কলকাতা, 27 জুলাই: এখানকার টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে কাজ করতে করতে মাঝ পথে একই ছবির জন্য রাহুল মুখোপাধ্যায়ের বাংলাদেশে গিয়ে কাজ করাকে 'গুপি শুটিং' বলে আখ্যা দিয়েছে ফেডারেশন। এই শব্দটি কোনও আইনসম্মত শব্দ নয় বলে দাবি পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় থেকে বাংলার চলচ্চিত্র পরিচালকদের। শনিবার ফেডারেশনের সঙ্গে গিল্ডের সদস্য, পরিচালক, অভিনেতাদের বৈঠকের পরও মিলল না সমাধানের রাস্তা ৷ তারমধ্যেই ফেডারেশনের ব্যবহার করা 'গুপি' শব্দ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিনেতা-পরিচালক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে ৷
পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়ালেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (ইটিভি ভারত) এদিন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এই শব্দের ব্যবহার নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন ৷ তিনি বলেন, "রাহুল যে ছবির কাজ করছিলেন বাংলাদেশের শিল্পীদের সঙ্গে তাঁরা বাংলা ভাষাতেই কাজ করতে এসেছিলেন এদেশে। ঘটনাচক্রে তারা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের কাছ থেকে বেশি টাকা চাওয়া হয়েছিল। সেই বাজেট ওদের কাছে ছিল না। খরচে না কুলোলে চার দিন শুটিং করে ফিরে যেতে হয়েছে তাঁদের। ফলে বাংলাদেশে গিয়ে শুটিং করতে হয় রাহুলকে। আর সেটাকেই 'গুপি' শুটিং আখ্যা দিয়েছে ফেডারেশন। এই শব্দ ব্যবহার করতে পারে না ফেডারেশন ৷"
তিনি আরও বলেন, "দিনের পর দিন 'গুপি' শব্দটাকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে। 'গুপি' শব্দটাকে আস্তে আস্তে আইনসম্মত শব্দে পরিণত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর যারা এটা করছেন তাঁরা নিজেরাই আইনবিরুদ্ধ এবং অসাংবিধানিক কাজ করছেন। রাহুল উপলক্ষ মাত্র, সপাটে চড় মারা হল সমস্ত পরিচালকদের গালে।" সৃজিত মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, "ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন ক্যালকাটা'র মতো ছবি যেটা ভেনিসে গেল সেটা গুপি? 'ঝিল্লি' গুপি? 'দোস্তজি' গুপি?"
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারের দুই দফা বৈঠকের পর জানা গিয়েছিল পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় এসভিএফ-এর পুজোর ছবির ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। পরিচালক হিসেবে নয়। ডিরেক্টরস গিল্ড এবং ফেডারেশন দুই তরফেই জানানো হয় এই কথা। এরপর রাত গড়াতেই ডিরেক্টরস গিল্ডের তরফে বিবৃতি আসে যে রাহুল মুখোপাধ্যায় পরিচালক হিসেবে কাজ করলে আর কোনও বাধা নেই তাদের তরফে। তারা রাহুলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।
গিল্ডের মতে, খতিয়ে দেখা গিয়েছে, যে বাংলাদেশের ছবি নিয়ে এত জলঘোলা, তার প্রযোজকও বাংলাদেশেরই। সুতরাং অন্য দেশের প্রযোজক কীভাবে কোথায় কাজ করবেন তা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। তাই এই বিষয়ে রাহুল মুখোপাধ্যায়কে দোষ দেওয়া যায় না। কেউ কারোর কাজ বন্ধ করে দিতে পারে না ৷ সব শিল্পীরই নিজস্ব কাজের স্বাধীনতা থাকা উচিত। সেটা এদেশে হোক বা ভিন দেশে। তাই গিল্ডের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত রাহুল মুখোপাধ্যায় পরিচালক হিসেবে আবার কাজে ফিরে যান। ডিরেক্টরস ওঁর পাশে রয়েছে। এবং ওঁর ভবিষ্যতের জন্য অসংখ্য শুভেচ্ছা।
27 জুলাই টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে 'প্রোডাকশন নম্বর 172'-এর শুটিং শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আসেননি কোনও কলাকুশলী। অথচ, ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়েছিল শুটিং বন্ধ হবে না। রাহুল ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। ডিরেক্টরস গিল্ড রাহুলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেটা তুলে নেওয়াও তাঁদেরই দায়িত্ব। এতে ফেডারেশনের হাত নেই। কিন্তু ডিরেক্টরস গিল্ড নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও ফেডারেশন এক কাট্টা। কাজে এলেন না কোনও টেকনিশিয়ান। পরমব্রতর কাছ থেকে জানা গিয়েছে, কলাকুশলীদের দাবি, রাহুল পরিচালক হলে তাঁরা কাজ করবে না। এই ঘটনারও তীব্র নিন্দা করেন অভিনেতা, পরিচালক তথা প্রযোজক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।