কলকাতা: রক্তদান একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জীবনদানকারী প্রক্রিয়া, যা মানুষকে নতুন জীবন দিতে পারে । কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শিশুর জন্মদাতা বাবা-মা সন্তানকে সরাসরি রক্ত দিতে পারেন না । শুধুমাত্র একটি নয়, একাধিক কারণ রয়েছে ৷
উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের অবসরপ্রাপ্ত মেডিক্যাল আধিকারিক এবং সমাজকর্মী ডাঃ রাম প্রকাশ ভার্মা বলেন, "অনেক বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের সরাসরি রক্ত দিতে পারেন না । এর জন্য দায়ী অনেক বৈজ্ঞানিক ও জৈবিক কারণ ৷ যেমন- ABO ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম, Rh ফ্যাক্টর, অ্যান্টিবডি এবং HLA ম্যাচিং ইত্যাদি ।"
তিনি ব্যাখ্যা করেন, রক্তদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হল ABO রক্তের গ্রুপ সিস্টেম ৷ আসলে আমাদের রক্ত চারটি প্রধান গ্রুপে বিভক্ত: A, B, AB এবং O । প্রত্যেক ব্যক্তির রক্ত একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের, যা পিতামাতা থেকে বাহিত হয় । তবে প্রত্যেক মা-বাবা ও সন্তানের রক্তের গ্রুপ যে একই হবে, তা কিন্তু নয় ৷ আর বাবা-মায়ের রক্তের গ্রুপ যদি শিশুর রক্তের গ্রুপের সঙ্গে না মেলে, তাহলে মা অথবা বাবা তাঁদের সন্তানকে রক্ত দিতে পারবেন না ৷ এগুলি ছাড়া আরও অনেক কারণ রয়েছে যা পিতা-মাতার জন্য তাঁদের সন্তানকে রক্তদানে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে । তেমনই কয়েকটি কারণ রইল ।
আরএইচ ফ্যাক্টর:Rh ফ্যাক্টর রক্তদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ এটি এক ধরনের প্রোটিন, যা রক্তের পৃষ্ঠে পাওয়া যায় ৷ যদি একজন ব্যক্তির রক্তে এই প্রোটিন থাকে, তবে তাকে বলা হয় আরএইচ পজিটিভ ৷ যদি না থাকে, তবে তাকে বলা হয় আরএইচ নেগেটিভ । পিতা-মাতা এবং শিশুদের Rh ফ্যাক্টর ভিন্ন হলে, তাঁরা রক্ত দান করতে পারে না । উদাহরণস্বরূপ, যদি শিশুটির Rh নেগেটিভ হয় এবং পিতামাতারা Rh পজিটিভ হয়, তবে রক্তদান সম্ভব হবে না ৷
অ্যান্টিবডির ভূমিকা:রক্তদানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অ্যান্টিবডি । সবার জানা দরকার, আমাদের শরীর একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) দিয়ে সজ্জিত, যা বাহ্যিক উপাদানগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে ৷ পিতা-মাতার রক্তে অসামঞ্জস্য থাকলে এবং সেই রক্ত শিশুর রক্তে প্রবেশ করলে ওই শিশুর প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয় ৷ এর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করতে পারে ৷ এটি একটি গুরুতর অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে ।