সাব-ইন্সপেক্টর (SI) অমিতাভ মালিক। সেই সময় দার্জিলিং সদর থানায় পোস্টিং ছিলেন তিনি।
ঘটনার পর থেকে মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং দীর্ঘদিন ধরে ফেরার ছিলেন। সঙ্গে গা ঢাকা দেন রোশন গিরি-সহ একাধিক মোর্চা নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা ৷ দিনের পর দিন ধরে তাঁর খোঁজ চালায় পুলিশ। কিছুতেই খোঁজ মিলছিল না। অমিতাভ মালিকের আসল বাড়ি মধ্যমগ্রাম শহরের 7 নম্বর ওয়ার্ডে ৷ পোস্টিং ছিলেন দার্জিলিং সদর থানায় ৷ তপ্ত পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন ৷ তখন গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন স্তব্ধ হয়েছিল পাহাড়। টানা 104 দিন চলেছিল ওই রক্তক্ষয়ী আন্দোলন। পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন গুরুং। সেই সময়ই খুন হন এই পুলিশ আধিকারিক।
সেই মামলাতেই অবশেষে জামিন পেলেন মূল অভিযুক্ত বিমল গুরুং। স্বামীর মরদেহ জড়িয়ে ধরে পুলিশ আধিকারিকের স্ত্রী বিউটি মালিকের কান্না ঘটনা অনেকেরই জানা ৷ পরে বিউটি মালিকের হাতে তাঁর স্বামীর সাহসিকতার জন্য মরণোত্তর পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। পুলিশে চাকরিও পান তিনি ৷ ওই পুলিশ আধিকারিক খুনের মামলার সহকারী সরকারি আইনজীবী অদিতি শংকর চক্রবর্তী জানান, "মামলায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন বিমল গুরুং। জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার ডিভিশন বেঞ্চ জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে।"
কেবল মোর্চা সুপ্রিমোই নন, দীপেন মালে, রোশন গিরি, প্রবীণ সুব্বা-সহ মোট 20 জন মোর্চা নেতাকে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মামলা দায়ের করা হয় খুন, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে। এই বিষয়ে বিমল গুরুংয়ের আইনজীবী জনার্দন পেরিওয়াল বলেন, "এদিন হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের ডিভিশন বেঞ্চ জামিন মঞ্জুর করে। অমিতাভ মালিকের খুনে তাঁকে মূল অভিযুক্ত করা হয়েছিল।" ওই মামলায় 25 হাজার টাকা বন্ড ও চার সপ্তাহের ভিতরে ট্রায়াল কোর্টে বিমল গুরুংকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।