ঢাকা, 11 ডিসেম্বর: হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন খারিজ করে দিল বাংলাদেশের আদালত ৷ গত 25 নভেম্বর ঢাকার আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট-এর মুখপাত্র চিন্ময়কে গ্রেফতার করে পুলিশ ৷ বুধবার আদালত স্পষ্ট জানায়, 2 জানুয়ারি তাঁর জামিনের শুনানির তারিখ নির্ধারিত রয়েছে ৷ সেদিনই শুনানি হবে ৷
আদালত সূত্রে খবর, এদিন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সেশন জাজ সইফুল ইসলামের কাছে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের তরফে যে আইনজীবী জামিনের শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে সনাতনী নেতার পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ছিল না ৷ আদালতের আধিকারিক বলেন, "আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ জামিনের শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন জানান ৷ তখন আরেক আইনজীবী বিচারককে জানান যে, হিন্দু সন্ন্যাসীর প্রতিনিধিত্ব করার পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নেই তাঁর কাছে (রবীন্দ্রনাথ ঘোষের) ৷ তখন বিচারক আবেদন খারিজ করেন ৷"
আইনজীবী তা স্বীকার করে জানান, তিনি জেল হেফাজতে গিয়ে চিন্ময়কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ে আসেননি ৷ এই প্রসঙ্গে আইনজীবী বলেন, "আমি এখনই জেলে গিয়ে চিন্ময়কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করব এবং ওকালতনামা (পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি) নিয়ে আসব ৷" এদিন আইনজীবী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ আবেদনে জানান, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে মিথ্যা এবং সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ তিনি ডায়াবেটিস, অ্যাস্থমা এবং অন্য শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন ৷ তবে তাতেও কাজের কাজ হয়নি।
গত 25 নভেম্বর গ্রেফতার হওয়ার পরদিন 26 নভেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালত সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় ৷ এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলতে থাকে ৷ পরে জানা যায় 3 ডিসেম্বর তাঁর জামিনের শুনানি হবে ৷ কিন্তু সেদিন কোনও আইনজীবীই আদালতে হাজির হননি ৷
যদিও এই হিন্দু সনাতনী নেতার জামিনের জন্য তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন আইনজীবী রমেন রায় ৷ কিন্তু, চিন্ময়কৃষ্ণর জামিনের শুনানির কয়েকদিন আগে তাঁর উপর হামলা হয় ৷ তাতে গুরুতর জখম হন আইনজীবী রমেন রায় ৷ শুনানির দিন অর্থাৎ 3 ডিসেম্বর আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের আইসিসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি ৷ এক্স হ্যান্ডেলে একথা জানিয়ে পোস্ট করেন কলকাতা ইসকনের মুখপাত্র রাধারমণ দাস ৷
এই পরিস্থিতিতে কোনও আইনজীবী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের হয়ে লড়তে রাজি হননি ৷ তখন চট্টগ্রাম দায়রা আদালতের বিচারপতি সইফুল ইসলাম 2 জানুয়ারি তারিখে পরবর্তী শুনানি ধার্য করেন ৷ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট-এর এক সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস জানান, আইনজীবীরা ভয় পাচ্ছেন ৷ কেউই আর চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের হয়ে আদালতে দাঁড়াতে চাইছেন না ৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইনজীবীদের একটি দল আইনজীবীদের হুমকি দিচ্ছে ৷
ঢাকার আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে ৷ গত 31 অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময়কৃষ্ণ-সহ 18 জনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পতাকা অবমাননার অভিযোগে মামলা দায়ের হয় ৷ সেই মামলাতেই গ্রেফতার হন চিন্ময়কৃষ্ণ।