ঢাকা, 10 নভেম্বর: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সাহায্য নেবে অন্তর্বর্তী সরকার ৷ তিনি ছাড়া আরও যাঁরা চলতি অগস্ট মাসে বা তার পর থেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন তাঁদেরও ফিরিয়ে আনবে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকার ৷
মানুষের বিরুদ্ধে যে 'অপরাধ' তাঁরা সংঘটিত করেছেন তার বিচার প্রক্রিয়ায় হাসিনা-সহ বাকিদের সামিল করতে উদ্যোগী হচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ৷ চলতি বছরের জুলাই-অগস্টে আওয়ামী লিগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠন ৷ অন্তর্বর্তী সরকারের অভিযোগ, নৃশংসভাবে এই আন্দোলন দমনের চেষ্টা করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা ৷ তাই তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতিও নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার ৷
গত 5 অগস্ট এই আন্দোলনের চাপে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে এসে আশ্রয় নেন মুজিব-কন্যা ৷ এরপর 8 অগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় ৷ সরকারের তরফে জানা গিয়েছে, দেশজোড়া এই প্রতিবাদে অন্ততপক্ষে 753 জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ৷ হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন ৷ একে মানবতা বিরোধী এবং গণহত্যা বলেই উল্লেখ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ৷
বাংলাদেশের ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে পুরনো হাইকোর্ট ভবনে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনাল (আইসিটি) দফতরের মেরামতির কাজ চলছে ৷ সেই কাজ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে রবিবার এসেছিলেন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের আইনি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ৷ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "খুব শীঘ্রই ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হবে ৷ এই পলাতক ফ্যাসিবাদীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুন না কেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে ৷ আদালতে তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হবেন ৷"
রেড নোটিশ মানেই আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা নয় ৷ বরং এটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটা আন্তর্জাতিক অনুরোধ মাত্র ৷ যথোপযুক্ত আইন কার্যকরের মাধ্যমে অভিযুক্ত কোথায় আছেন, সেই সন্ধান করা এবং তাঁকে গ্রেফতার করে দেশে ফেরত পাঠাতে বলা ৷ ইন্টারপোলের সদস্য দেশগুলি তাদের জাতীয় আইন অনুযায়ী রেড নোটিশ কার্যকর করতে পারে ৷
2010 সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইবুনাল (আইসিটি) গঠন করেছিল হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামি লিগ সরকার ৷ 1971 সালে মুক্তিযুদ্ধে মানুষের বিরুদ্ধে যে হিংসা, অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল, সেই দোষীদের বিচার করতেই এই আইসিটি গঠিত হয়েছিল ৷ পরে আইসিটি-2 গঠিত হয় ৷ দু'টি আইসিটি আদালতে বিচারের পর কমপক্ষে 6 জন নেতার ফাঁসির সাজা হয় ৷ এরা জামাত-ই-ইসলামি এবং হাসিনা বিরোধী খালেদা জিয়ার বিএনপি-র নেতা ছিলেন। চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি সময়ে আইসিটি-র চেয়ারম্যান অবসর গ্রহণ করেন ৷ তারপর এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে ৷
গত 12 অক্টোবর এই ট্রাইবুনালকে পুনর্গঠিত করে অন্তর্বর্তী সরকার ৷ 17 অক্টোবর ট্রাইবুনালশেখ হাসিনা এবং অন্য 45 জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ৷ তাঁদের মধ্যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও রয়েছেন ৷ অন্তর্বর্তী সরকার আগেই জানিয়েছিল, শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য এবং আওয়ামি লিগ নেতাদের বিচার হবে এই বিশেষ ট্রাইবুনালে ৷ যদিও মুখ্য উপদেষ্টা গত মাসে ব্রিটেনের ফিনান্সিয়াল টাইমস সংবাদপত্রকে একটি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকার এখনই ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চায় না ৷ এর মাস খানেক বাদেই আইনি উপদেষ্টার মুখে অন্য কথা শোনা গেল।