হায়দরাবাদ, 3 এপ্রিল: বেশ কয়েকদিন ধরে রাতে প্রচণ্ড ঘাম হচ্ছে, অকারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে, উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা বাড়ছে কিংবা ঘুম আসছে না, এমন লক্ষণ দেখা দিলে সাবধান । এইগুলি হতে পারে পেরিমেনোপজের লক্ষণ ।মেনোপজ সম্পর্কে কম-বেশি অনেকেই জানেন নির্দিষ্টি একটা বয়সের পর মাসিক বন্ধ হয়ে যায় । কিন্তু তার আগে থেকেই পেরিমেনোপজের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে, যা নির্ধারণ করতে না পারলে মস্তিষ্ক, হার্ট ও হাড়-সহ শরীরে একাধিক সমস্যা তৈরি করতে পারে । পেরিমেনোপজ কী, তার লক্ষণ ও প্রতিরোধ নিয়ে সচেতন করলেন বিশিষ্ট (obstetrics and gynecology) চিকিৎসক ব্রততী ভট্টাচার্য ৷
প্রঃ মেনোপজ কী? কোন বয়সে শুরু হয়?
উঃ মেনোপজ কথার অর্থ হল পজ অফ মেনস্ট্রুয়েশন বা ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া । যদি দেখা যায় কারোর যদি অনিয়মত পিরিয়ড হয় বা বন্ধ হয়ে যায় তাকে মেনোপজ বলা হচ্ছে ৷ যদি কোনও মেয়ে বা মহিলার পর পর 12 মাস মাসিক না হয় এবং তার সঙ্গে ব্লাড লেভেলও পরিবর্তন দেখা যায়, তখনই তা মেনোপজের লক্ষণ বলে ধরা হয় । ভারতীয় বয়য় 45 থেকে 50 মেনোপজের বয়স । আবার ফ্যামিলিগত কারণেও মেনোজ আগে হতে পারে ৷ পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজনের ফলেও মাসিক যেমন তাড়াতাড়ি শুরু হয়, শেষও হয়ে যায় ।
প্রঃ পেরিমেনোপজ কী মেনোপজের একটা ভাগ ।
উ- না, মেনোপজের ভাগ নয় পেরিমেনোপজ । আসলে মেনোপজ শুরু হওয়ার বিষয়টা ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টশন হরমোন উপর দায়ী । এই হরমোন যেভাবে কাজ করে সেই ছন্দ নষ্ট হতে শুরু করে ৷ কারোর 2 বছর আগে থেকে শুরু হতে পারে, আবার 4 বছর আগেও শুরু হতে পারে । যাঁর যে বয়স থেকে এই সমস্যা দেখে দিচ্ছে, সেখান থেকে মেনোপজের বয়স পর্যন্তকে আমরা বলছি পেরিমেনোপজ ।
প্রঃ পেরিমেনোপজ হলে কীভাবে বুঝবেন?
উঃ ঋতুস্রাব বা মাসিক অনিয়মিত হওয়া সবচেয়ে বড় লক্ষণ । প্রতি মাসে যে প্যাটানে মাসিক হয় তা না হলে বিষয়টা ভাববার ৷ উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে কারোর যদি মাসিক 30 দিন পর পর হয়, সেটাই দেখা গেল 45 দিন পর পর হচ্ছে । এছাড়া এই হরমোন পরিবর্তনের কারণে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয় মহিলাদের ।
- মুড সুইং, উদ্বিগ্নতা, খিটখিটে মনোভাব ইত্যাদি দেখা দেয় ৷ অবসাদও একটা বড় লক্ষণ ৷ ওজন বাড়ার সম্ভাবনা আসে ৷ মেটাবলিজম রেট পরিবর্তন হয়ে যায় ।
- সেক্সুয়াল সমস্যা বা শারীরিক সম্পর্কে অনীহা, স্যাটিসফেকশন না হওয়া, ভ্যাজাইনাতে শুষ্কভাব আসা, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের সময় যৌনাঙ্গে যন্ত্রণা- এই ধরনের লক্ষণ মহিলাদের মধ্যে পেরিমেনোপজের সময় ভীষণভাবে সমস্যায় ফেলে ।
- বোন-ডেনসিটি আসতে আসতে কমতে শুরু করে । এমন কিছু সমস্যা হলে আমরা বলি একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। কারণ, অনেক সময় দেখা যায়, সংক্রমণ বা সিস্টের সমস্যা থেকেও মাসিকের সমস্যা হতে পারে ।
প্রঃ পেরিমেনোপজ শুরু হলে শরীর কী ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে?
উঃ কিছু গাইনোজিক্যাল সমস্যা এই বয়স থেকে মাথাচাড়া দিতে শুরু করে । যেমন-টিউমার জাতীয় রোগ, ফ্রাইব্রয়েড (পেলভিক ব্যথা এবং চাপ, রক্তাল্পতা, পেট ফোলা, মূত্রাশয় চাপ, ঘন ঘন প্রস্রাব, অন্ত্রের উপর চাপ) ইত্যাদি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে । 40-এর উপর যে সকল মহিলাদের বয়স, তাঁদের সেই ঝুঁকি আরও বেশি হয় । কারোর প্রি-ম্যাচিয়োর মেনোপজ হলে তাঁর প্রি-ম্যাচিয়োর পেরিমেনোপজও হবে । এছাড়া, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, কিছু ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যাও দেখা দিতে পারে ।
কারোর যদি পারিবারিক এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলেও আগে থেকে সাবধান হওয়া উচিত । পেরিমেনোপজ ক্যানসারের মতো ঝুঁকিও বাড়ায় । আবার ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব ত্বকের উপরও প্রভাব ফেলে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ৷ পেরিমেনোপজ আগে শুরু হলে ইস্ট্রোজেনের অভাবে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যায় । সেক্ষেত্রে গর্ভধারণের মতো সমস্যাও দেখা দেয় ।